আমগাছে প্রচুর আম ধরেছিল। সেগুলো পাকার বদলে কালচে রং ধরেছে। নিচে পড়ে আছে হাজার হাজার নষ্ট আম। একই অবস্থা লিচুরও। গাছের পাতা পুড়ে কালো হয়ে গেছে। ফলন ভালো হয়নি।
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার মাহমুদপুর দাড়িয়া গ্রামের এম এম ব্রিকস নামে একটি ইটভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ায় এমন ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাগানি, চাষি ও স্থানীয়রা। তারা বলছেন, মাঝে মধ্যে ভাটায় জমে থাকা গরম বাতাস নির্গত করা হয়। এই বাতাস যেদিকে প্রবাহিত হয়, সেদিকে ফল, ফসল পুড়ে যায়। পরিবেশ অধিদপ্তরে জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ তাদের।
সরেজমিন দেখা গেছে, আম ও লিচুবাগান ঘেঁষেই স্থানীয় একরামুল হক ও হাফিজুল ইসলামের বাগান। এখানে ৭ শতাধিক আম এবং ২০০ লিচু গাছ রয়েছে। বাগানের পাকা, 
রসালো ও রঙিন আমের বদলে ঝুলছে পচা ও ফেটে যাওয়া নষ্ট আম।
একরামুল হকের বাগানটি ২০ বছরের পুরোনো। এখানে ৫০০ আম ও ১৮০টি লিচু গাছ রয়েছে। ১০ বছর আগে ওই ভাটা স্থাপন করেন হাছান মো.

ছালাহ উদ্দিন। আশপাশে আরও বাগান রয়েছে। ভাটা হওয়ার সময় তাঁকে নিষেধ করেছিলেন বাগান মালিক; কিন্তু লাভ হয়নি। প্রতিবছরই ধোঁয়া ও গ্যাসে আম-লিচুর ক্ষতি হয়।
একরামুল হক বলেন, ‘এখানে শুধু আম-লিচুর বাগান নয়, পাশেই শালবন ও স্কুল রয়েছে। সামান্য দূরে বসতিও রয়েছে। ভাটা হওয়ার সময় থেকে এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানিয়েছি। কাজ হয়নি।’
আরেক বাগান মালিক হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘একটি গাছকে শিশুর মতো লালনপালন করতে হয়। বাগান পরিচর্যা, সার ও সেচ দেওয়াসহ সব মিলে অনেক টাকা লগ্নি করতে হয়। অথচ গাছ বড় করার পর ফল পাচ্ছি না। কষ্ট করে গাছ বড় করি। কাটতেও মায়া লাগে। ভাটার ধোঁয়ার কারণে 
আমরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে গেছি। প্রতিবছরই এমন অবস্থা।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এসে বাগান কিনেছেন ফারুক হোসেন। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘১৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে বাগান কিনেছি। ভাটামালিক ইচ্ছেমতো গ্যাস ছাড়েন। এতে ৪০০ থেকে ৫০০ মণ আম নষ্ট হয়েছে। লিচুতে কালো দাগ ও স্বাদে টক হয়ে গেছে। মোটকথা, কোনো ফল থেকেই লাভ হবে না।’
এম এম ব্রিকসের ব্যবস্থাপক আবদুস সালাম বলেন, ‘আমরা সাবধানে গ্যাস ছাড়ি; যাতে কারও ক্ষতি না হয়। এর পরও আম-লিচু নষ্ট হয়েছে। দেখতে হবে এটি ইটভাটার কারণে হয়েছে, নাকি অন্য কোনো কারণে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাপস কুমার রায় জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ অভিযোগ দেয়নি। তিনি বলেন, ভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইইড, কার্বন ডাইঅক্সাইডসহ ক্ষতিকর বিভিন্ন উপাদান থাকে। এতে আমসহ সব ধরনের ফল ফসল উৎপাদনে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। মাহমুদপুর দাড়িয়া গ্রামের এম এম ব্রিকস ইটভাটার কারণে ফলের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো দরকার। ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ দিলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুরে ২৪২টি ইটভাটার মধ্যে ১৭৬টিই অবৈধ। যে ভাটার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেটিরও নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। খোদ দিনাজপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মলিন মিয়া এ তথ্য জানিয়েছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরে ১৮টি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ৫৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা ছাড়াও ভাটা বন্ধ করা হয়েছে। বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগের পর ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ইটভাটাটিতে কেন অভিযান চালানো হয়নি, তার সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইটভ ট আম ল চ ইটভ ট

এছাড়াও পড়ুন:

ব্লগার অভিজিৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফারাবীর জামিন বহাল

ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত শফিউর রহমান ফারাবীকে হাইকোর্টের দেওয়া অন্তর্বর্তী জামিন বহাল রয়েছে। ওই জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনে ‘নো অর্ডার’ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক রোববার এ আদেশ দেন।

ওই মামলায় ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ে ফারাবীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই হাইকোর্টে আপিল করেন ফারাবী।

২০২২ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। বিচারাধীন আপিলে জামিন চেয়ে আবেদন করেন ফারাবী। এর ওপর শুনানি নিয়ে গত ৩০ জুলাই হাইকোর্ট তাঁকে অন্তর্বর্তী জামিন দেন। এই জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে, যা এদিন চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুদ্দিন খালেদ। ফারাবীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহিনুর রহমান ও ওমর ফারুক।

পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, আদালত ‘নো অর্ডার’ দিয়েছেন। তার মানে হাইকোর্ট ফারাবীকে যে জামিন দিয়েছিলেন, তা বহাল। ফারাবী ১৬৪ ধারায় কোনো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। মামলায় চারজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁদের কেউই ফারাবীর নাম উল্লেখ করেননি। ফারাবী প্ররোচনা দিয়েছেন—কোনো সাক্ষী তা বলেনি। এমনকি তাঁর সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততাও পাওয়া যায়নি। ফারাবীর জামিনের পক্ষে এসব যুক্তি তুলে ধরা হয়।

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। হামলায় অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদও গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলাটি তদন্ত করে ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এই মামলায় ২৮ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়।

আরও পড়ুনব্লগার অভিজিৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফারাবীর জামিন৩০ জুলাই ২০২৫

এই মামলায় ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান রায় দেন। রায়ে পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং এক আসামিকে (শফিউর রহমান ফারাবী) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই হাইকোর্টে আপিল করেন ফারাবী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্লগার অভিজিৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফারাবীর জামিন বহাল
  • এ বছরই ওয়ানডে থেকেও অবসর নিতে পারেন কোহলি–রোহিত