‘তাকওয়া’ শব্দটির অর্থ আল্লাহকে ভয় করে চলা, সব সময় তাঁর নির্দেশ মেনে চলা এবং গুনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করা। এটি এমন একটি গুণ, যা একজন মুমিনকে আল্লাহর প্রিয় বানিয়ে তোলে।
তাকওয়া থাকে অন্তরে, কিন্তু তার প্রভাব দেখা যায় মানুষের জীবনে। তাকওয়াবান মানুষ একা থাকলেও খারাপ কাজ করে না, কারণ সে জানে, ‘আমার রব আমাকে দেখছেন।’
আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যেমনভাবে ভয় করা উচিত। আর মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০২)
আল্লাহ আরও বলেন, ‘আল্লাহ তাদেরকেই কবুল করেন, যাঁরা তাকওয়াবান।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত: ২৭) এই আয়াতগুলো আমাদের শেখায় তাকওয়া ছাড়া ইমান পরিপূর্ণ হয় না আর আল্লাহর নৈকট্য অর্জনও সম্ভব নয়।
হে ইমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যেমনভাবে ভয় করা উচিত। আর মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০২আরও পড়ুনতাকওয়া কী০৪ আগস্ট ২০২৩তাকওয়ার উপকারিতা১.
২. ভালোমন্দ বোঝার শক্তি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে তিনি তোমাদের সঠিক-বেঠিক বোঝার শক্তি দেবেন, গুনাহ মাফ করবেন এবং ক্ষমা করে দেবেন।’ (সুরা আনফাল, আয়াত: ২৯)
৩. মর্যাদার মানদণ্ড: রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক রূপ বা সম্পদ দেখেন না; বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও কাজের দিকে তাকান।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস ২৫৬৪)
রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘মানুষের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাবান সেই ব্যক্তি, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়া আছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৩১৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৭৮)
তাকওয়া থাকে অন্তরে, কিন্তু তার প্রভাব দেখা যায় মানুষের জীবনে। তাকওয়াবান মানুষ একা থাকলেও খারাপ কাজ করে না, কারণ সে জানে, ‘আমার রব আমাকে দেখছেন।’আরও পড়ুনসামাজিক নিরাপত্তায় প্রয়োজন ‘তাকওয়া’১৭ মার্চ ২০২৫তাকওয়া একটি গোপন সৌন্দর্যতাকওয়া এমন এক সৌন্দর্য, যা বাইরে নয়, অন্তরে থাকে। তাকওয়া মানুষকে বিনয়ী করে, ধৈর্য ধরতে শেখায় এবং সৎ পথে অটল থাকতে সাহায্য করে। তাকওয়া ছাড়া কেউ দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হতে পারে না।
তাই আসুন, আমরা অন্তরে তাকওয়ার আলো জ্বালিয়ে দিই, গুনাহ থেকে বাঁচি আর প্রতিটি কাজ আল্লাহকে খুশি করার নিয়তে করি।
লেখক: খতিব, টোলারবাগ কেন্দ্রীয় মসজিদ, মিরপুর ১, ঢাকা।
আরও পড়ুনআল্লাহর ভালোবাসা আদায়ের পথ তাকওয়া১০ মে ২০২৩উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কোটিপতি হলেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন তিনি
পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করতে পারলেই আমাদের অনেকে কায়িক পরিশ্রম ছেড়ে দেন। আরাম-আয়েশে জীবন কাটান। কিন্তু সবাই তা করেন না। এমন একজন জাপানের কোইচি মাতসুবারা। ৫৬ বছর বয়সী এই জাপানি নাগরিকের বার্ষিক আয় প্রায় ৩ কোটি ইয়েন (প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনো নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন।
মাতসুবারা সপ্তাহে তিন দিন, প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে কাজ করেন। তিনি সরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এ কাজের অংশ হিসেবে তাঁকে ছোটখাটো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে হয়।
এ কাজ থেকে মাতসুবারা মাসে ১ লাখ ইয়েন (প্রায় ৮২ হাজার ৬৪ টাকা) আয় করেন, যা টোকিওর গড় বেতনের তুলনায় অনেক কম। তারপরও তিনি এ কাজ করেন। কারণ, তিনি এটাকে শারীরিক সক্রিয়তা ও মানসিক প্রশান্তির উপায় হিসেবে দেখেন।
মাতসুবারা ছোটবেলা থেকেই সঞ্চয়ী ছিলেন। মাধ্যমিকের পর তিনি একটি কারখানায় মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন (প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা) বেতনে কাজ শুরু করেন। খরচ বাঁচিয়ে কয়েক বছরে প্রায় ৩০ লাখ ইয়েন (২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা) সঞ্চয় করে তিনি প্রথম স্টুডিও ফ্ল্যাট কিনেছিলেন।
পরে বাড়ি কেনার ঋণ আগেভাগে পরিশোধ করে ধীরে ধীরে আরও ফ্ল্যাট কেনেন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেন মাতসুবারা। এখন টোকিও ও এর শহরতলিতে তাঁর সাতটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার সবই ভাড়া দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন।
ধনবান হলেও মাতসুবারা সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। এখনো তিনি সস্তা ফ্ল্যাটে থাকেন, নিজের খাবার নিজে বানান, নতুন জামাকাপড় কেনেন না, সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এবং প্রধানত সাইকেলে চলাচল করেন। তাঁর জীবনদর্শন—‘প্রতিদিন কিছু না কিছু করার আশা করি, সুস্থ থাকতে চাই এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করতে চাই।’
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে মাতসুবারাকে ‘অদৃশ্য কোটিপতি’ বলে উল্লেখ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। জাপানে ধনীদের এমন সাধারণ জীবনধারা অস্বাভাবিক নয়। দেশটিতে সাদাসিধে জীবনযাপন অনেকের মধ্যে দেখা যায়।