‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’- সেই কবে এই অসাধারণ কবিতা লিখেছিলেন কবি হেলাল হাফিজ। আজও অক্ষয় শাণিত এই বাণী। কিন্তু প্রতিবাদ, লড়াই, আন্দোলনে যোগ দেওয়ার সুযোগ তরুণেরা পেলেও যুদ্ধযাত্রার দেখা মেলা বিরল। আর সেই যুদ্ধ যদি হয় বহিঃশত্রূ দীর্ঘ শোষণ-নিপীড়ন আর ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যার বিপরীতে, এমন সুযোগ হয়তো একবারই আসে তরুণ প্রজন্মের জীবনে। যারা সময়ের সেই ডাকে সাড়া দিতে পারেন, তাদের ত্যাগ, সংগ্রাম, উপলব্ধি এবং অভিজ্ঞতা অনন্য।

দীর্ঘ পাঁচ দশক আগে এই জনপদে এ রকম গাঢ় কৃষ্ণ প্রহর ফুঁড়ে রচিত হয়েছিল বীরত্বের এক নয়া ইতিহাস। এর কেন্দ্রে যারা ছিলেন তারা আর কেউ নন এ দেশেরই মুক্তিকামী সাধারণ জনতা, যাদের নিরন্তর লড়াই ও অকুণ্ঠ সমর্থনে বিজয়ের সূর্যালোক ছুঁয়েছিল বিপর্যস্ত বাংলার মুখ। এই যোদ্ধাদের সিংহভাগই ছিলেন টগবগে তরুণ, সময়ের প্রয়োজনে যারা যুক্ত হয়েছিলেন দেশমাতৃকার লড়াইয়ে, সার্থক করেছিলেন কবির ভাষ্য। তবে সময়ের পরিক্রমায় কমে আসছে তাদের সংখ্যা। যারা বেঁচে আছেন তাদের জবানিতে মুক্তিযুদ্ধের বয়ান তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ এ কারণেও যে এই ইতিহাস মুছে ফেলা, বিকৃত করা বা খণ্ডিতকরণের প্রচেষ্টা বরাবরই জারি আছে বাংলাদেশে।

আশার দিক হচ্ছে, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের মতো অনেকেই লিপিবদ্ধ করে গেছেন সেই গৌরবগাঁথা, সমৃদ্ধ করেছেন আমাদের লড়াকু ইতিহাসের আখ্যান। তবে ১৯৭১ সালের নির্বিচার গণহত্যা এবং এর বিপরীতে মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধের যে ব্যাপ্তি এবং গুরুত্ব, ইংরেজি ভাষ্যে তার বিবরণ খুব একটা বেশি নয়। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক চর্চার আলোকে সৃষ্ট ধোঁয়াশা এবং নতুন বিশ্ব বাস্তবতায় চলমান অস্থিরতা ও যুদ্ধ-সংঘাতের প্রেক্ষাপটে ইতিহাসের এই অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিবরণ বিশ্ববাসীর কাছে হাজির করা তাই প্রাসঙ্গিক এবং জরুরি এক উদ্যোগ। বিশেষ করে, উত্তর প্রজন্ম যেন সঠিক ইতিহাসের আলোকে বর্তমানকে অনুধাবন করে ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা পায়, এদিক থেকে এর গুরুত্ব অপরিসীম। জাপান প্রবাসী লেখক এবং একাত্তরের গেরিলা যোদ্ধা মনজুরুল হক চলতি বছরের শুরুতে তার সর্বসাম্প্রতিক গ্রন্থ ‘আ টাইম টু ড্রিম অ্যান্ড আ টাইম অব ডিসপেয়ার’-এ সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজটিই করেছেন।

এটি অবশ্য লেখকের ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে কসমস বুকস প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর ঘটনাপ্রবাহ বা প্রেক্ষাপট নির্ভর বই ‘আ স্টোরি অব মাই টাইম’ এর ধারাবাহিকতায় লেখা দ্বিতীয় গ্রন্থ। পূর্বেকার বইটিতে মূলত তিনটি সমান্তরাল ধারায় বিবৃত হয় ইতিহাসের বয়ান। এতে তাঁর নিজের বেড়ে ওঠার পাশাপাশি ১৯৫০-৬০ এর দশকে মফস্বলের আবহ থেকে ঢাকার একটি পরিপূর্ণ শহর হয়ে ওঠার গল্প এবং সেই সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের ক্রমশ চূড়ান্ত এক পরিণতির দিকে এগোনোর চিত্র অপ্রথাগত আদলে তুলে ধরেন লেখক। আর সেই বইয়ে তাঁর কলম থেমে যায় ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চে।

মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা মনজুরুল হকের বই ‘আ স্টোরি অব মাই টাইম’। ১৮ জুলাই টোকিওতে বিদেশি সাংবাদিকদের ক্লাব ফরেন করেসপনডেন্ট ক্লাব অফ জাপান-এ অনুষ্ঠিত হয়েছে বইটির পরিচিতিমূলক আয়োজন.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের ‘কঠোরতম ভাষায়’ নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব
  • যারা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ চায়, তারা আদালতে অভিযোগ দিতে পারে: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • শিবিরের এই সাফল্য জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতকে সুবিধা দেবে কি?
  • গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
  • ‘গাজায় গণহত্যা চলছে, আমি সেই গণহত্যার নিন্দা করছি’