সরকার ‘প্রতিশ্রুতি না রাখায়’ আগামী ৩ আগস্ট ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই ঘোষণাপত্র এবং দলীয় ইশতেহার পাঠ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ৫ আগস্ট ‘ছাত্রজনতার মুক্তি দিবস’ পালন করবে দলটি।

এছাড়া আগামী ১ থেকে ৩০ জুলাই দেশব্যাপী ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শীর্ষক কর্মসূচি পালন করা হবে। জুলাইয়ের প্রথম দিন আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে এ কর্মসূচি শুরু হবে।

রোববার সকালে রাজধানীর বাংলামোটরে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির আহ্বায়ক মো.

নাহিদ ইসলাম।

কর্মসূচি ঘোষণা করে নাহিদ বলেন, শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে দেশের ৬৪টি জেলায় ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করা হবে।

তিনি জানান, ১৬ জুলাই আবু সাঈদের মৃত্যুর মাধ্যমে আন্দোলনে শহীদ হওয়া শুরু হয়। তাই আমরা ১৬ জুলাই ‘বৈষম্যবিরোধী শহীদ দিবস’ হিসেবে সারাদেশে পালন করবো। এছাড়া ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ছাত্রজনতার পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র এবং ইশতেহার পাঠ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এই দিনকে ‘ছাত্রজনতার মুক্তি দিবস’ পালন করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র সরকারের দেওয়ার কথা ছিল। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবির সময় সরকার ৩০ কার্যদিবস সময় দিয়েছিল। সেই ৩০ কার্যদিবস পার হয়ে গেছে। কিন্তু কোনো উদ্যোগ আমরা দেখিনি। জুলাইয়ের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সাংবিধানিক স্বীকৃতি, শহীদের স্বীকৃতি ইত্যাদি নিশ্চিত করার জন্য আমাদেরই জুলাই ঘোষণাপত্রটি প্রয়োজন। সরকার যেহেতু বলেছিল, সকলে আলোচনা করে ঐক্যমত্যের মাধ্যমে এটি দেবে, প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও সরকার তা রক্ষা করতে পারেনি। সারা বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা এবং তাদের প্রত্যাশা শুনে, তাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ছাত্র জনতার জুলাই ঘোষণাপত্র এবং ইশতেহার পাঠ করবো।

নাহিদ বলেন, যেহেতু সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল, ফলে ব্যর্থতার দায় সরকারকে নিতে হবে। সরকারকে স্পষ্ট করতে হবে কোথা থেকে বাধা পাচ্ছে। কাদের জন্য এটি হচ্ছে না। সরকার যেহেতু স্পষ্ট করেনি আমাদের মনে হয় সরকারের উপর নির্ভরশীল না থেকে আমাদের জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করা উচিত। পরবর্তী সময়ে সরকারের দায়িত্ব থাকবে এটাকে কীভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় রূপান্তর করা যায়। আমাদের অবশ্য দাবি থাকবে এই ঘোষণাপত্র সংবিধানে যুক্ত করার। 

তিনি বলেন, আমরা ৩১ ডিসেম্বর এই কর্মসূচি শুরু করেছিলাম। সরকারের জায়গা থেকে যখন বলা হলো, তখন আমরা কর্মসূচি থেকে সরে এসেছি। এখন এই ঘোষণাপত্র রচনার জন্য আমাদের সারাদেশে যাত্রা। আমরা জনগণের দুয়ারে জুলাইকে নিয়ে যাব। তাদের বক্তব্য এবং প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘোষণাপত্র রচিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, এনসিপির কর্মসূচি ও বাস্তবায়ন সেলের সম্পাদক অনিক রায়, যুগ্ম সদস্য সচিব লুৎফর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ত য় ন গর ক প র ট এনস প র প ঠ কর ৩ আগস ট সরক র র আম দ র এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

রুনা লায়লার জন্মদিন: সংগীতজীবনের বর্ণময় ৬ দশকের উদ্‌যাপন

উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। সোমবার (১৭ নভেম্বর) ৭৩ বছর পূর্ণ করলেন। একইসঙ্গে পূর্ণ করলেন তার গৌরবময় সংগীত-জীবনের ৬০ বছর। উপমহাদেশের তিন দেশ—বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে সমানতালে গান গেয়ে কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছেন রুনা লায়লা। ১৮টি ভাষায় তার গাওয়া গানের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। ফলে তিনি যে উপমহাদেশের শীর্ষ সংগীতশিল্পীদের একজন—এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বাংলাদেশের বাংলা গানকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেওয়ার পেছনে তার অবদান অনন্য। দেশ-বিদেশ থেকে প্রাপ্ত অগণিত স্বীকৃতির মাঝে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ তার অর্জনকে আরো মহিমান্বিত করেছে।

আরো পড়ুন:

কনসার্টে গায়ক একনের পরনের প্যান্ট নিয়ে টানাটানি

চতুর্থ সন্তানের মা হলেন কার্ডি বি

ভক্তদের কাছে রুনা লায়লার এবারের জন্মদিনটি বিশেষ। কোক স্টুডিও বাংলার তৃতীয় মৌসুমের শেষ গানটি প্রকাশ পেয়েছে তার গাওয়া জনপ্রিয় সুফি কাওয়ালি ‘দামা দম মাস্ত কালান্দার’ দিয়ে—যে গানটি বহু বছর আগে তাকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দিয়েছিল।

তবে জন্মদিন নিয়ে শিল্পীর বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি জানান, পরিবারকে সময় দিয়েই কাটাবেন দিনটি। ঘরোয়া পরিবেশেই উদ্‌যাপিত হবে জন্মদিন।

১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন রুনা লায়লা। সংগীতজীবনের শুরু ষাটের দশকের শেষ দিকে পাকিস্তানের চলচ্চিত্র শিল্পে। শিল্পী আহমেদ রুশদির গায়কিতে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগীতাঙ্গনে পথচলা শুরু করা এই কণ্ঠশিল্পী দ্রুতই উর্দুভাষী শ্রোতাদের মন জয় করে নেন। ‘উনকি নজরোঁ সে মোহাব্বত কা জো পয়গাম মিলা’—এর মতো গান তাকে এনে দেয় ব্যাপক জনপ্রিয়তা।

এরপর ভারতেও ছড়িয়ে পড়ে তার কণ্ঠের জাদু। ‘ও মেরা বাবু ছৈল ছাবিলা’ তাকে পরিচিত করে তোলে সাদাকালো যুগেই। পরে সংগীত পরিচালক বাপ্পি লাহিড়ীর সঙ্গে ‘ডিস্কো দিওয়ানে’ (১৯৮২) অ্যালবাম তাকে বিশ্বব্যাপী নতুন আরেক পরিচিতির শিখরে পৌঁছে দেয়। 

যদিও তিন দেশে সাফল্য পেয়েছেন, রুনা লায়লার সংগীতজীবনের মূল ভিত্তি ছিল বাংলাদেশ। ‘দ্য রেইন’ (১৯৭৬), ‘জাদুর বাঁশি’ (১৯৭৭), ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ (১৯৮৯), ‘অন্তরে অন্তরে’ (১৯৯৪)—সহ মোট সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ গায়িকা নির্বাচিত হয়েছেন। ‘সাধের লাউ বানাইলা মোরে বৈরাগী’, ‘বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িতে গেলাম’—এর মতো বাংলা লোকগান তার কণ্ঠে নতুন প্রাণ পেয়েছে। 

দীর্ঘ ও সফল এই যাত্রায় মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি—এ কথা প্রায়ই উল্লেখ করেন রুনা লায়লা। তিনি বলেন, “মা আমাকে প্রচণ্ড সহযোগিতা করেছেন। ছোটবেলায় গান গাইতে গেলে মা সবসময় সঙ্গে যেতেন।”

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ