গাজায় ইসরায়েলের চালমান গণহত্যায় মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজনের মতো কোম্পানির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সেসকা আলবানিজ। এক প্রতিবেদনে তিনি ৬০টিরও বেশি কোম্পানির নাম উল্লেখ করেন, যার মধ্যে অস্ত্র প্রস্তুতকারক ও প্রযুক্তি কোম্পানিও রয়েছে। এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক কর্মকাণ্ডে সহায়তার  অভিযোগ রয়েছে। আলবানিজ গাজায় আগ্রাসনকে ‘গণহত্যা অভিযান’ বলে বর্ণনা করেন।

ইতালির মানবাধিকার আইনজীবী আলবানিজ অধিকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চলবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত। তিনি বিভিন্ন দেশ, মানবাধিকার সংস্থা, কোম্পানি ও শিক্ষাবিদদের ২০০টিরও বেশি খসড়া তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করেন। গত সোমবার রাতে প্রকাশিত ২৭ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে কোম্পানিগুলোকে ইসরায়েলের সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করা ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে জড়িত নির্বাহীদের জবাবদিহির আহ্বান জানানো হয়েছে। 

প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে গতকাল বুধবার দ্য নিউ আরব অনলাইন জানায়, যখন গাজায় জীবন ধ্বংস হচ্ছে বা পশ্চিমতীরে নিপীড়ন বাড়ছে, তখন এ প্রতিবেদন দেখায়– কেন ইসরায়েলের গণহত্যা অব্যাহত আছে। এর কারণ, এটি অনেকের জন্য লাভজনক। ফ্রান্সেসকা আলবানিজ লিখেছেন, তিনি করপোরেট সংস্থাগুলোকে ‘ইসরায়েলের বর্ণবাদ ও সামরিকবাদের সঙ্গে আর্থিকভাবে আবদ্ধ’ বলে অভিযুক্ত করেছেন। 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রযুক্তি মহারথি অ্যালফাবেট (গুগলের মূল কোম্পানি), অ্যামাজন, মাইক্রোসফট ও আইবিএম গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর ক্ষেত্রে ইসরায়েলের হয়ে নজরদারিতে মূল ভূমিকা পালন করছে। ইসরায়েলকে সহায়তাকারীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিন ও লিওনার্দোর মতো অস্ত্র প্রস্তুতকারী কোম্পানি রয়েছে। তাদের দেওয়া অস্ত্র গাজায় ব্যবহৃত হয়েছে। তালিকায় ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী ক্যাটারপিলার ও হুন্দাইয়ের নামও আছে। এ কোম্পানিগুলোর সরঞ্জাম ফিলিস্তিনিদের সম্পত্তি ধ্বংসে ভূমিকা রাখছে। 

লকহিড মার্টিনের এক মুখপাত্র বলেন, ‘বিদেশি সামরিক বিক্রয়ের বিষয়টি সরকার থেকে সরকার লেনদেন। এ বিক্রয় সম্পর্কে আলোচনার সমাধান মার্কিন সরকারই সবচেয়ে ভালোভাবে করতে পারে।’ অন্য কোম্পানিগুলো এ নিয়ে রয়টার্সকে কিছু বলেনি। জেনেভায় ইসরায়েলের মিশন বলছে, আলবানিজের প্রতিবেদনটি ‘আইনত ভিত্তিহীন, মানহানিকর ও তার অফিসের স্পষ্ট অপব্যবহার।’ আর যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে আলবানিজের নিন্দা জানাতে ও তাঁকে অপসারণের আহ্বান জানাতে বলেছে। তারা আরও বলেছে, এখন পর্যন্ত এ ধরনের পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে আলবানিজ বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে অর্থনৈতিক যুদ্ধের প্রচারণা চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন।

যুদ্ধবিরতিতে সম্মত ইসরায়েল

শর্তের বিনিময়ে গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েল সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানান, গাজায় যুদ্ধবিরতি চূড়ান্ত করার জন্য ইসরায়েল প্রয়োজনীয় শর্তাবলি মেনে নিয়েছে। ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির সময় যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ শেষ করার জন্য সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করবে। 

গতকাল বুধবার বিবিসি জানায়, যুদ্ধবিরতির শর্ত সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে জিম্মি মুক্তি অন্যতম শর্ত হিসেবে থাকতে পারে।

গাজায় যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে বড় বাধা ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি। ইসরায়েল গাজাকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেই যুদ্ধবিরতি চাইছে। আর হামাস বলছে, যুদ্ধ বন্ধের পাশাপাশি সব সেনা সরিয়ে নিতে হবে। ট্রাম্প লিখেছেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তার জন্য কঠোর পরিশ্রম করা কাতার ও মিসরীয়রা এ চূড়ান্ত প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন করবে। আশা করি, হামাস চুক্তিটি গ্রহণ করবে। না করলে পরিস্থিতি ভালো হবে না; ক্রমাগত খারাপের দিকে যাবে।

ইসরায়েল চুক্তির শর্তাবলিতে সম্মত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেনি। আর হামাসের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, যুদ্ধ শেষ হলে তারা একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে ‘প্রস্তুত’। হামাস কর্মকর্তা তাহের আল-নুনু বলেন, যদি যুদ্ধ শেষ করার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্টভাবে পূরণ করা হয়, অথবা যদি তা সম্পূর্ণরূপে শেষের দিকে নিয়ে যায়, তাহলে হামাস যে কোনো প্রস্তাবে সম্মত হতে প্রস্তুত। গাজায় এখনও ৫০ জনেরও বেশি জিম্মি আছেন, যাদের ২০ জনেরও মতো জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে।  

অনাহারকে পেছনে ঠেলে দেওয়ার সুযোগ বন্ধ হতে যাচ্ছে: ডব্লিউএফপি 

ইসরায়েলের অব্যাহত অবরোধের মুখে গাজায় অনাহারকে পেছনে ঠেলে দেওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। সংস্থাটির আঞ্চলিক পরিচালক সামের আব্দেল জাবের বলেন, উপত্যকার খাদ্য সংকটকে দূর করতে তাদের তিনটি বিষয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। প্রথমত, বিভিন্ন পয়েন্ট ও পথ দিয়ে সব পরিবারের কাছে খাদ্য পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে তাদের কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। তৃতীয়ত, অন্য যে কোনো কিছুর চেয়ে যেটা বেশি প্রয়োজন, তা হলো– টেকসই যুদ্ধবিরতি।

চার সপ্তাহে ত্রাণ নিয়ে নিহত ৬ শতাধিক   

গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে গত পাঁচ সপ্তাহে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর ‍গুলিতে ৬ শতাধিক নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ত্রাণ সরবরাহ কেন্দ্র কথিত হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনে গিয়ে তারা গুলিবিদ্ধ হন। জাতিসংঘ এসব ত্রাণকেন্দ্রকে ‘মরণফাঁদ’ বলে বর্ণনা করেছে। আলজাজিরা জানায়, গতকাল বুধবার এক দিনে গাজায় আরও ৪৩ জন নিহত হয়েছেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ইসর য় ল র প রস ত ত আলব ন জ গণহত য র জন য ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েল ‘জলদস্যুর কাজ’ করেছে: এরদোয়ান

ইসরায়েলের গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী নৌযান আটককে ‘জলদস্যুর কাজ’ আখ্যায়িত করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। নিজের দল একে পার্টির এক সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক জলসীমায় এ ধরনের পদক্ষেপ প্রমাণ করে, এই গণহত্যাকারীরা গাজায় নিজেদের অপরাধ ঢাকতে পাগল হয়ে গেছে।

এরদোয়ান আরও বলেন, ‘গণহত্যাকারী (ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন) নেতানিয়াহু সরকার শান্তির ন্যূনতম সুযোগ আসুক, সেটাও সহ্য করতে পারে না। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আবারও বিশ্ববাসীর সামনে গাজায় নির্মমতা ও ইসরায়েলের খুনি চেহারা তুলে ধরেছে। আমরা আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের ছেড়ে যাব না। যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত এবং শান্তি ফিরিয়ে আনতে আমরা আমাদের সব ক্ষমতা দিয়ে কাজ করে যাব।’

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা ইসরায়েলের নৌ অবরোধ ভেঙে সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার একটি বৈশ্বিক প্রচেষ্টা। এই নৌবহরে ৪০টির বেশি বেসামরিক নৌযান অংশ নেয়। এ বহরে প্রায় ৪৪টি দেশের ৫০০ মানুষ যোগ দেন। তাঁদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়ামসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিক আছেন।

গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে ছেড়ে আসা এই নৌবহর বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে গাজার কাছাকাছি এলাকায় পৌঁছায়। ২০০৭ সাল থেকে ভূমধ্যসাগরের ওই জলসীমা অবরোধ করে রেখেছে ইসরায়েল। গতকাল মাধ্যরাতে নৌবহরের জাহাজে জাহাজে উঠে ত্রাণ নিয়ে গাজার উদ্দেশে যাত্রা করা অধিকারকর্মীদের আটক করে নিজেদের দেশের বন্দরে নিয়ে গেছে ইসরায়েলি সেনারা।

আরও পড়ুনগ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি বাদে সব নৌযান আটক করেছে ইসরায়েল৩ ঘণ্টা আগে

ইতিমধ্যে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি বাদে বাকি সব জাহাজ আটক করার কথা জানিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করা বা আইনসম্মত নৌ অবরোধ লঙ্ঘন করার চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে।’

আরও পড়ুনসুমুদ ফ্লোটিলার ২৪ জাহাজ এগিয়ে যাচ্ছে, একটি গাজার জলসীমায়: দেখুন লাইভ ট্র্যাকারে৮ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফ্লোটিলার কর্মীদের আটক করা ইসরায়েলি আগ্রাসনের নগ্ন রূপ: গণসংহতি আন্দোলন
  • ফ্লোটিলায় কেমন আছেন শহিদুল আলম?
  • ইসরায়েল ‘জলদস্যুর কাজ’ করেছে: এরদোয়ান
  • গাজাবাসীর সঙ্গে ৮ মুসলিম দেশের কেন এই বড় বিশ্বাসঘাতকতা
  • সুমুদ ফ্লোটিলার ‌‘মাত্র চারটি নৌকা’ এখন গাজার পথে
  • ধাওয়া, গ্রেপ্তার সত্ত্বেও গাজা অভিমুখী যাত্রায় ‘অবিচল’ ফ্লোটিলা
  • গ্রেটা টুনবার্গসহ গাজা ফ্লোটিরার ২০০ জনকে আটক করেছে ইসরায়েল
  • ট্রাম্প যেভাবে রোহিঙ্গা গণহত্যায় হাওয়া দিচ্ছেন