মিথ্যা ইতিহাসের ওপর জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে: গণ অধিকার পরিষদ
Published: 6th, August 2025 GMT
মিথ্যা ইতিহাসের ওপর জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার পর জুলাই ঘোষণাপত্র ও নির্বাচনের পথনকশার (রোডম্যাপ) প্রতিক্রিয়া জানাতে দলটির আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তা জানানো হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে রাশেদ খান বলেন, ‘২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয় ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে বাতিল হওয়া কোটার অংশবিশেষ (৩০ শতাংশ) হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে ফিরে না এলে নতুনভাবে আন্দোলনের সূচনা হতো না। এখানে দুর্নীতি প্রতিরোধ বা অন্য কোনো দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়নি। অর্থাৎ গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট কোটা সংস্কার আন্দোলন। কিন্তু এই আন্দোলনের ইতিহাস বাদ দিয়ে মিথ্যা ইতিহাসের ওপর জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে।’
রাশেদ খান বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমরা মনে করি, গণ অধিকার পরিষদ ও ছাত্র অধিকার পরিষদের ২০১৮ থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিক লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস বাদ দিতে পরিকল্পিতভাবে জুলাই ঘোষণাপত্রে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। ইতিহাস বিকৃতি বড় ধরনের অপরাধ। জুলাই ঘোষণাপত্রের এই ইতিহাস আগামী প্রজন্মকে মিথ্যা শেখাবে। ঠিক ৭১ নিয়ে যেভাবে আমাদের মিথ্যা শেখানো হয়েছে। তাহলে আওয়ামী লীগের তৈরি ইতিহাস ও অন্তর্বর্তী সরকারের তৈরি ইতিহাসের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?’
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র থেকে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ড, নরেন্দ্র মোদির আগমনবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড, পরিকল্পিত বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন সেনা অফিসারের হত্যাকাণ্ড, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি স্থান পায়নি। এসব ঘটনা এ প্রজন্মের মস্তিষ্ক ও মনস্তত্ত্বে বিপ্লবের বীজ বপন করে ও তারুণ্যকে বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করেছে। কিন্তু কেন ও কোন উদ্দেশ্যে তারুণ্যের এই সংগ্রামকে জুলাই ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হলো না?’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গতকালের ভাষণে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন উল্লেখ করে রাশেদ খান বলেন, ‘এতে ১/১১ সৃষ্টির ধোঁয়াশা কেটে গেছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকও বক্তব্য দেন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান, উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, সরকার নূরে এরশাদ সিদ্দিকী প্রমুখ।
আরও পড়ুনঅংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ও স্বীকৃতি ছাড়া জুলাই ঘোষণাপত্র প্রত্যাখ্যান করবে গণ অধিকার পরিষদ০৩ আগস্ট ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হত য ক ণ ড
এছাড়াও পড়ুন:
পাবিপ্রবি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ২৮ নেতাকর্মী বহিষ্কার
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ২৮ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বুধবার (৬ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, গত ২৬ জুলাই অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩তম রিজেন্ট বোর্ডে এ সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে ২১ নাম্বার আলোচ্যসূচিতে এটি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
আরো পড়ুন:
জাবিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হামলাকারী ১৮৯ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর শাস্তি
টাঙ্গাইলে চাঁদাবাজির অভিযোগে বিএনপির ৩ নেতা বহিষ্কার
বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের জন্য চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ২৪ মে পর্যন্ত তদন্ত কমিটি শিক্ষার্থীদের থেকে অভিযোগগুলো সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে গঠিত কমিটি তদন্ত শেষ করে এর রিপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দেয়।
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটির কাছে অন্তত ৩৫ জনের বিরুদ্ধে নয়টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে ছয়টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, দুইটি অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি এবং একটি অভিযোগ অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত নিজেদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়।
রিজেন্ট বোর্ডে চার ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে, ১১ জনের আজীবনের জন্য সনদ বাতিল, সাতজনের ৩ বছরের জন্য সনদ স্থগিত, ছয়জনের আজীবন বহিষ্কার এবং চারজনের ৩ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
আজীবনের জন্য সনদ বাতিল হয়েছে- লিংকন হোসেন (বাংলা বিভাগ, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ), মো. নুরুল্লাহ (ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ), মাসুদ রানা সরকার (গণিত বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), হামিদুর রহমান শামীম (পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), ইকরামুল ইসলাম (বাংলা বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), মিনহাজুল ইসলাম প্রান্ত (সমাজকর্ম বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), রাসেল হোসেন রিয়াদ (বাংলা বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), বিল্লাল হোসেন (অর্থনীতি বিভাগ, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ), সুরুজ মিয়া আপেল (গণিত বিভাগ, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ), শেহজাদ হাসান (ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) এবং শিবু দাসের (লোক প্রশাসন বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ)।
৩ বছরের জন্য সনদ স্থগিত হয়েছে- শাহেদ জামিন হিরা (পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), নাজমুল ইসলাম আবীর (গণিত বিভাগ, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ), সাব্বির হোসেন সবুজ (বাংলা বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), শেখ রাসেল (লোক প্রশাসন বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), সোহানুর রহমান সোহান (ইংরেজি বিভাগ, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ), জহরুল ইসলাম পিয়াস (অর্থনীতি বিভাগ, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) ও জাহির রায়হানের (বাংলা বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ)।
এছাড়া আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে- ফরিদুল ইসলাম বাবু (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ), নাইমুর নাহিদ ইমন (ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ), আশিক আরমান শোভন (স্থাপত্য বিভাগ, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ), তৌফিক হাসান হৃদয় (ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ), অয়ন আলমাস (বাংলা বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) ও তানশু দাসের (ইতিহাস বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ)।
৩ বছরের জন্য বহিষ্কার হয়েছে- আশরাফুল ইসলাম (গণিত বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ), আকাশ ভূঁইয়া (পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ), অনিক পোদ্দার (ইতিহাস বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) ও শাহ আলমের (ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ)। শাস্তি পাওয়া সবাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম বলেন, “যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে। তদন্ত কমিটি অত্যন্ত পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। যেসব ২৮ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাদের প্রত্যেককে আত্মপক্ষ সমর্থনের যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।”
তিনি বলেন, “এ বিষয়ে বারবার নোটিশ পাঠানো হয়েছে তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে। তবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখানে কারো প্রতি অবিচার করা হয়নি।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী