প্রায় ৬০ বছর পর ঢাকা থেকে কারখানা সাভারে সরিয়ে নিচ্ছে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাতকারী বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি বা বিএটিবিসি। কোম্পানিটি রাজধানীর মহাখালী থেকে তাদের কারখানা সাভারের আশুলিয়ায় সরিয়ে নিচ্ছে।

কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, আগামী ১ জুলাই থেকে এই কারখানায় হবে বিএটিবিসির প্রধান উৎপাদনকেন্দ্র। আগে আশুলিয়ার এই কারখানায় সীমিত পরিসরে রপ্তানির জন্য নানা ধরনের সিগারেট তৈরি করা হতো। এখন স্থানীয় ও রপ্তানি বাজারের প্রায় সব সিগারেট তৈরি হবে এই কারখানায়। এ কারণে কারখানাটির উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে নতুন করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটি।

দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বিএটিবিসি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের নতুন এই বিনিয়োগের তথ্য জানিয়েছে। এ–সংক্রান্ত ঘোষণায় কোম্পানিটি জানায়, গত বুধবার অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় সাভারের কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে ২৯৭ কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। এই অর্থ বিনিয়োগ করা হবে কোম্পানির নিজস্ব অর্থায়ন ও ব্যাংকঋণ করে।

এর আগে গত ১৯ জুন বিএটিবিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের কারখানা রাজধানীর মহাখালীর নিউ ডিওএইচএস থেকে আশুলিয়ায় স্থানান্তর করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে কোম্পানির নিবন্ধিত ঠিকানাও বদল করে সাভারের আশুলিয়ার ধামসোনার বলিভদ্র বাজারে স্থানান্তর করা হয়েছে। নতুন এ ঠিকানায় ১ জুলাই থেকে কোম্পানিটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে। একই দিনে বন্ধ হয়ে যাবে কোম্পানিটির ঢাকার কারখানার কার্যক্রম।

কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, কারখানা স্থানান্তরের পাশাপাশি কোম্পানিটির করপোরেট কার্যালয়ও স্থানান্তর করা হচ্ছে। ১৯৬৫ সালে ঢাকার মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় বহুজাতিক এই কোম্পানিটির কারখানা স্থাপন করা হয়। সেটি ছিল বাংলাদেশে তাদের দ্বিতীয় কারখানা। তার আগে ১৯৪৯ সালে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে কোম্পানিটির প্রথম কারখানা স্থাপন করা হয়েছিল। এখন ৬০ বছর পর এসে মহাখালী থেকে কারখানা সরিয়ে নিচ্ছে কোম্পানিটি।

জানা যায়, মহাখালীতে কারখানার জায়গা ইজারা নিয়ে এত দিন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল কোম্পানিটি। প্রতি ইজারা চুক্তির মেয়াদ ৩০ বছর এবং মেয়াদ নবায়নের সুযোগ ছিল সর্বোচ্চ ৯০ বছর পর্যন্ত। তবে মহাখালীর এই কারখানা আবাসিক এলাকায় হওয়ায় পরিবেশবাদীরা তা সরানোর দাবি করে আসছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। এ অবস্থায় ৬০ বছর কার্যক্রম পরিচালনার পর বাকি ৩০ বছরের জন্য ইজারা নবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিল কোম্পানিটি। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা নবায়ন না করলে কোম্পানিটি আইনি লড়াইয়ে নামে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত ২৮ মে বিএটি বাংলাদেশের করা আপিল খারিজ করে দেন। এরপর ১৯ জুন কোম্পানিটি তাদের প্রধান কার্যালয় স্থানান্তর ও কারখানা সরানোর ঘোষণা দেয়।

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। ১৯৭৭ সালে কোম্পানিটি ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়। এটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত দেশি–বিদেশি ভালো মানের কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম। ঢাকার বাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার কোম্পানিটি লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় ছিল। এদিন এটির শেয়ারের দাম ৭ টাকা ৭০ পয়সা বা প্রায় ৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ২৮০ টাকায়। বৃহস্পতিবার ডিএসইতে কোম্পানিটির প্রায় সোয়া ৮ কোটি টাকার প্রায় ৩ লাখ শেয়ারের হাতবদল হয়। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০২৪ সালের জন্য বিনিয়োগকারীদের ৩০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। অর্থাৎ প্রতি শেয়ারের বিপরীতে একজন শেয়ারধারী ৩০ টাকা লভ্যাংশ পেয়েছেন।

কোম্পানিটির সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি–মার্চ প্রান্তিকে কোম্পানিটি ৩১৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এ সময় কোম্পানিটি ব্যবসা করেছে প্রায় ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকার। আর গত বছর শেষে কোম্পানিটির মুনাফা ছিল ১ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স থ ন ন তর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

পুঁজিবাজারে মূলধন বেড়েছে ৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকা

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (৩ থেকে ৭ আগস্ট) সূচকের পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেনে শেষ হয়েছে। এ সময়ে ডিএসই ও সিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন কমেছে। তবে উভয় পুঁজিবাজারে বিদায়ী সপ্তাহে বাজার মূলধন বেড়েছে ৪ হাজার ৮৪ কোটি ১ লাখ টাকা।

শনিবার (৯ আগস্ট) ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য মতে, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স (৩৫.৩৫) পয়েন্ট বা ০.৬৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪০৮ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক (১৬.৬৫) পয়েন্ট বা ০.৭৯ শতাংশ কমে ২ হাজার ৯৭ পয়েন্টে, ডিএসই শরিয়াহ সূচক (০.১৮) পয়েন্ট বা ০.০২ শতাংশ কমে ১ হাজার ১৭০ পয়েন্টে এবং ডিএসএমইএক্স সূচক (এসএমই ইনডেক্স) (৪১.২৫) পয়েন্ট বা ৪.২২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৯৩৫ পয়েন্টে।

আরো পড়ুন:

পুঁজিবাজার আধুনিকায়নে কাজ করবে এডিবি ও বিএসইসি

লভ্যাংশ দেবে না আইসিবির ৮ মিউচ্যুয়াল ফান্ড

বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১৫ হাজার ৭৯ কোটি ২২ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ১২ হাজার ২২৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ৮৫৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৬৪৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৪ হাজার ১৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৫৪৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৩৮টির, দর কমেছে ২২৭টির ও দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩০টির। তবে লেনদেন হয়নি ১৮টির।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই (৯.৩৬) পয়েন্ট বা ০.০৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ১৯৩ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসই-৩০ সূচক (০.৩২) শতাংশ কমে ১৩ হাজার ৪৩৭ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স সূচক (০.০৯) শতাংশ কমে ৯ হাজার ৩১৭ পয়েন্টে, সিএসআই সূচক ০.৮৫ শতাংশ বেড়ে ৯৫৬ পয়েন্টে এবং এসইএসএমইএক্স (এসএমই ইনডেক্স) ০.৩১ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৯৬৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২৭ হাজার ২৫১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ২৬ হাজার ২৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ১ হাজার ২২৮ কোটি ২০ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ১১১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৮১ কোটি ৮১  লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ২৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইতে মোট ৩১৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৬০টির, দর কমেছে ১৩৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির শেয়ার ও ইউনিট দর।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুঁজিবাজারে সূচকের পতন, কমেছে লেনদেন
  • প্রথম কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে বড় পতন
  • ডিএসইতে সাপ্তাহিক দাম কমার শীর্ষে এসইএমএল ইক্যুইটি ফান্ড
  • ডিএসইতে সাপ্তাহিক দাম বাড়ার শীর্ষে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স
  • পুঁজিবাজারে মূলধন বেড়েছে ৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকা
  • ডিএসইতে সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষে বিএসসি