ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নতুন একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তি নিয়ে কাজ করছে মিশর। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদর আবদেলআত্তি জানিয়েছেন, ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি এবং অবরুদ্ধ গাজায় দ্রুত ত্রাণ সরবরাহের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এই চুক্তিতে। খবর আনাদোলুর।

মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্থানীয় সময় রবিবার (২৯ জুন) সন্ধ্যায় অনটিভি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা একটি স্থায়ী সমাধান এবং টেকসই যুদ্ধবিরতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।”

তিনি জানান, এই প্রস্তাবটি মিশর, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগের ফল এবং এটিকে একটি ‘প্রথম পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রূপ নিতে পারে।

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় মৃত্যুর সংখ্যা ৫৬,৫০০ ছুঁয়েছে

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরো ৮১ ফিলিস্তিনি

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বর্তমানে আলোচনার টেবিলে যা রয়েছে তা হলো- ৬০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব, যার বিনিময়ে কিছু সংখ্যক ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং চিকিৎসা সরঞ্জামসহ গাজায় দ্রুত মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।”

তিনি আরো বলেন, “এই পদক্ষেপটি একটি টেকসই যুদ্ধবিরতির দিকে অগ্রসর হওয়ার গতি তৈরি করবে এবং শেষ পর্যন্ত ১৯ জানুয়ারি চুক্তির বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।”

আবদেলআত্তি বলেন, “যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য আসন্ন যেকোনো চুক্তিতে গ্যারান্টি অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্ব সম্পর্কে একটি আমেরিকান দৃষ্টিভঙ্গি ও বোধগম্যতা রয়েছে।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী সতর্ক করে বলেন, “(ইসরায়েলি) আগ্রাসন পুনরায় শুরু হলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় হুমকি তৈরি হবে।” 

এর আগে, গত ১৯ জানুয়ারি মিশর, কাতার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে তিন-ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যামূলক যুদ্ধের অবসান ঘটানো।

তবে ১৮ মার্চ ইসরায়েল গাজায় পুনরায় হামলা শুরু করার পর চুক্তিটি ভেঙে যায়।

যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজার বিরুদ্ধে নৃশংস আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৫৬,৫০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পরর ষ ট রমন ত র ইসর য় ল ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ভিড়ে হারাচ্ছে আবাসিকতা 

ধানমন্ডির মতো বৃহত্তম আবাসিক এলাকায় হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর—সবকিছুই লাগবে। তবে পরিমিত মাত্রায়। সব হতে হবে প্রাণ, প্রকৃতি ও প্রতিবেশবান্ধব। বর্তমানে এসবের কিছুই হচ্ছে না। ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা তার চরিত্র হারিয়েছে। এখানে যে ভবনগুলোতে হাসপাতাল চালু রয়েছে, সেগুলো মূলত আবাসিক ভবন।

বলছিলেন রাজধানীর ধানমন্ডির ১৪/এ সড়কের স্থায়ী বাসিন্দা, জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান। সম্প্রতি ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে দাঁড়িয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

সকাল-দুপুর, বিকেল-রাত ধানমন্ডিতে যানজট লেগে থাকে প্রধান সড়ক এমনকি অলিগলিতেও। ধানমন্ডির মতো একই চিত্র দেখা গেছে লালমাটিয়াতেও। লালমাটিয়ার আবাসিক ভবনগুলোতে গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর ফলে একসময়ের নিরিবিলি আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত লালমাটিয়ায় এখন যানবাহনে গিজগিজ করে। এ দুই এলাকার বাসিন্দাদের জন্য রয়েছে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, নান্দনিক লেক, খেলার মাঠ ও প্রশস্ত রাস্তা। কিন্তু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দাপটে এ দুই আবাসিক এলাকার যে সুনাম, তা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

ঘিঞ্জি হয়ে উঠেছে ধানমন্ডি

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক স্থপতি সাজিদ বিন দোজার লেখা থেকে জানা যায়, ‘এক শতাব্দী আগেও ধানমন্ডি ছিল উলুখাগড়া আর ছনগাছের রাজ্য। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর ধানমন্ডি নামের এই প্রান্তিক গ্রামে মানুষজন বসবাস শুরু করে।’

এখন ধানমন্ডি ২৭ ও সাতমসজিদ রোড দিয়ে হাঁটলেই চোখে পড়বে দুই পাশজুড়ে হাসপাতাল, ব্যাংক, রেস্তোরাঁ, কফিশপ, শোরুম—সব মিলিয়ে ধানমন্ডির প্রতিটি বড় রাস্তা যেন একেকটি বাণিজ্যিক অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। মূল সড়ক দুটির লাগোয়া সড়কেও গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ধানমন্ডির ১৫/এ সড়কে রয়েছে একটি হাসপাতাল। প্রতিদিন অসংখ্য রোগী, রোগীর আত্মীয়স্বজন, ব্যক্তিগত গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ভিড় করে সড়কটিতে।

আবাসিক ভবনে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা সীমিত। ফলে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ধানমন্ডিতে আসা গাড়িগুলো অলিগলিতে পার্ক করে রাখা হয়েছে। এই চিত্র দেখা গেল ধানমন্ডির ১৪/এ সড়কে এসে। প্রশস্ত সড়কটির এক পাশে মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। ওষুধ বিপণনকর্মীরা সকালের গ্রুপ মিটিং রাস্তাতেই সেরে নিচ্ছেন। সড়কটি বেশ প্রশস্ত। সংস্কারকাজ চলছে। গত ৫ আগস্ট-পরবর্তী জটিলতায় কাজ বন্ধ ছিল দীর্ঘ সময়। এই সড়কটির অপর পাশের ফুটপাত দখল করে চলছে মাছ-মাংস-ভাত-ডাল রান্নার কাজ। সড়কে পাতা হয়েছে টেবিল। খোলা পরিবেশে ধুলাবালুর মধ্যে রোগীর আত্মীয়স্বজন খোলা বাংলা হোটেলে পেটের ক্ষুধা মেটাচ্ছেন। সড়কটিতে একটি মেডিকেল কলেজ, একটি ডেন্টাল কলেজ, একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল রয়েছে।

ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে অবস্থিত এবি ব্যাংকের পাশের সড়কটির নম্বর ১৬। এই সড়কে নামফলকহীন পাশাপাশি দুটি পুরোনো দ্বিতল বাড়ি এখনো টিকে আছে। বাড়ি দুটির আঙিনায় এখনো কিছু গাছপালা দেখা যায়। কিন্তু নতুন বহুতল ভবনগুলোতে ফাঁকা জায়গা বা সবুজের অস্তিত্ব নেই। আশির দশকেও ধানমন্ডির প্রতিটি প্লটে এ রকম একটি করে সুন্দর একতলা বা দোতলা বাড়ি ছিল।

ইতিহাসবিদ ও গবেষক মুনতাসীর মামুনের বিখ্যাত গ্রন্থ ঢাকা স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী থেকে জানা যায়, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার গোড়াপত্তন হয় ১৯৪৮-৪৯ সালে, পাকিস্তান আমলে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অধিগ্রহণে এটি ঢাকার প্রথম পরিকল্পিত আবাসিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে ওঠে।

লালমাটিয়া আবাসিক এলাকাকে কেন্দ্র করে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও খাবারের দোকানে রমরমা ব্যবসা চলছে

সম্পর্কিত নিবন্ধ