জলবায়ু বিশৃঙ্খলা ও সংঘাতে জর্জর বিশ্বে সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
Published: 30th, June 2025 GMT
‘জলবায়ু বিশৃঙ্খলা ও সংঘাত জর্জর’ এই সময়ে বিশ্বকে উন্নয়নের গতি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। আজ সোমবার স্পেনের সেভিয়ায় শুরু হওয়া চতুর্থ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন তহবিল সম্মেলনে (এফএফডি৪) তিনি এ আহ্বান জানান। জাতিসংঘের চার দিনব্যাপী এ সম্মেলনে বিশ্বের অনেক নেতা ও চার হাজারের বেশি প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।
তবে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় এ সম্মেলনে অংশ নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বৈশ্বিক সহযোগিতায় যে ভাঙন শুরু হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতি তা আরও স্পষ্ট করে।
গুতেরেস উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, এসডিজির দুই-তৃতীয়াংশই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়ে আছে। এ লক্ষ্য পূরণে প্রতিবছর ৪ লাখ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ দরকার।
গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা গ্রহণের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির বাজেট ব্যাপকভাবে কাটছাঁট করেছেন। পাশাপাশি প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ালেও জার্মানি, ব্রিটেন ও ফ্রান্সও উন্নয়ন সহায়তা কমাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফামের মতে, ১৯৬০ সালের পর এবারই উন্নয়ন সহায়তা সবচেয়ে বড় সংকোচনের মুখে পড়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমানে ৮০ কোটির বেশি মানুষকে দৈনিক ৩ ডলারের কম আয়ে জীবন ধারণ করতে হয়। বিশেষত, সাব-সাহারা আফ্রিকায় চরম দারিদ্র্য বাড়ছে।
বিশ্বজুড়ে ট্রাম্পের আমলে আরোপিত শুল্কনীতি, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেন যুদ্ধ—সব মিলিয়ে দরিদ্র দেশগুলোর সহায়তা পাওয়ার পথ আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। গুতেরেস বলেন, এসব সংকটের কারণে লাখ লাখ শিশু টিকাদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, স্কুল ছাড়ছে কন্যাশিশুরা, ক্ষুধার্ত থাকছে বহু পরিবার।
জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ‘অসমতা, জলবায়ু বিশৃঙ্খলা আর সংঘাতে টালমাটাল বিশ্বে আমাদের উন্নয়নের ইঞ্জিন ঠিক করতে হবে, চালু রাখতে হবে।’
সেভিয়াতে এমন এক সময়ে এফএফডি৪ শুরু হচ্ছে, যখন দক্ষিণ ইউরোপ চরম তাপপ্রবাহে পুড়ছে। বিজ্ঞানীদের মতে, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপপ্রবাহের মতো চরম আবহাওয়ার ঘটনা বেড়েছে।
ঋণ বেড়ে তিন গুণ
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী উন্নয়নশীল বিশ্ব বা গ্লোবাল সাউথের সুপরিচিত নেতাদের মধ্যে কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো, সেনেগালের বাসিরু দিয়োমায় ফায়ে, ইকুয়েডরের দানিয়েল নোবোয়া, অ্যাঙ্গোলার জোয়াও লরেন্সো এবং সুদানের সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান অন্যতম।
প্রথম দিন আলোচনার মূল বিষয় ছিল: কীভাবে গরিব দেশগুলোকে বহির্বিশ্বের ঋণের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় অগ্রগতির সুযোগ করে দেওয়া যায়।
জাতিসংঘের হিসাব বলছে, বিগত ১৫ বছরে সবচেয়ে অনুন্নত দেশগুলোর বৈদেশিক ঋণ তিন গুণ বেড়েছে।
তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজের ফাঁকে পানীয় খেয়ে গরম থেকে স্বস্তি খুঁজছেন এক শ্রমিক। ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বোর্দো শহরে ‘পঁ দ্য পিয়ের’ সেতুতে। ৩০ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জলব য়
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্লোটিলা বহরে ভেসে চলা একমাত্র জাহাজ ম্যারিনেট কোথায়
ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-এর একটি মাত্র নৌযান এখনো আটক করতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। এই নৌযানটি হলো দ্য ম্যারিনেট।
পোল্যান্ডের পতাকাবাহী এই নৌযানে ছয়জন আরোহী রয়েছেন ।
ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকার অনুযায়ী, ম্যারিনেট আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভেসে চলেছে। এর গতি ঘণ্টায় প্রায় ২.১৬ নট (ঘণ্টায় প্রায় ৪ কিলোমিটার) , গাজার আঞ্চলিক জলসীমা থেকে ম্যারিনেটের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার।
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে জাহাজটির ক্যাপ্টেন বলেন, ম্যারিনেটের ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছিল। এটি এখন সারানো হয়েছে।
ফ্লোটিলা আয়োজকেরা বলছেন, ম্যারিনেট নৌযান এখনো স্টারলিঙ্কের মাধ্যমে সংযুক্ত। এটি যোগাযোগের আওতার মধ্যেই রয়েছে। লাইভস্ট্রিমও সক্রিয় আছে।
ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা জানিয়েছে, অন্য জাহাজগুলো আটক করলেও ম্যারিনেট এখনো ভেসে চলছে।
ম্যারিনেট ফিরে যাবে না বলেও ওই পোস্টে জানানো হয়েছে। পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়। ম্যারিনেট হলো ভয়, অবরোধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তা।’
ফ্লোটিলা আয়োজকরা আরও লিখেছেন, ‘গাজা একা নয়।’ ‘ফিলিস্তিনকে কেউ ভুলে যায়নি। আমরা কোথাও যাচ্ছি না।’
ফ্লোটিলা বহরের প্রায় সব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীদের আটক করেছে ইসরায়েল। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে অনেক দেশ। বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভও হয়েছে।
আরও পড়ুনগাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের৬ ঘণ্টা আগে