ব্যবসায়ী শওকত আলী চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
Published: 1st, July 2025 GMT
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মো. শওকত আলী চৌধুরীসহ তাঁর পরিবারের চার সদস্যের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। শওকত আলী চৌধুরী চট্টগ্রামের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের একজন ও ফিনলে বাজার লিমিটেডের চেয়ারম্যান। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) গতকাল সোমবার এক চিঠিতে এই নির্দেশনা দিয়েছে। ফলে তাদের হিসাবে সব ধরনের লেনদেন বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো ক্রেডিট কার্ড থাকলে তা–ও বন্ধ হয়ে যাবে।
শওকত আলী চৌধুরীসহ আরও যাঁদের হিসাব স্থগিত করা হয়েছে, তাঁরা হলেন শওকত আলী চৌধুরীর স্ত্রী তাসমিয়া আম্বারীন, তিনি ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের ভাইস চেয়ারম্যান। হিসাব স্থগিতের তালিকায় থাকা অপর দুজন হলেন তাঁর মেয়ে জারা নামরীন ও জারান আলী চৌধুরী। এর মধ্যে জারা নামরীন ইস্টার্ন ব্যাংকের পরিচালক।
ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়েছে, তাঁদের নামে ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের (লিমিটেড কোম্পানিসহ) নামে কোনো ব্যাংক হিসাব পরিচালিত হয়ে থাকলে সেসব হিসাবের লেনদেন ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করা থাকবে। এসব হিসাবের যাবতীয় দলিল (হিসাব খোলার ফরম, টিপি, কেওয়াইসি) ২ জুলাইয়ের মধ্যে বিএফআইইউতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিএফআইইউর একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আর্থিক অপরাধের তদন্তের অংশ হিসাবে এক মাসের জন্য এসব ব্যক্তি ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনে হিসাবগুলো স্থগিত করা হয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটার পর থেকে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার শওকত আলী চৌধুরীসহ পরিবারের সদস্যদের হিসাব জব্দ করা হয়েছে। তিনি বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
২০ মিনিটেই মিলল টিসিবির পণ্য, খুশি ক্রেতা
চট্টগ্রাম নগরের ঝাউতলা এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাহমুদ করিম। স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে পাশেই আমবাগান এলাকায় থাকেন। স্বল্প আয়ের সংসার চালাতে হয় হিসাব করে। তাই খবর পেলেই চলে আসেন টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে। আজ বৃহস্পতিবার তাঁকে পাওয়া গেল নগরের টাইগারপাস এলাকায়। পণ্য নিয়ে ঘরের দিকে পা বাড়িয়েছেন মাত্র।
মাহমুদ বলেন, প্রায় এক বছর ধরে টিসিবির পণ্য কিনছেন তিনি। ছোট্ট একটি ঝাল নাশতার দোকান তাঁর। এ আয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুল–কলেজের বেতন দিয়ে সংসারে টান পড়ে। আগে ধস্তাধস্তি করে পণ্য নিতে হতো। এবার ২০ মিনিট অপেক্ষা করেই পণ্য পেয়েছেন। এগুলো দিয়ে এ মাসে কিছুটা খরচ বেঁচে যাবে তাঁর।
প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকার পর চট্টগ্রামে ট্রাকে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। গত রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিদিন নগরের ২৫টি আলাদা স্থানে ট্রাকে পণ্য বিক্রি করেছে সংস্থাটি। এর বাইরে নগরের ৪১ ওয়ার্ডে পরিবার কার্ডের মাধ্যমেও পণ্য বিক্রি চলছে।
আজ নগরের ৯টি ওয়ার্ডের ২৫টি স্থানে পণ্য বিক্রি করেছে টিসিবি। এর মধ্যে শুলকবহর, লালখান বাজার, বাগমনিরাম, উত্তর আগ্রাবাদ, পূর্ব মাদারবাড়ী, আন্দরকিল্লা, উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের তিনটি করে স্থানে এবং দেওয়ান বাজার ও বক্সিরহাট ওয়ার্ডের দুটি করে স্থানে পণ্য বিক্রি হয়েছে। পরিবেশকেরা জানিয়েছেন, কোনো স্থানে পণ্য না পেয়ে ক্রেতারা ফিরে যাননি। ফেরত যাওয়া ক্রেতার সংখ্যা সর্বোচ্চ পাঁচ।
টিসিবি সাধারণত দুইভাবে পণ্য বিক্রি করে থাকে। একটি সারা বছর ধরে চলে নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে। নগরের প্রায় তিন লাখ পরিবার এ সুবিধা পেয়ে থাকে। নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরে ২০টি স্থানে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু করে টিসিবি। সবশেষ গত কোরবানির ঈদে বন্ধ হওয়ার পর চলতি আগস্টে আবার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
মূলত যেসব গ্রাহকের কাছে পরিবার কার্ড নেই, তাঁরা সারি বেঁধে ট্রাক থেকে পণ্য সংগ্রহ করেন। পরিবার কার্ডধারীদের ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে নিরুৎসাহিত করা হয়। এ মাসের কার্যক্রমে ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে ট্রাকের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে পাঁচটি। এ ছাড়া প্রতি ট্রাকে বরাদ্দও বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি ট্রাক থেকে এখন প্রতিদিন ৫০০ ক্রেতা পণ্য কিনতে পারবেন।
টিসিবি চট্টগ্রামের যুগ্ম পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, নগরে মোট পরিবেশকের সংখ্যা ১৫৯। প্রতিদিনই স্থান বদল করে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। যেসব ওয়ার্ডে জনসংখ্যা বেশি, সেখানে একাধিক ট্রাকে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এবার দামও কমানো হয়েছে, বরাদ্দও বেড়েছে। সুশৃঙ্খলভাবে পণ্য বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবির ট্রাকে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম থেকে তেল, ডাল ও চিনি কিনতে আগে একজন ক্রেতার খরচ হতো ৫২০ টাকা। মাঝখানে পবিত্র রমজানে খেজুর যোগ হওয়ায় সেটি ছিল ৫৮৮ টাকা। তবে এবারের কার্যক্রমে প্রতিটি পণ্যের দাম কমিয়েছে টিসিবি।
টিসিবি জানিয়েছে, টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি মসুর ডাল ও এক কেজি চিনি কিনতে পারবেন। টিসিবির ট্রাক সেল কার্যক্রমে এখন ভোজ্যতেল ২৫ টাকা কমে ১১৫ টাকা, ডাল ১০ টাকা কমে ৭০ টাকা ও চিনি ৫ টাকা কমে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ আগের তুলনায় খরচ কমেছে ৭০ টাকা। এখন একজন ক্রেতার ৪৫০ টাকা খরচ হবে। তবে পরিবেশকের দোকান থেকে পরিবার কার্ডের মাধ্যমে কেনা পণ্যের দাম একই থাকছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামে টিসিবি পরিবেশক সমিতির সভাপতি আবদুস ছবুর বলেন, বরাদ্দ বাড়ানোর কারণে পরিবেশক ও ক্রেতার লাভ হয়েছে। পরিবহন খরচের পর পরিবেশকদের হাতে কিছু লাভ থাকবে। অন্যদিকে আগে অনেক ক্রেতাকে খালি হাতে ফিরতে হতো। এখন সে সংখ্যাও কমেছে।