শুল্ক নিয়ে এবার নিজের দেশকেই হুমকি দিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সঙ্গে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন আদালতের উদ্দেশ্যেও। ট্রাম্পের দাবি, আদালত তাঁর বিরুদ্ধে রায় দিলে যুক্তরাষ্ট্র আবার ১৯২৯ সালের মতো ভয়াবহ মন্দার মুখে পড়বে।

ট্রুথ সোশ্যালে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। সেখানে দাবি করেছেন, তাঁর শুল্কনীতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ‘ইতিবাচক প্রভাব’ ফেলছে। শেয়ারবাজারে ‘রেকর্ড উত্থান’ ঘটেছে। প্রতিদিনই নতুন ‘নতুন রেকর্ড’ হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, আমেরিকার অর্থনীতিতে শত শত কোটি ডলার ঢুকছে বলেও দাবি তাঁর। খবর সিএনএনের

এর পরেই আদালতকে ‘চরম বামপন্থী’ বলে কটাক্ষ করেন ট্রাম্প। তিনি সতর্ক করে বলেন, আদালত যদি তাঁর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রায় দেয় বা তাঁর ক্ষমতা খর্ব করে, তাহলে আমেরিকার অর্থনীতিতে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে।

শুধু তা–ই নয়, ট্রাম্পের দাবি, তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ১৯২৯ সালের পুনরাবৃত্তি হবে। ভয়ংকর মন্দা নেমে আসবে। আমেরিকার সম্পদ, শক্তি ও ক্ষমতা ভেঙে পড়বে। তাঁর নেতৃত্বে যে সাফল্য এসেছে, তা মুহূর্তে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে বলেও সতর্ক করেছেন ট্রাম্প।

গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত রায় দেয়, বিদেশি পণ্যে ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপে ট্রাম্প নিজের আইনি ক্ষমতার সীমা লঙ্ঘন করেছেন। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সার্কিট আপিল আদালতে ট্রাম্প প্রশাসনের করা আপিল শুনানি হয়। ১১ জন বিচারকের এই বেঞ্চে বেশ কয়েকজনই সংশয় প্রকাশ করেন, বিদ্যমান আইন ট্রাম্পকে এত আক্রমণাত্মকভাবে শুল্ক আরোপের ক্ষমতা দেয় কি না। আপিল আদালত এখনো এ বিষয়ে রায় দেয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, এই মামলা শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে গড়াবে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পের সতর্ক বার্তা, তাঁর জরুরি ক্ষমতার বিরুদ্ধে রায় গেলে তা হবে ‘বিচারিক বিপর্যয়’। তিনি আরও বলেন, ‘যদি তাঁরা আমেরিকার সমৃদ্ধি, শক্তি ও ক্ষমতার বিরুদ্ধে রায় দিতেই চান, তবে তা অনেক আগেই, মামলার শুরুতেই দিতে পারত।’

ট্রাম্পের এই মন্তব্যে অনেকে বিস্মিত হন। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বর্তমান প্রেসিডেন্টের পক্ষে সরাসরি অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সতর্কতা দেওয়া বিরল; অন্যদিকে অনেক অর্থনীতিবিদ বরাবরই ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি হিসেবে মনে করেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র আম র ক র কর ছ ন ক ষমত সতর ক

এছাড়াও পড়ুন:

খরায় বাড়বে গাছের মৃত্যু, আরও উষ্ণ হবে পৃথিবী: গবেষণা

খরার প্রভাবে বিশ্বজুড়ে গাছের মৃত্যু বাড়বে। এতে আরও উষ্ণ হয়ে উঠবে পৃথিবী। এর বিরূপ প্রভাব পড়বে পরিবেশ ও জনজীবনে। এ ছাড়া পৃথিবীর উষ্ণ হওয়া ঠেকাতে বর্তমানে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, খরায় গাছের মৃত্যু সেই সংকট মোকাবিলাকে আরও কঠিন করে তুলবে।

গাছের ওপর খরার প্রভাব নিয়ে করা বৈশ্বিক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত ৩১ জুলাই বিজ্ঞানবিষয়ক আন্তর্জাতিক সাময়িকী সায়েন্স–এ ‘উষ্ণমণ্ডলীয় গাছের কাণ্ডের বৃদ্ধিতে খরার প্রভাব সামান্য’ শীর্ষক এই গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

বেশ কয়েকটি দেশের গবেষক মিলে গবেষণাটি করেছেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের ওয়াগেনিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার জুইডেমা, ব্রাজিলের ইউনিভার্সিটি অব ক্যাম্পিনাসের অধ্যাপক পিটার গ্রোয়েনেন্ডি, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞানের অধ্যাপক মিজানুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার অধ্যাপক ভেলেরি ট্রাউট ও অধ্যাপক ফ্লোরিন বাবস্ট।

গবেষকেরা জানিয়েছেন, ১৯৩০ সালের পর থেকে সবচেয়ে শুষ্ক বছরগুলো বাছাই করেছিলেন তাঁরা। খরার এসব বছরে গাছের বর্ষবলয় স্বাভাবিক বছরের তুলনায় কতটা সংকুচিত ছিল, তা দেখেছেন। এ ছাড়া খরার পরে দুই বছরে গাছের বর্ষবলয়ের প্রস্থ পরিমাপ করেও দেখা হয়।

গবেষকেরা জানান, ১৯৩০ সাল থেকে প্রায় ১০০ বছর সময়কালে ৩৬টি দেশের ৫০০টি স্থানের ২০ হাজারের বেশি গাছের বর্ষবলয়ের তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছেন তাঁরা। আমাজন বন থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের গাছের তথ্য–উপাত্ত নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষকদের দাবি, এর আগে এত গাছের বর্ষবলয় নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি।

উল্লেখ্য, বয়স্ক গাছকে আড়াআড়িভাবে করাত দিয়ে কাটলে ভেতরে গাঢ় রঙের যে বৃত্তাকার বলয় দেখা যায়, তা গুনে গাছের বয়স সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। সেই বৃত্তাকার বলয়কে বলা হয় গাছের বর্ষবলয় বা ট্রি রিংস।

গবেষকেরা জানিয়েছেন, ১৯৩০ সালের পর থেকে সবচেয়ে শুষ্ক বছরগুলো বাছাই করেছিলেন তাঁরা। খরার এসব বছরে গাছের বর্ষবলয় স্বাভাবিক বছরের তুলনায় কতটা সংকুচিত ছিল, তা দেখেছেন। এ ছাড়া খরার পরে দুই বছরে গাছের বর্ষবলয়ের প্রস্থ পরিমাপ করেও দেখা হয়।

গবেষকেরা জানান, ১৯৩০ সাল থেকে প্রায় ১০০ বছর সময়কালে ৩৬টি দেশের ৫০০টি স্থানের ২০ হাজারের বেশি গাছের বর্ষবলয়ের তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছেন তাঁরা। আমাজন বন থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের গাছের তথ্য–উপাত্ত নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষকদের দাবি, এর আগে এত গাছের বর্ষবলয় নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি।

গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে খরার বছরে গাছের বৃদ্ধি ছিল স্বাভাবিক বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ কম।

গবেষক মিজানুর রহমান গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে খরায় গাছের বৃদ্ধি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৯ সালের খরার বছরে, বাংলাদেশের রেমা-কালেঙ্গা বনে চিক্রাশিগাছের বৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৫৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল।

তবে খরার পরও বেশির ভাগ স্থানে গাছের বৃদ্ধিতে তার প্রভাব পড়েছে সামান্য। কারণ হিসেবে গবেষকেরা বলেছেন, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন কার্বন শোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ জন্য খরার পরও প্রকৃতিতে তার প্রভাব পড়ে খুব কম। কিন্তু পরিস্থিতি আর তেমনটা থাকবে না। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী ক্রমেই উষ্ণ হয়ে উঠছে। পাশাপাশি খরাও বাড়ছে। এতে গাছের কার্বণ শোষণের স্বাভাবিক যে প্রক্রিয়া, তা ধীর ধীরে কমছে।

বাংলাদেশে খরায় গাছের বৃদ্ধি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৯ সালের খরার বছরে, বাংলাদেশের রেমা-কালেঙ্গা বনে চিক্রাশিগাছের বৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৫৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল।

গবেষণায় দেখা গেছে, খরার প্রভাবে বছরে অতিরিক্ত প্রায় দশমিক ১ শতাংশ গাছ মারা যেতে পারে। এতে দুটি বিষয় হবে। প্রথমত; গাছ কমে যাওয়ায় সেসব গাছ যে পরিমাণ কার্বন শোষণ করত, সেই পরিমাণ কার্বন প্রকৃতিতেই থেকে যাবে। আবার গাছ মরার পর পচে যাওয়া এসব গাছ থেকে অতিরিক্ত কার্বন নির্গত হবে।

গবেষক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত গাছের কাণ্ড বৃদ্ধিতে ও একই সঙ্গে গাছের কার্বন শোষণে খরার প্রভাব সীমিত পর্যায়ে আছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান যে প্রবণতা, তা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এই স্থিতিশীলতা থাকবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খরায় বাড়বে গাছের মৃত্যু, আরও উষ্ণ হবে পৃথিবী: গবেষণা