ভারতের স্বাধীনতা দিবসের জাতীয় অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার ভাষণে চিরবৈরী পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি অনুপ্রবেশমুক্ত সুরক্ষিত দেশ গড়ার কথা বলেছেন।

১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস। ১৯৪৭ সালের এই দিনে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয় দেশটি। আগের দিন ১৪ আগস্ট স্বাধীনতা পায় পাকিস্তান। এক দেশ ভেঙে স্বাধীনতা নিয়ে দুটি দেশ হলেও জাতি ও ধর্মগত বিভাজনের রাজনীতি এবং পরস্পরের প্রতি সার্বভৌমত্বের হুমকি তাদের বন্ধুত্বের পথ সুগম করতে দেয়নি।

নয়াদিল্লির লাল কেল্লায় দাড়িয়ে স্বাধীনতা দিবসে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১০৫ মিনিট ভাষণ দিয়েছেন। গত বছর তিনি ৯৮ মিনিট ভাষণ দিয়েছিলেন। 

আরো পড়ুন:

শত্রুকে ‘সব দিক থেকে’ আঘাত হানতে রকেট ফোর্স গঠন করল পাকিস্তান

ভারতকে এমন শিক্ষা দেব, কখনোই ভুলবে না: শাহবাজ শরিফ

পাকিস্তানকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে মোদি বলেন, “ভারত পারমাণবিক হুমকি বা ব্ল্যাকমেলিং সহ্য করবে না, উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।”

সিন্ধু নদীর পানি বণ্টন চুক্তি প্রসঙ্গে পাকিস্তানকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, “রক্ত আর জল একসঙ্গে বইতে পারে না।”

৭৯ তম স্বাধীনতার দিবসের ভাষণে অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে বড় বার্তা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি। তিনি বলেন, “অনুপ্রবেশ বরদাস্ত করব না। এর জন্য ডেমোগ্রাফি মিশন চালু হবে দেশে। 

“জনসংখ্যাগত পরিবর্তন কেবল সামাজিক পরিবর্তন নয়; এটা জাতীয় সুরক্ষার ক্ষেত্রেও হুঁশিয়ারির সমান," যোগ করেন তিনি।

জাতির উদ্দেশে মোদি বলেন, “আমি একটা চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে দেশের মানুষকে সতর্ক করে দিতে চাই। সুচিন্তিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এই দেশের জনবিন্যাস বদলে দেওয়া হচ্ছে। নতুন নতুন সমস্যার বীজ বপণ করা হচ্ছে। অনুপ্রবেশকারীরা আমাদের তরুণ প্রজন্মের জীবিকা কেড়ে নিচ্ছে। আমাদের মা-বোনেদের নিশানা করছে। এটা সহ্য করা হবে না।”

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী বাংলা বা বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করেননি। তবে তিনি বলেছেন, “এই অনুপ্রবেশকারীরা আমাদের আদিবাসীদের জমি কেড়ে নিচ্ছে। তাদের ভুল বোঝাচ্ছে। দেশ এটা সহ্য করবে না।”

সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোকে টার্গেট করে মোদি বলেন, ‘‘সীমান্ত এলাকায় জনবিন্যাসে পরিবর্তন জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক। এর মাধ্যমে সংঘর্ষের বীজ বপণ হচ্ছে। অনুপ্রবেশকারীদের সামনে কোনো দেশ মাথা নত করতে পারে না। আমরা কীভাবে করব? আমাদের পূর্বপুরুষরা আমাদের স্বাধীনতা উপহার দিয়ে গেছেন। অনুপ্রবেশকারীদের রুখে তাদের প্রতি কর্তব্য আমাদের পালন করতে হবে।”

তিনি বলেন, “হাই-পাওয়ার ডেমোক্রেটিক মিশন এরইমধ্যে অনুমোদন পেয়ে গেছে। জাতীয় সুরক্ষায় প্রভাব ফেলা অনুপ্রবেশ রুখতেই এই কড়া অবস্থান।" 

শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, “অনুপ্রবেশকারীরা আমাদের কর্মসংস্থানে প্রভাব ফেলছে। টার্গেট করা হচ্ছে নারীদের। সামাজিক কাঠামোকে নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যাগত পরিবর্তন ভারতের স্থিতিশীলতার জন্য বড়সড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।”

বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গারা বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশ করছে বলে বিজেপির যে অভিযোগ, সেটি সামনে এনে মোদি বলেন, “সীমান্ত দিয়ে বেআইনি প্রবেশ বন্ধ করা, সীমান্তে সুরক্ষা বাড়ানো এবং সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিচিতি সুরক্ষিত রাখার উদ্দেশ্য নিয়েই এই মিশন চালু হচ্ছে।”

এদিন লাল কেল্লায় দাঁড়িয়ে ভারতের ‘মিশন সুদর্শন চক্র’-এর ঘোষণা দিয়েছেন মোদি। তিনি বলেন, “মিশন সুদর্শন চক্রের আওতায় ২০৩৫ সালের মধ্যে রাষ্ট্রের সব গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরকে পুরোপুরি একটি নির্দিষ্ট সুরক্ষাকবচের মধ্যে আনা হবে। এর সেক্টরগুলোর মধ্যে সামরিক সেক্টর যেমন রয়েছে, তেমনই থাকবে হাসপাতাল, রেলও।”

“নতুন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পুরোপুরি সুরক্ষাকবচ দেওয়া হবে এই সব ক্ষেত্রকে। এই সুরক্ষা নিয়মিত বাড়ানো হবে। এই শক্তিশালী অস্ত্র যেমন হামলা ঠেকাবে, তেমনই দ্বিগুণ শক্তিতে শত্রুর ওপরে আঘাতও হানবে। রাষ্ট্রীয় সুরক্ষাকে মজবুত, আধুনিক করার জন্য এই সিদ্ধান্ত,” যোগ করেন মোদি।

স্বাধীনতা দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণে আত্মনির্ভরতা ভারত গড়ার ওপরও জোর দেন মোদি। শুধু সেমিকন্ডাক্টর বা অন্যান্য পণ্যই নয়, ভারতীয় যুদ্ধবিমানের জন্য ইঞ্জিনের ক্ষেত্রেও সেই একই বার্তা তার। একবিংশ শতককে ‘প্রযুক্তিনির্ভর সময়কাল’ হিসেবে তুলে ধরে মোদি ঘোষণা দেন, “২০২৫ সালের মধ্যেই ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ চিপ বাজারে আসবে।”

ভাষণে আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক যুদ্ধ ইস্যুতেও  মুখ খুলেছেন মোদি, বলেছেন, “স্বাধীনতার পর সকলের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কৃষকরা আমাদের স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। তাই ভারত সরকার কৃষকদের স্বার্থের সঙ্গে কোনো আপস করবে না। দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে মোদি।”

আত্মনির্ভর ভারত নিয়ে তার সরকারের সাফল্যের কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল হওয়া বিপর্যয়ের অন্যতম অংশ। আমাদের স্বার্থরক্ষার জন্য আমাদের অবশ্যই স্বনির্ভর হতে হবে।” 

মোদি বলেন, “আমাদের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে আমরা অনেক দেশের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সত্যিকার অর্থে আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তুলতে হলে আমাদের জ্বালানির ক্ষেত্রে স্বাধীনতা লাভ করতে হবে।” 

“এখন ইতিহাস লেখার সময়। বিশ্ববাজারকে আমাদের শাসন করতে হবে। কম দাম, উচ্চ মান- এই মন্ত্র সকলের লক্ষ্য হওয়া উচিত,” যোগ করেন মোদি।

স্বাধীনতা দিবসে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও নতুন প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছেন মোদি। তিনি জানান, প্রথমবার চাকরিতে যোগ দেওয়া যুবক-যুবতীদের ১৫ হাজার টাকা দেবে সরকার, একইসঙ্গে বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও সাহায্য করবে। 

তিনি জানান, নতুনদের যেসব সংস্থা চাকরিতে নেবে, তাদেরকে কর্মচারীপ্রতি ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি দেবে সরকার। এই প্রকল্পের জন্য ৯৯ হাজার ৪৪৭৬ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করেছে সরকার।

ঢাকা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব ধ নত আম দ র র জন য ন র ভর মন ত র স রক ষ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আধুনিক টিভির যত আধুনিক সুবিধা

টেলিভিশনকে বাংলায় বলা হয় ‘দূরদর্শন’। মাত্র কয়েক বছর আগেও এটি সত্যিই ছিল দূরদর্শনের মাধ্যম—দূরের কোনো ঘটনা চোখের সামনে এনে দেওয়ার একটি যন্ত্র। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে টিভির সংজ্ঞা, উদ্দেশ্য ও ব্যবহার। প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতিতে আজকাল টিভি হয়ে উঠেছে একটি ‘স্মার্ট হাব’, যেখানে সিনেমা দেখা, গেম খেলা, ভিডিও কল করা, এমনকি বাড়ির অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইসও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আধুনিক টিভিগুলোর সুবিধা কেবল ছবি বা সাউন্ডে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এগুলো এখন ব্যবহারকারীদের এনে দিয়েছে একসঙ্গে বিনোদন, সংযোগ, যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণের নতুন এক এক্সপেরিয়েন্স।

স্মার্ট অপারেটিং সিস্টেম

বর্তমান প্রজন্মের টিভিগুলো শুধু নাটক কিংবা সিনেমা দেখার একটি স্ক্রিন নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ স্মার্ট ডিভাইস। স্মার্ট টিভিতে অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) হিসেবে টাইজেন, অ্যান্ড্রয়েড টিভি, রোকু টিভি এবং ওয়েবওএস ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এই সিস্টেমগুলোর মাধ্যমেই বর্তমান যুগের টিভিগুলো হয়ে উঠছে আধুনিক থেকে আধুনিকতর। ব্যবহারকারীরা এখন চাইলেই স্মার্ট টিভিগুলোতে নেটফ্লিক্স, ইউটিউব, স্পটিফাই, অ্যামাজন প্রাইম কিংবা যেকোনো ওটিটি প্ল্যাটফর্মও সরাসরি উপভোগ করতে পারেন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘অ্যাপ স্টোর ইন্টিগ্রেশন’। টিভিতেই এখন মোবাইলের মতো অ্যাপ ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায়। ওয়েদার অ্যাপ, গেমস, নিউজ—এমনকি ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপও ব্যবহার করা যায় টিভির বড় স্ক্রিনে।

ভয়েস কন্ট্রোল: কথা বলেই নিয়ন্ত্রণ

রিমোট খোঁজার ঝামেলা এখন যেন অতীত। আগে টিভির সবকিছু রিমোট দ্বারা পরিচালিত হলেও এখনকার আধুনিক টিভিগুলোতে আছে ভয়েস কন্ট্রোল—যেখানে ব্যবহারকারীর ভয়েস দ্বারাই টিভি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই প্রযুক্তি বিক্সবি, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, অ্যালেক্সার মতো ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের মাধ্যমে কাজ করে। এর পাশাপাশি কিছু হাই-এন্ড মডেলে রয়েছে জেসচার কন্ট্রোল—যেখানে হাত নাড়লেই টিভি রেসপন্স করে। টিভি চালু-বন্ধ করা, চ্যানেল পরিবর্তন—এমনকি ভলিউম বাড়ানো-কমানোর মতো কাজও করা যায় হাতের ইশারায়। এ ক্ষেত্রে গ্যালাক্সি ওয়াচের কথা বলা যায়। এটি হাতের নড়াচড়াকে শনাক্ত করে এসব কমান্ড কার্যকর করে।

মাল্টি-ডিভাইস কানেকটিভিটি: এক স্ক্রিনে সব সংযোগ

বর্তমানে টিভি শুধু সম্প্রচার মাধ্যম নয়; এটি হয়ে উঠেছে একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল ইউনিট। মোবাইল ফোন, স্পিকার, ল্যাপটপ, গেমিং কনসোল—সব ডিভাইস এখন টিভির সঙ্গে সহজেই সংযুক্ত করা যায়।

বেশির ভাগ স্মার্ট টিভিতে রয়েছে ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ, এইচডিএমআই এআরসি, এয়ার প্লে, মিরাকাস্টসহ বিভিন্ন সুবিধা। ফলে ব্যবহারকারী চাইলে নিজের ফোনের ছবি, ভিডিও বা প্রেজেন্টেশন মুহূর্তেই বড় স্ক্রিনে শেয়ার করতে পারেন। সেই সঙ্গে আধুনিক টিভিগুলোতে রয়েছে গেমারদের জন্য এইচডিএমআই ২.১ পোর্ট এবং কম ইনপুট ল্যাগযুক্ত ডিসপ্লে, যা গেমিং এক্সপেরিয়েন্সকে করে তোলে আরও স্মুথ।

আধুনিক টিভিগুলো ব্যবহারকারীদের এনে দিয়েছে একসঙ্গে বিনোদন, সংযোগ, যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণের নতুন এক এক্সপেরিয়েন্স

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কঙ্কনার সঙ্গে বিচ্ছেদ ও সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুললেন রণবীর
  • আধুনিক টিভির যত আধুনিক সুবিধা
  • রওশন জাহান: বোন, শিক্ষক ও সহযোদ্ধা
  • বিদেশি খেলোয়াড়, দেশি খেলোয়াড় চিন্তা করে বাংলাদেশ জিততে পারবে না—বললেন শমিত
  • দীর্ঘস্থায়ী দাম্পত্য জীবনের মূলমন্ত্র কী? জানালেন ৮৪ বছর ধরে একসঙ্গে থাকা এই দম্পতি
  • দুজন তারকার কী বিয়ে করা উচিত, যা বললেন মিথিলা