ইরানে ১২ দিনের ইসরায়েলি হামলায় ৯৩৫ জন নিহত হয়েছেন। বিচার বিভাগের বরাতে ইরানি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গতকাল সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সপ্তাহখানেকের মাথায় আনুষ্ঠানিকভাবে নিহতের এ সংখ্যা জানানো হলো।

ইরানের বিচার বিভাগের মুখপাত্র আসগর জাহাঙ্গীর রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইআরএনএকে (ইরনা) বলেন, ‘আমাদের দেশের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর ১২ দিনের যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৯৩৫ জন শহীদকে শনাক্ত করা হয়েছে।’ তাঁদের মধ্যে ১৩২ নারী ও ৩৮টি শিশুও রয়েছেন।

আসগর জাহাঙ্গীর আরও জানান, রাজধানী তেহরানে অবস্থিত এভিন কারাগারে গত ২৩ জুন ইসরায়েলের হামলায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৭৯–এ দাঁড়িয়েছে। কারাগারটিতে হামলায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বন্দী, পরিদর্শনে আসা আত্মীয়স্বজন ও প্রশাসনিক কর্মীরা রয়েছেন।

আরও পড়ুনইসরায়েলি হামলায় ইরানের শীর্ষস্থানীয় পরমাণুবিজ্ঞানীসহ পরিবারের ৭ সদস্য নিহত২৪ জুন ২০২৫

ইরানে ১৩ জুন হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। ১২ দিন ধরে চলা টানা হামলায় ইরানের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়। হামলা করা হয় ইরানজুড়ে সামরিক ঘাঁটি, পারমাণবিক আর জ্বালানি স্থাপনা, এমনকি আবাসিক এলাকাগুলোতেও।

ইরানের পক্ষ থেকেও ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানো হয়। তবে বেশি হামলা হয়েছে তেল আবিব শহর আর বন্দরনগরী হাইফা লক্ষ্য করে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ইরানি হামলায় দেশটিতে ২৮ জন নিহত হয়েছেন।

২৪ জুন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এতে মধ্যস্ততা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

আরও পড়ুনগোপনে ইরানে ঢুকে যেভাবে হামলা করেছিল ইসরায়েল২৭ জুন ২০২৫আরও পড়ুনএভিন কারাগারে ইসরায়েলের হামলায় নিহত মানুষের সংখ্যা ৭১: ইরান২০ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ১২ দ ন

এছাড়াও পড়ুন:

আইডিএলসির কার্যক্রম শুধু মুনাফার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়

আইডিএলসি ফাইন্যান্সের তিনটি প্রধান লক্ষ্য। এগুলো হলো পরিবেশের ওপর ব্যবসার নেতিবাচক প্রভাব কমানো, সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রবৃদ্ধি তথা উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি। এই লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের জন্য ২০২১ সালে আইডিএলসি পাঁচ বছর মেয়াদি একটি পথনকশা তৈরি করে। এতে ১০টি স্তম্ভ (মূল দিক) ও ৩০টি অঙ্গীকার রয়েছে। এই পথনকশা অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের অন্যতম শীর্ষ আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি। 

আইডিএলসির এই প্রচেষ্টার স্বীকৃতিও মিলেছে। নীতিনির্ধারণী সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিচারে দেশের পরিবেশ, সমাজ ও মানুষের প্রতি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে আইডিএলসি ফাইন্যান্স। আমরা সব সময় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিকে গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশ, সমাজ ও সুশাসনে (ইএসজি) ভালো উদাহরণ গড়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। 

টেকসই ও পরিবেশবান্ধব (গ্রিন) অর্থায়নেও ভালো করছে আইডিএলসি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুসারে প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের ন্যূনতম ২০ শতাংশ হতে হবে টেকসই অর্থায়ন খাতে। সেখানে ২০২৪ সালে আমাদের মোট ঋণের ৪৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ ছিল টেকসই অর্থায়নভিত্তিক। এ ছাড়া গত বছর পরিবেশবান্ধব খাতে আমাদের ঋণ ছিল ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এটিও বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ শতাংশের ন্যূনতম সীমার দ্বিগুণের বেশি। 

২০১৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক, এফএমও (নেদারল্যান্ডসভিত্তিক একটি উন্নয়নমূলক আর্থিক প্রতিষ্ঠান) এবং এফআই কনসাল্টের (পরামর্শক প্রতিষ্ঠান) সহায়তায় আইডিএলসি ফাইন্যান্স ‘গ্রিন ব্যাংকিং’ নীতিমালা ও ‘গ্রিন অফিস’ নীতিমালা চালু করে। এটি আমাদের পরিবেশবান্ধব ও দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক যাত্রায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এর মাধ্যমে আমরা শুধু আর্থিক সেবা প্রদানের ধরনে পরিবর্তন আনিনি; বরং পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্যকর অবদান রাখার প্রতিশ্রুতি জোরদার করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে গড়ে তোলা হয় সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ইউনিট (এসএফইউ)। এই ইউনিট পরিবেশ ও সামাজিক ঝুঁকি বিশ্লেষণ, কার্বন নিঃসরণ পরিমাপ, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে সাসটেইনেবিলিটি প্রতিবেদন প্রণয়ন এবং উদ্ভাবনী পরিবেশবান্ধব আর্থিক পণ্য উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ফলে আমাদের ব্যাংকিং কার্যক্রম শুধু মুনাফা অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা দেশের টেকসই উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখছে। 

আইডিএলসির নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমেও পরিবেশের প্রতি নিবেদিত আচরণের প্রভাব লক্ষ করা যায়। যেমন আমাদের বিভিন্ন কার্যালয়ে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী লাইট, স্বয়ংক্রিয় সেন্সরযুক্ত পানি ও বিদ্যুৎব্যবস্থা রয়েছে। 

বর্তমানে পরিবেশ, সমাজ ও সুশাসনের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে কাজ করে যাচ্ছে আইডিএলসি। এনজেডবিএর আওতায় ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে আমরা প্রতিবছর নিয়মিত স্কোপ ওয়ান ও স্কোপ টু নিঃসরণের মাত্রা পরিমাপ করছি। ২০২২ সালের নির্গমন তথ্যকে ভিত্তি ধরে খাদ্য, টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক, কৃষি, মোটরযান এবং বিদ্যুৎ—এই পাঁচ প্রধান খাতে ধাপে ধাপে নির্গমন কমানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছি। 

আমাদের বিভিন্ন করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রম এই প্রতিশ্রুতির প্রমাণ দেয়। যেমন চট্টগ্রাম মা ও শিশু ক্যানসার হাসপাতালে আইডিএলসির সহযোগিতায় ২০ শয্যার কেমোথেরাপি ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে এ পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি আর্থিকভাবে অসচ্ছল ক্যানসার রোগী চিকিৎসাসেবা পেয়েছেন। এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও স্থায়ী অবকাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কাজ করছে আইডিএলসি। এভাবে টেকসই উন্নয়নের পথে দায়িত্বশীল অর্থায়ন ও সামাজিক দায়িত্বের দারুণ সব গল্প লিখে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আইডিএলসি।

আসিফ সাদ বিন শামস
অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স 

সম্পর্কিত নিবন্ধ