ইসরায়েলের নির্মম অবরোধের কারণে গাজার খাদ্য পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। উপত্যকার প্রায় এক লাখ শিশু আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মারা যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস ইসরায়েলের তৈরি করা ‘নজিরবিহীন ও আসন্ন মানবিক বিপর্যয ‘ সম্পর্কে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ৪০ হাজার নবজাতকসহ দুই বছর বা তার কম বয়সী এক লাখ শিশু কয়েক দিনের মধ্যেই মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে।
এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি ‘শিশুর দুধ এবং পুষ্টিকর সম্পূরকগুলোর সম্পূর্ণ অভাব, সীমান্ত চৌকিগুলো অব্যাহতভাবে বন্ধ করে দেওয়া এবং সহজতম মৌলিক সরবরাহের প্রবেশে বাধা দেওয়ার’ ঘটতে যাচ্ছে।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলেছে, “আমরা ইসরায়েলি দখলদারিত্বের তৈরি করা অনাহার এবং নির্মূল নীতির ফলে যেসব শিশুর মা কয়েকদিন ধরে তাদের দুধের পরিবর্তে পানি খাওয়াচ্ছেন তারার ধীরে ধীরে একটি প্রত্যাশিত ও ইচ্ছাকৃত গণহত্যার মুখোমুখি হচ্ছেন।”
শনিবার আল-আহলি হাসপাতালের একটি সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, গাজায় অপুষ্টিতে মারা যাওয়ার সর্বশেষ শিকার হলো সাত দিনের একটি শিশু। দুধের অভাবে শিশুটি মারা গেছে। এর কয়েক ঘণ্টা আগে তীব্র খাদ্য ঘাটতির মধ্যে জয়নব আবু হালিব নামে আরেকটি শিশু অপুষ্টিতে মারা গেছে।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ১২০ জনেরও বেশি মানুষ অপুষ্টিতে মারা গেছে। এদের মধ্যে ৮০ জনেরও বেশি শিশু।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)