রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আজ সোমবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত সময়ের আগের ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী পয়েন্টে ১৯ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। এতে নদীর তীরবর্তী বস্তি এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। নগরের বাজে কাজলা এলাকায় প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত আলোর পাঠশালার মাঠটি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী পয়েন্টে গতকাল রোববার সকাল ছয়টায় পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ১৩ মিটার। আজ সকাল ছয়টায় পানি বেড়ে হয়েছে ১৭ দশমিক ৩২ মিটার। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে পানির উচ্চতা বেড়েছে ১৯ সেন্টিমিটার। রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানির বিপৎসীমা ১৮ দশমিক শূন্য ৫ মিটার।

গত ২৪ জুলাই রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বেড়ে হয়েছিল ১৬ দশমিক ৩৫ মিটার। তারপর আবার তা কমতে থাকে। আবার ৩১ জুলাই থেকে পানি বাড়তে থাকে। ৭ জুলাই ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছিল ২৪ সেন্টিমিটার। তার পর থেকে পানি বাড়া অব্যাহত আছে।
রাজশাহীর আলোর পাঠশালার মাঠটি পদ্মা নদী লাগোয়া। গতকালও এই মাঠ শুকনা ছিল। কিন্তু আজ সকালে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে গিয়ে মাঠে পানি দেখতে পান। প্রধান শিক্ষক রেজিনা খাতুন বলেন, গত পাঁচ দিন আগে নদীর পানি মাঠের অনেক নিচে ছিল। প্রতিদিন বাড়তে বাড়তে তা মাঠে এসে ঠেকেছে। পুরো মাঠটি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।

আজ সকালে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পার্শ্ববর্তী তালাইমারী, বাজে কাজলা ও পঞ্চবটি এলাকার শিক্ষার্থীরা পানির মাড়িয়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। আলোর পাঠশালার নবম শ্রেণি শিক্ষার্থী চাঁদনী খাতুন জানায়, তাদের বাড়ি পদ্মার তীরে বাজে কাজলা এলাকায়। তাদের ঘরে পানি ঢুকেছে।

সুরাইয়া খাতুন নামের আরেক শিক্ষার্থীর বাড়ি পদ্মা তীরবর্তী চর খিদিরপুর গ্রামে। মুঠোফোনে সে জানায়, তাদের এখনো ঘরবাড়িতে পানি ওঠেনি, তবে গ্রামে পানি ঢুকেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নদ র প ন এল ক য় দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

‘বিষ খাওয়াইয়া হাঁসগুলা মারিয়া আমারে পথে বসাই দিল’

সবে সকাল হয়েছে। বাড়ির পাশের জলমগ্ন জমিতে এদিক-ওদিকে ভাসছিল মৃত হাঁস। খামারি চেরাগ আলী ও তাঁর স্বজনেরা পানিতে নেমে সেই মৃত হাঁসগুলো তুলে জমির আলে জমা করছিলেন। একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন চেরাগ আলী। তিনি বলেন, ‘এই হাঁসগুলাই আমার সম্বল আছিল। কত যত্ন করি এইগুলারে পালছি। বিষ খাওয়াইয়া হাঁসগুলা মারিয়া আমারে পথে বসাই দিল। আমি নিঃস্ব হই গেলাম।’ তাঁর কান্নায় পাশে থাকা কয়েকজন প্রতিবেশীরও চোখ ভিজে ওঠে।

চেরাগ আলীর (৬৫) বাড়ি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে। প্রায় ১৪ বছর ধরে তিনি হাঁস পালন করছেন। তাঁর খামারে দেশি প্রজাতির ৫০০ হাঁস ছিল—কিছু ডিম দিত আর কিছু অচিরেই ডিম পাড়া শুরু করার কথা ছিল। জলমগ্ন জমিতে খাবার খেতে নেমে গতকাল মারা গেছে ৩৩৫টি হাঁস।

আজ শুক্রবার সকালে গোবিন্দপুরে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের পাশে নিচু কয়েকটি জমিতে পানি আটকানো আছে। স্থানীয়ভাবে জলমগ্ন সেই স্থান ‘গোবিন্দপুরের জাওর’ নামে পরিচিত।

চেরাগ আলী জানান, প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার সকালে তিনি হাঁসগুলো ওই স্থানে ছেড়ে বোরো ধানের বীজতলা তৈরির কাজে দূরের জমিতে চলে যান। বিকেলে এসে দেখেন, অনেক হাঁস মৃত অবস্থায় ভাসছে। জমির আলে ছড়ানো-ছিটানো ধান দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। দ্রুত জীবিত হাঁসগুলো বাড়িতে নিয়ে আসেন। আলো কমে যাওয়ায় মৃতগুলো তুলতে পারেননি। বাড়িতে নেওয়ার পর আরও চার-পাঁচটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তিনি জানান, তেঁতুলের রস খাইয়ে সেগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। তাঁর ধারণা, জলমগ্ন স্থানের আশপাশে ছড়ানো বিষ মেশানো ধান খেয়েই হাঁসগুলো মারা গেছে।

চেরাগ আলী আরও বলেন, ‘প্রায় ১৪ বছর ধরি হাঁস পালি। ডিম বেচিয়া সংসার চালাই। পাঁচ মাস আগে কিশোরগঞ্জ থাকি ৪০০ বাচ্চা কিনি আনি বড় করি তুলছিলাম। কিছুদিন পরেই এইগুলা ডিম পাড়া শুরু করি দিত। সব মরিয়া শেষ হই গেল।’

চেরাগ আলী জানান, জলমগ্ন স্থানটিতে এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির জমি আছে। বর্ষায় জমিগুলো দীর্ঘ সময় পানিতে তলিয়ে থাকে এবং মাছের আবাসস্থল হয়। শুষ্ক মৌসুমে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রেখে সেই জলাশয় মাছ ধরার জন্য ইজারা দেওয়া হয়। এবার পশ্চিম গোবিন্দপুরের মফিজ আলীসহ কয়েকজন এটি ইজারা নিয়েছেন। মাছ ধরা শেষ হলে বোরো ধানের মৌসুমে পানি ছেড়ে দেওয়া হয়।

খামারি চেরাগ আলী ও তাঁর স্বজনেরা পানিতে নেমে সেই মৃত হাঁসগুলো তুলে জমির আলে জমা করছিলেন। আজ শুক্রবার সকালে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘বিষ খাওয়াইয়া হাঁসগুলা মারিয়া আমারে পথে বসাই দিল’