পাল্টা শুল্ক কার্যকরের পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্যের দাম বাড়াতে নতুন ট্যাগ লাগাতে শুরু করেছে। এর মধ্যে বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ওয়ালমার্ট, টার্গেট, নাইকির মতো বড় বড় ব্র্যান্ডগুলো রয়েছে। তবে পণ্যে বাড়তি দামের ট্যাগ দেখে ক্ষুব্ধ হচ্ছেন ক্রেতারা।

এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতা ওয়ালমার্টের বিক্রয়কেন্দ্র থেকে সম্প্রতি মার্সেডিজ চ্যান্ডলার নামে একজন ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী একটি ভিডিও শেয়ার করেন। এতে তিনি দাবি করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ তৈরি পোশাক ও ব্যাগসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বেশ বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাঁর পোস্টটির শিরোনাম ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক পুরোদমে কার্যকর!’ ভিডিও পোস্টে দেখা যায়, চ্যান্ডলার ওয়ালমার্টের পোশাক সেকশন ঘুরে ঘুরে পুরোনো ও নতুন দামের ট্যাগের তুলনা করছেন। কিছু পোশাকে পুরোনো ট্যাগ তুলে নতুন দামের ট্যাগ বসানো হয়েছে। আবার কিছু পোশাকে পুরোনো ট্যাগের ওপর নতুন দাম বসানো হয়েছে।

ভিডিওতে চ্যান্ডলার বলেন, ‘বন্ধুরা, শুল্ক এখন সক্রিয়ভাবে কার্যকর।’ তিনি বলেন, ‘ওয়ালমার্টের এই পোশাকগুলো দেখুন। সব ট্যাগের নিচের অংশ কেটে ফেলা হয়েছে, কিন্তু একটি খুঁজে পেলাম যেখানে নিচের অংশ এখনো আছে—দাম ১০.

৮৯ ডলার। এখন সেটি বাড়িয়ে করা হয়েছে ১১.৯৮ ডলার।’

চ্যান্ডলার শিশুদের একটি পোশাক দেখান, যেটির পুরোনো দাম ছিল ৬.৮৯ ডলার, এখন করা হয়েছে ১০.৯৮ ডলর। একটি ব্যাকপ্যাকের দাম আগে ছিল ১৯.৯৭ ডলার, যা বেড়ে হয়েছে ২৪.৯৭ ডলার। তার মানে ব্যাকপ্যাকটির দাম বেড়েছে ৪ ডলার। চ্যান্ডলার বলেন, ‘আপনি যদি আমাকে বিশ্বাস না করেন, তবে আপনার স্থানীয় ওয়ালমার্ট বা টার্গেটের বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখে আসুন।’

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৭ আগস্ট থেকে বিভিন্ন দেশের পণ্য প্রবেশে বিভিন্ন হারে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়। যেমন ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়ার পণ্যে ১৯ শতাংশ, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশি পণ্যে ২০ শতাংশ, ভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বসেছে। যদিও চলতি মাসের শেষ দিকে ভারতীয় পণ্যের ওপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক বসবে। গত ২ এপ্রিল প্রথম পাল্টা শুল্ক ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ৯ এপ্রিল অবশ্য সেটি কার্যকরের সময়সীমা ৯০ দিন পিছিয়ে দেন। যদিও সব দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত পাল্টা শুল্কের সঙ্গে এই ১০ শতাংশ সমন্বয় করা হয়েছে।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ল্যাবের হিসাব অনুযায়ী, পাল্টা শুল্ক কার্যকরের পর চামড়ার জুতা ও ব্যাগের দাম ৩৯ শতাংশ এবং পোশাকের দাম ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া খাবারের দাম ৩ শতাংশের বেশি, তাজা ফলমূল ৭ শতাংশ পর্যন্ত এবং গাড়ির দাম ১২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ওয়ালমার্ট ইতিমধ্যে শিশুদের পণ্য, রান্নাঘরের সামগ্রী ও খেলনার দাম বাড়িয়েছে। নাইকি তাদের কিছু জুতার দাম বাড়াচ্ছে। প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল আগস্ট থেকে কিছু পণ্যের দাম ২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াবে বলে জানিয়েছে। তাদের অনুমান, শুধু এ বছরই শুল্কজনিত খরচ মেটাতে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক ক র যকর

এছাড়াও পড়ুন:

উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে, তাহলে নিয়ে আসেন না কেন: দুদক চেয়ারম্যান

দুর্নীতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে, সেই অভিযোগ যদি সুনির্দিষ্ট হয়, তাহলে আপনারা (সাংবাদিক) নিয়ে আসেন না কেন।’

আজ মঙ্গলবার সকালে রংপুরে দুদকের সমন্বিত জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয়ের ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এসব কথা বলেন।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের যে বিধিবদ্ধ আইন, তাতেও ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। একটা ব্যাপার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, আমরা যে অভিযোগ করব, তা যেন সুনির্দিষ্ট হয়। আমরা যদি বলে থাকি, তিনি কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন, কোথা থেকে করেছেন, কীভাবে করেছেন, এই অংশগুলো যদি প্রমাণ করতে না পারি, তাহলে শেষ পর্যন্ত সেই অভিযোগ টিকবে না। এমনকি উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে, সেই অভিযোগ যদি সুনির্দিষ্ট হয়, তাহলে আপনারা (সাংবাদিক) নিয়ে আসেন না কেন।’

সম্প্রতি রাজধানীতে এক সেমিনারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আটজন উপদেষ্টার ‘সীমাহীন দুর্নীতি’র প্রমাণ নিজের কাছে রয়েছে। এই উপদেষ্টাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ হয় না, বদলিও হয় না। তবে তিনি উপদেষ্টাদের নাম বলেননি।

তবে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এক বিবৃতিতে সরকার তাঁর (সাবেক সচিব) কাছে সব প্রমাণ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে আহ্বান জানিয়েছে।

এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, ‘বিষয়টি পত্রিকায় এসেছে। সেটি আমাদের চোখে পড়েছে। এই সরকার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া দরকার, এটা রাজনৈতিক সরকার নয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের নেতৃত্বে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি একেবারেই দুর্নীতির বিপক্ষে একজন মানুষ। এটা যদি তাঁর উপদেষ্টা পরিষদের কেউ হন, সে ক্ষেত্রেও তিনি বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি নন।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুদকের মামলার বিষয়ে প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। এ সম্পর্কে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আমাদের এখানে কয়েকটি মামলা চলমান। আরও কয়েকটি বিষয় তদন্তাধীন। তদন্ত করে শেষ পর্যন্ত যদি প্রমাণিত হয়, আমরা মামলা-মোকদ্দমায় চলে যাব।’

সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুদকের অভিযান প্রসঙ্গে মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান করছি। বিশেষ করে সেবা প্রদানকারী যেসব প্রতিষ্ঠানে সেবা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে সেবা গ্রহিতাদের। আমরা অভিযান করছি, যাতে এই অভিযোগগুলো না হয়। ‘

পরে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারি কর্মকর্তাদের ও কর্মচারীদের ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময় সভায় যোগ দেন।

রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল হকের সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল। উপস্থিত আছেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন, পুলিশের রংপুরের রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী, পুলিশ সুপার আবু সাইম প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ