Samakal:
2025-08-14@22:58:18 GMT

দ্বীপকন্যার ‘ডলার ধরা’র গল্প

Published: 28th, June 2025 GMT

দ্বীপকন্যার ‘ডলার ধরা’র গল্প

স্বামী মোজাহেদ হাসান পুলিশ পরিদর্শক। কাজের ফাঁকে গান লিখেন, গান করেন। স্বামীর লেখা গানের একটি লাইন বেশ মনে ধরেছিল আসমাউল হোসনার– ‘ডলার বাতাসে উড়ে/যার যোগ্যতা আছে, সেই ধরতে পারে।’ হোসনা মনে মনে ঠিক করলেন, তিনি ডলার ধরবেন। যেই ভাবা সেই কাজ, গত বছরের শুরুর দিকে ফেসবুকে ‘কিছু করতে চাই’ নামের একটি গ্রুপে যুক্ত হন তিনি। সেই গ্রুপে ‘নারীদের সফলতার গল্প’ পড়েন আর নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখেন যৌথ পরিবারের বউ হোসনা। তবে সংসারের কাজের ফাঁকে ভিন্ন ট্র্যাকের কিছু করা নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্নও ছিলেন দুই সন্তানের এই জননী।
এই সময় আসমাউল হোসনা একদিন এনটিভিতে ফ্রিল্যান্সিং শেখানোর প্রতিষ্ঠান লিডিং লাইটের কর্ণধার সিনথিয়া আকতার লিজার সাক্ষাৎকার দেখেন। লিজা ফ্রিল্যান্সিং মাসে আয় করেন ৪ লাখ টাকা। হোসনা চোখ বন্ধ করে ভর্তি হয়ে যান লিডিং লাইটে। গত বছরের মার্চে শুরু হয় ফ্রিল্যান্সিং শেখার কোর্স। কোর্স চলাকালীন আগস্টে প্রথম নেদারল্যান্ডসের একজন ক্লায়েন্টের কাজ পান তিনি। কাজটা সফলভাবে সম্পন্ন করেন। গত বছরের আগস্টে দেশ ছিল টালমাটাল, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রেশ তখনও চলছে দেশে। ২৩ আগস্ট  আসমাউল হোসনা যখন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিছানায়, তখনই আসে প্রথম ৪৫ ডলারের পেমেন্ট। হোসনার ডলার ধরার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পেল। 
এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি গৃহবধূ আসমাউল হোসনাকে। এখন তিনি ইউক্রেন,
 জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী চারজন বায়ার এবং তিনটি গ্লোবাল সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানির ম্যানেজার। ফ্রিল্যান্সিং করে এখন তার মাসিক আয় ১২০০–১৫০০ ডলার, যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় দেড় লাখ টাকা। গত ঈদে নিয়মিত আয়ের পাশাপাশি পেয়েছেন বোনাস ডলার।
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট ম্যানেজমেন্ট, ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম ক্যাম্পেইন রানের পাশাপাশি ওয়েবসাইট তৈরি করেন আসমাউল হোসনা। ডিজিটাল মার্কেটিং, কনটেন্ট স্ট্র্যাটেজি, অর্গানিক গ্রোথ টেকনিক এবং এনালিটিক্স ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহকদের ব্র্যান্ড ভ্যালু বৃদ্ধিতে অবদান রাখছেন তিনি।
প্রথম ডলার পাওয়ার অনুভূতি বললেন আসমাউল হোসনা–‘আমি তখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে জ্বরে কাবু, বিছানায় পড়ে আছি। এই সময়ে এলো সুখবর, আমার একাউন্টে জমা হলো ৪৫ ডলার। তখন আমার মনে হলো কখনও কখনও দুঃসময়ও মানুষকে সেরা মুহূর্ত উপহার দেয়।’
কক্সবাজারের সাগরকন্যা খ্যাত কুতুবদিয়ার লেমশীখালীর মেয়ে আসমাউল হোসনা। সাগরের গর্জন আর ঝাউবনের গান শুনে বড় হয়েছেন তিনি। সেখান থেকে ডিজিটাল দুনিয়ায় নিজস্ব পরিচিতি গড়ে তোলা যেন এক ‘রূপকথার গল্প’। ২০১৫ সালে লেমশীখালী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন  হোসনা। ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম শহরের এনায়েত বাজার মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করা ছিল তার জন্য ‘টার্নিং পয়েন্ট’। এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই পারিবারিক সিদ্ধান্তে পুলিশ কর্মকর্তা মোজাহেদ হাসানের সঙ্গে বিয়ে হয় হোসনার। পরে চট্টগ্রাম সরকারি হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকে গণিতে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন তিনি।
স্বামীর কর্মস্থল কখনো শহরে, কখনো মফস্বলে, কখনো পাহাড়ে–কখনো সমতলে। শুরু দিকে এই নতুন পরিবেশ মানিয়ে নিতে তাঁকে মানসিকভাবে লড়াই করতে হয়েছে। কিন্তু দ্বীপকন্যা ছিলেন অন্য ধাতুতে গড়া, তাই সবসময় সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস দেখিয়েছেন। আসমাউল হোসনা বলেন, ‘আমার স্বামী বাংলাদেশ পুলিশের একজন সদস্য, তিনিই আমার স্বপ্নের সারথী, আমার সাফল্যের চালিকা শক্তি। স্বামীর সহৃদয় সহায়তায় আমি নতুন দিনের আলো দেখেছি।’
স্বামী, সন্তান, সংসার দেখভাল করার পর ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য সময় বের করেন কিভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে আসমাউল হোসনা বলেন, ‘এই পেশায় আমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল টাইম ম্যানেজমেন্ট। আমাদের যৌথ পরিবার। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সংসার সামলানোর পাশাপাশি পড়াশোনাও সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছি। আমার বিশ্বাস–ইচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব।’
‘ডলার তো ধরছেন, এখন আপনার পরিকল্পনা কী?’–এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি  বলেন, ‘আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা হলো, ডিজিটাল সেক্টরে গ্রামের মেয়েদের দক্ষ করে তোলা। আমি চাই এমন একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে, যেখানে প্রযুক্তিগতভাবে পিছিয়ে থাকা মেয়েরা ঘরে বসেই আয়ের পথ তৈরি করতে পারবেন। আমার বিশ্বাস, শিক্ষা ও প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব এবং নারীদের দক্ষ করে তোলার মধ্যে দিয়েই দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো আরও শক্তিশালী করা যাবে।’
নতুন যারা ফ্রিল্যান্সিংয়ে আসতে চান, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী? ‘মহান আল্লাহর দেওয়া অফুরন্ত শক্তির ওপর বিশ্বাস রেখে সঠিকভাবে চেষ্টা করে গেল সাফল্য আসবেই। শেখার কোনো শেষ নেই। প্রথম দিকে সবকিছুই একটু কঠিন লাগে, সময়ের সঙ্গে সহজ হয়ে যায়। আমি মনে করি, গৃহিণীদের জন্য ফ্রিল্যান্সিংয়ে দারুণ সুযোগ রয়েছে। আমরা রান্না, খাওয়া ও ঘুমানোর ফাঁকে একটু সময় পেলেই স্মার্ট ফোনে ঢু মারি। আমার পরামর্শ থাকবে ফেসবুক, ইউটিউবে অযথা সময় নষ্ট না করে গৃহবধু, তরুণ–তরুণীরা যে ফ্রিল্যান্সিং শিখে, আয়ের পথ খুঁজেন।’–বলেন আসমাউল হোসনা।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গল প র জন য আম র স প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

এসএসসি পরীক্ষা বাতিল নয়, সংস্কার দরকার

৩ আগস্ট প্রথম আলোতে মুনির হাসানের তথ্যবহুল লেখা ‘এসএসসি পরীক্ষার প্রয়োজন কতটুকু আছে?’ মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এসএসসি সনদের কার্যকারিতা কমেছে, এ বিষয়ে লেখকের যুক্তির সঙ্গে দ্বিমত করার কোনো কারণ নেই; কিন্তু তিনি সবশেষে বলেছেন, ‘এসএসসি পরীক্ষাকে ইতিহাসে পাঠিয়ে আমরা একটি মানবিক, দক্ষ ও আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যেতে পারি। একটি আধুনিক শিক্ষাবান্ধব বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার স্বার্থেই শিক্ষাব্যবস্থা থেকে এসএসসি পরীক্ষা বাতিল করা হোক।’ এই বক্তব্যের সঙ্গে বিনীতভাবে ভিন্নমত পোষণ করছি।

পরীক্ষামাত্রই মানসিক চাপ থাকবে। পরীক্ষামাত্রই কিছু তথ্য মনে রাখার ঝামেলা থাকবে। পাস-ফেল থাকবে। এই চাপ এসএসসি পরীক্ষায় যেমন, তার আগে-পরে সব পরীক্ষায়ও তেমন। কাজেই শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপের অজুহাতে কোনো পরীক্ষা বাতিলের দাবি করলে শুধু এসএসসি কেন, দুনিয়ার সব পরীক্ষা বাতিলের দাবি করতে হবে। সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার না করে যে পদ্ধতিতেই এই মূল্যায়ন করা হোক না কেন, পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। তাই প্রথমেই গণিত আর ইংরেজি বিষয়ের পাঠদানের ঘাটতি চিহ্নিত করে সংশোধনের ব্যবস্থা নিতে হবে। 

সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার না করে যে পদ্ধতিতেই এই মূল্যায়ন করা হোক না কেন, পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। তাই প্রথমেই গণিত আর ইংরেজি বিষয়ের পাঠদানের ঘাটতি চিহ্নিত করে সংশোধনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

শোনা যায়, এবারের এসএসসি পরীক্ষা প্রকৃতপক্ষেই একটি ভালো পরীক্ষা হয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে অসদুপায় অবলম্বনকে যথাসম্ভব নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য পরীক্ষকদের ওপর কোনো অনৈতিক চাপ ছিল না। ফলে এবার এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে। জিপিএ-৫ এর সংখ্যা কমেছে। প্রতি ১০ জনে ৩ জন ফেল করেছে। এদের একটি বড় অংশই ফেল করেছে গণিত ও ইংরেজিতে। এটি বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার একটি বড় দুর্বলতা। এসএসসি পরীক্ষা বাতিল করে দিলেই এই দুর্বলতা দূর হবে না। এসএসসি পরীক্ষা থাকুক বা না থাকুক, নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষা শেষে মূল্যায়নের একটি ব্যবস্থা তো থাকবে।

সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার না করে যে পদ্ধতিতেই এই মূল্যায়ন করা হোক না কেন, পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। তাই প্রথমেই গণিত আর ইংরেজি বিষয়ের পাঠদানের ঘাটতি চিহ্নিত করে সংশোধনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

দেশের সব শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় ব্যাপক ফল বিপর্যয় হলেও একই সময়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন অনুষ্ঠিত সমমানের এসএসসি (ভোক) পরীক্ষায় কিন্তু ফল বিপর্যয় ঘটেনি। এ বছর ১ লাখ ১২ হাজার ১০০ জন পরীক্ষা দিয়ে ৮৫.৬ শতাংশ পাস করেছে। ৯ হাজার ৫০০ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে।খোঁজ নিয়ে দেখলাম, কারিগরি বোর্ডে উচ্চতর পাসের হারের পেছনে অন্যতম কারণ হলো ভিন্নতর পরীক্ষাপদ্ধতি। কারিগরি বোর্ডের সিলেবাস অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডের সিলেবাসের মতো একই। তবে ওদের নবম ও দশম শ্রেণিতে আলাদা পরীক্ষা হওয়ায় প্রতি পরীক্ষায় সিলেবাস অর্ধেক হয়ে যায়।

উপরন্তু ধারাবাহিক মূল্যায়নে নম্বর ৪০ শতাংশ আর চূড়ান্ত পরীক্ষায় নম্বর ৬০ শতাংশ। ফলে চূড়ান্ত পরীক্ষার ওপর চাপ অনেকাংশে কম। মজার ব্যাপার হলো এসএসসি (ভোক) পরীক্ষা অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডের অধীন অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষার সমমান হিসেবে পরিগণিত হয়। কাজেই নিঃসন্দেহে বলা যায়, এ বছর সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর এসএসসি পরীক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হয়েছে।

বিগত সরকারের আমলে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে। বিরক্ত বা ভীত হয়ে অনেকেই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের দিকে ঝুঁকেছে। ইংরেজি মাধ্যমে এসএসসি সমমানের পরীক্ষাটি হলো ‘ও লেভেল’। পরীক্ষাটি বছরে তিনবার—জানুয়ারি, মে ও নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। দুই বছর সময়ের ভেতরে মূল কয়েকটি বিষয়সহ কমপক্ষে ছয়টি বিষয় পাস করলেই ‘ও লেভেল’ পাস হয়ে যায়। তবে অনেকেই নিজ নিজ পছন্দ ও সুবিধামতো এক বা একাধিক সময়ে ৮ থেকে ১১-১২টি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে থাকে।

এ ব্যবস্থার সুবিধা হলো, একবারে না দিয়ে একাধিক ধাপে পরীক্ষা দেওয়া যায়। কোনো একটি বিষয়ে পরীক্ষা খারাপ হলে চার মাস পরেই আবার পরীক্ষা দিয়ে গ্রেড পরিবর্তন করার সুযোগ থাকে। চাইলে দুই বছরের আগেই ‘ও লেভেল’ শেষ করা যায়।

 ইংরেজি মাধ্যমে এইচএসসি সমমানের পরীক্ষাটি হলো এ লেভেল। ও লেভেল পরীক্ষার মতো এ লেভেল পরীক্ষাও বছরে তিনবার অনুষ্ঠিত হয়। দুই বছর সময়ের মধ্যে কমপক্ষে তিনটি বিষয় সম্পন্ন করলেই এ লেভেল পাস হয়ে যায়। তবে কেউ কেউ তিনটির বেশি বিষয়ও নিয়ে থাকে। এতে পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় বেশি অপশন খোলা থাকে। 

এইচএসসিতে প্রতিটি বিষয় দুটি মডিউলে ভাগ করা থাকে—প্রথম পত্র ও দ্বিতীয় পত্র এবং দ্বাদশ শ্রেণি শেষ করে দুই সিটিংয়ে দুটি মডিউলের পরীক্ষা দিতে হয়। অন্যদিকে ‘এ লেভেল’-এ প্রতিটি বিষয় ছয়টি মডিউলে ভাগ করা হয় এবং ছয় সিটিংয়ে ছয়টি মডিউলের পরীক্ষা দিতে হয়। শিক্ষার্থীরা সাধারণত একাদশ শ্রেণি শেষে যেকোনো বিষয়ের তিনটি মডিউল এবং দ্বাদশ শ্রেণি শেষে বাকি তিনটি মডিউলের পরীক্ষা দেয়। তবে কেউ চাইলে সব কটি মডিউল একসঙ্গে নিতেও বাধা নেই। কোনো মডিউলের পরীক্ষা খারাপ হলে চার মাসের মধ্যেই আবার পরীক্ষা দিয়ে গ্রেড ভালো করার সুযোগ আছে।

পরীক্ষার্থীদের মানসিক চাপে ফেলা আর ফেল করানো কোনো পরীক্ষার উদ্দেশ্য হতে পারে না। তাই শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ মতামতের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও লেভেল এবং এ লেভেল পরীক্ষাগুলো ডিজাইন করা হয়েছে। সিলেবাস অধিকসংখ্যক মডিউলে ভাগ করে এবং চার মাস পরপর পরীক্ষার ব্যবস্থা করে পরীক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমিয়ে আনা হয়েছে। 

আমাদের এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষাপদ্ধতি সেকেলে। টানা দুই বছর পড়াশোনা করে ঢাউস সিলেবাস মুখস্থ করে পরীক্ষার হলে যেতে হয়। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের উচ্চতর পাসের হার থেকে বোঝা উচিত আমাদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাপদ্ধতির আশু সংস্কার প্রয়োজন। যেই পদ্ধতিতে ৩০ শতাংশের ওপরে ফেল করে এবং সেই ফল শোধরানোর জন্য একটি বছর বসে থাকতে হয়, সেই পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। 

কাজেই এসএসসি পরীক্ষা বাতিল নয়, আমার প্রস্তাব হলো: ১. বোর্ডের পরীক্ষাগুলো বছরে দুবার নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে; ২. এসএসসি সিলেবাসকে নবম ও দশম শ্রেণি দুই ভাগে ভাগ করতে হবে এবং আলাদাভাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। ৩. ‘কোর বিষয়’ এবং ঐচ্ছিক বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে হবে; ৪. নবম ও দশম শ্রেণির ফলাফলের সমন্বয়ে এসএসসির ফলাফল নির্ধারিত হবে। ৫. ‘কোর বিষয়ে’ ফেল করলে ছয় মাস পর আবার পরীক্ষার সুযোগ দিতে হবে; ৬. বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো কলেজেও সেমিস্টার-পদ্ধতি চালু করতে হবে এবং ছয় মাস পরপর ভর্তির সুযোগ দিতে হবে; ৭. এইচএসসির সিলেবাস চারটি মডিউলে ভাগ করতে হবে; ৮. ছয় মাস পরপর পরীক্ষার মাধ্যমে দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে চারটি মডিউল শেষ করার সুযোগ দিতে হবে। 

প্রস্তাবিত সংস্কার বাস্তবায়িত হলে আমাদের বোর্ডের পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ইংরেজি মাধ্যমের পরীক্ষাপদ্ধতির ভিন্নতা কমে আসবে। ছাত্রদের ওপর মুখস্থ করার চাপ অনেকাংশে কমবে। ছয় মাস পরপর পরীক্ষার সুযোগ থাকায় ফেল করার ভয় কেটে যাবে। 

ড. মাহবুবুর রাজ্জাক অধ্যাপক, যন্ত্রকৌশল বিভাগ, বুয়েট। 

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এসএসসি পরীক্ষা বাতিল নয়, সংস্কার দরকার