বিগত সরকারের আমলে হওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাসীনদের বিষয়ে গুরুত্ব দিলেও শ্রমিকদের মামলার কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ২০ হাজারের বেশি মামলা আছে। সেটার ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয়নি। কিন্তু যাঁরা ক্ষমতাবান, তাঁদের ব্যাপারে অগ্রগতি হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা খুব দ্রুত প্রত্যাহার হয়েছে, সমাধান হয়েছে। এ রকম যাঁরা ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত আছেন, তাঁদেরটাও হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে কম হয়েছে শ্রমিকদের বিষয়ে।’

আজ শনিবার সকালে রাজধানীর বিজয়নগরে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর: দায়িত্ব ও ভূমিকা পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক সভায় আনু মুহাম্মদ এ কথাগুলো বলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। এতে সভাপতিত্ব করেন আনু মুহাম্মদ।

সভায় গুম, ক্রসফায়ার ও বিচারহীনতার প্রসঙ্গে আনু মুহাম্মদ বলেন, গুম প্রতিরোধ কমিশন হলেও ক্রসফায়ার নিয়ে কোনো তদন্ত বা কমিশন হয়নি। এ ছাড়া মব সন্ত্রাস, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, ধর্মীয় ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা ভাঙচুরের ঘটনায়ও সন্তোষজনক অগ্রগতি নেই। কোনো কোনো সরকারি উপদেষ্টা এগুলোকে যৌক্তিকতা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকে এটাকে প্রেশার গ্রুপ বলেছেন। এটা তো কাণ্ডজ্ঞানের বিষয় যে মব সন্ত্রাস এবং প্রেশার গ্রুপ এক কথা নয়।

সভায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং নজরদারি কার্যক্রমে পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যে নজরদারি প্রযুক্তি ইসরায়েলের কাছ থেকে কেনা হয়েছিল, সেই নজরদারি ব্যবস্থায় সংস্কারের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

সভায় ৭৪-এর বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিলের দাবি জানান আনু মুহাম্মদ। অর্থনৈতিক খাত সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে—রিজার্ভ ও রেমিট্যান্সে উন্নতি হয়েছে, ব্যাংকিং খাতে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে খেলাপি ঋণ উদ্ধার বা পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের ভূমিকা পর্যালোচনা করেন লেখক ও গবেষক কল্লোল মোস্তফা। জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার, মামলা–বাণিজ্য, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনীতির গতি নিয়ে পর্যালোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনীতির গতি মন্থর হয়েছে। জনপ্রশাসন সংস্কারের বেশির ভাগ সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি। আমলাতন্ত্র জনবান্ধব হয়নি বরং সরকার আমলাতন্ত্রবান্ধব হয়েছে।

সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান, স্থপতি ফারহানা শারমিন ইমু প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ সরক র র ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্গাপূজার নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন

আজ মহালয়া। সনাতন ধর্মের ভাষ্যমতে, দিনটি পিতৃপক্ষের সমাপ্তি এবং দেবীপক্ষের সূচনার প্রতীক। মহালয়ায় হিন্দু সম্প্রদায় তাঁদের পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করেন, তাঁদের শান্তি কামনা করেন এবং একই সঙ্গে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান জানান।

মহালয়াকে কেবল আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান নয়; বরং সনাতনী সমাজের সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং সামাজিক সংহতির এক গভীর প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। ভোরের আলো আর শিশিরসিক্ত প্রভাতে এ মহালয়ার আচার আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রত্যেক প্রজন্মকে অতীতের শিক্ষার আলো ধরে সমাজের নৈতিক ও সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।

বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা প্রতিবছরের মতো এবারও ভক্তি, সংস্কৃতি ও সামাজিক সম্প্রীতির মিলনক্ষেত্র হিসেবে উদ্‌যাপিত হবে। এ উৎসবের মর্যাদা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্র, সম্প্রদায় ও নাগরিক সমাজের সম্মিলিত দায়িত্ব।

দুঃখজনক হলেও সত্য, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অশুভ চক্র সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে প্রতিমা ভাঙচুরের মাধ্যমে অনৈতিক প্ররোচনা সৃষ্টি করছে। গত কয়েক দিনে কুষ্টিয়া, গাজীপুরসহ কয়েকটি জায়গায় প্রতিমা ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে, যেটি উদ্বেগজনক। এ কর্মকাণ্ড শুধু ধর্মীয় অনুভূতিকে আহত করে না; বরং সমাজের নৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংহতিতেও ক্ষতি করে। আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশের ৫টি জেলাকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ও ২৪টি জেলাকে মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ‘সম্প্রীতি যাত্রা’ নামের একটি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম। তাই দুর্গাপূজায় নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়াই অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তৎপরতা এ প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে প্রশংসনীয়। কমিশনারের নেতৃত্বে ডিএমপি ইতিমধ্যে ২৫৮টি মণ্ডপে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে। এতে অন্তর্ভুক্ত আছে মণ্ডপভিত্তিক পাহারা, পৃথক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, প্রতিমা বিসর্জনের দিন সার্বিক তৎপরতা, সিসিটিভি স্থাপন, অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রতিরোধে নজরদারি। এটি প্রমাণ করে, সামাজিক ন্যায় ও আইনশৃঙ্খলার অটল ভিত্তি রক্ষায় রাষ্ট্র সচেতন ও সংবেদনশীল ভূমিকা গ্রহণ করছে।

একইভাবে সারা দেশে প্রায় ৩০ হাজার মণ্ডপে নিরাপত্তার আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিটি মণ্ডপে পর্যাপ্ত পুলিশি পাহারা, সিসিটিভি নজরদারি, অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা, জরুরি সেবা সংযোগ ও দর্শনার্থীদের সুশৃঙ্খল চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। তবে সরকারের একক তৎপরতা যথেষ্ট নয়, স্থানীয় কমিউনিটি, পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ এবং সাধারণ নাগরিকদের সচেতন অংশগ্রহণ সমানভাবে অপরিহার্য। প্রতিটি মণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার সমন্বিত কার্যক্রম এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।

দার্শনিকভাবে ভাবলে দুর্গাপূজা কেবল দেবীর আরাধনা নয়, এটি মানবসমাজের নৈতিক সংহতি ও সাম্প্রদায়িক ঐক্যের এক জীবন্ত প্রতীক। প্রতিমা ভাঙচুর বা অশুভ প্ররোচনার বিরুদ্ধে সক্রিয় তৎপরতা মানে কেবল আইন রক্ষা নয়; বরং সমাজের নৈতিক ক্ষেত্রও রক্ষা করা। নাগরিকের সচেতনতা ও রাষ্ট্রের সংহত তত্ত্বাবধানের সমন্বয় নিশ্চিত করলে উৎসবের মর্যাদা ও সামাজিক সম্প্রীতি অটুট থাকবে।

আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজার প্রেক্ষাপটে আমাদের প্রত্যেকের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব সুস্পষ্ট। সেটি হলো কেউ যেন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পবিত্রতা বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সূক্ষ্ম সূত্রকে বিপন্ন করতে না পারে। রাষ্ট্রের নীতি ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত কার্যক্রম যদি জনগণের সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার সঙ্গে মিলিত হয়, তবেই আমরা দেখতে পাব উৎসবমুখর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাপূজার চিত্র। তখন এটি কেবল ধর্মীয় উৎসবের মহিমা বহন করবে না; বরং মানবসমাজের নৈতিক সংহতি, সাংস্কৃতিক ঐক্য ও সামাজিক সুষমতার স্থায়ী প্রতীক হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • না.গঞ্জ সদরে ৭৭ পূজামণ্ডপ নিরাপত্তার দায়িত্বে ৫১০ আনসার ভিডিপি সদস্য
  • দুর্গাপূজার নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন