পাকিস্তানকে মোদি: রক্ত আর জল একসঙ্গে বইতে পারে না
Published: 15th, August 2025 GMT
ভারতের স্বাধীনতা দিবসের জাতীয় অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার ভাষণে চিরবৈরী পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি অনুপ্রবেশমুক্ত সুরক্ষিত দেশ গড়ার কথা বলেছেন।
১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস। ১৯৪৭ সালের এই দিনে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয় দেশটি। আগের দিন ১৪ আগস্ট স্বাধীনতা পায় পাকিস্তান। এক দেশ ভেঙে স্বাধীনতা নিয়ে দুটি দেশ হলেও জাতি ও ধর্মগত বিভাজনের রাজনীতি এবং পরস্পরের প্রতি সার্বভৌমত্বের হুমকি তাদের বন্ধুত্বের পথ সুগম করতে দেয়নি।
নয়াদিল্লির লাল কেল্লায় দাড়িয়ে স্বাধীনতা দিবসে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১০৫ মিনিট ভাষণ দিয়েছেন। গত বছর তিনি ৯৮ মিনিট ভাষণ দিয়েছিলেন।
আরো পড়ুন:
শত্রুকে ‘সব দিক থেকে’ আঘাত হানতে রকেট ফোর্স গঠন করল পাকিস্তান
ভারতকে এমন শিক্ষা দেব, কখনোই ভুলবে না: শাহবাজ শরিফ
পাকিস্তানকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে মোদি বলেন, “ভারত পারমাণবিক হুমকি বা ব্ল্যাকমেলিং সহ্য করবে না, উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।”
সিন্ধু নদীর পানি বণ্টন চুক্তি প্রসঙ্গে পাকিস্তানকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, “রক্ত আর জল একসঙ্গে বইতে পারে না।”
৭৯ তম স্বাধীনতার দিবসের ভাষণে অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে বড় বার্তা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি। তিনি বলেন, “অনুপ্রবেশ বরদাস্ত করব না। এর জন্য ডেমোগ্রাফি মিশন চালু হবে দেশে।
“জনসংখ্যাগত পরিবর্তন কেবল সামাজিক পরিবর্তন নয়; এটা জাতীয় সুরক্ষার ক্ষেত্রেও হুঁশিয়ারির সমান," যোগ করেন তিনি।
জাতির উদ্দেশে মোদি বলেন, “আমি একটা চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে দেশের মানুষকে সতর্ক করে দিতে চাই। সুচিন্তিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এই দেশের জনবিন্যাস বদলে দেওয়া হচ্ছে। নতুন নতুন সমস্যার বীজ বপণ করা হচ্ছে। অনুপ্রবেশকারীরা আমাদের তরুণ প্রজন্মের জীবিকা কেড়ে নিচ্ছে। আমাদের মা-বোনেদের নিশানা করছে। এটা সহ্য করা হবে না।”
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী বাংলা বা বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করেননি। তবে তিনি বলেছেন, “এই অনুপ্রবেশকারীরা আমাদের আদিবাসীদের জমি কেড়ে নিচ্ছে। তাদের ভুল বোঝাচ্ছে। দেশ এটা সহ্য করবে না।”
সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোকে টার্গেট করে মোদি বলেন, ‘‘সীমান্ত এলাকায় জনবিন্যাসে পরিবর্তন জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক। এর মাধ্যমে সংঘর্ষের বীজ বপণ হচ্ছে। অনুপ্রবেশকারীদের সামনে কোনো দেশ মাথা নত করতে পারে না। আমরা কীভাবে করব? আমাদের পূর্বপুরুষরা আমাদের স্বাধীনতা উপহার দিয়ে গেছেন। অনুপ্রবেশকারীদের রুখে তাদের প্রতি কর্তব্য আমাদের পালন করতে হবে।”
তিনি বলেন, “হাই-পাওয়ার ডেমোক্রেটিক মিশন এরইমধ্যে অনুমোদন পেয়ে গেছে। জাতীয় সুরক্ষায় প্রভাব ফেলা অনুপ্রবেশ রুখতেই এই কড়া অবস্থান।"
শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, “অনুপ্রবেশকারীরা আমাদের কর্মসংস্থানে প্রভাব ফেলছে। টার্গেট করা হচ্ছে নারীদের। সামাজিক কাঠামোকে নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যাগত পরিবর্তন ভারতের স্থিতিশীলতার জন্য বড়সড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।”
বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গারা বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশ করছে বলে বিজেপির যে অভিযোগ, সেটি সামনে এনে মোদি বলেন, “সীমান্ত দিয়ে বেআইনি প্রবেশ বন্ধ করা, সীমান্তে সুরক্ষা বাড়ানো এবং সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিচিতি সুরক্ষিত রাখার উদ্দেশ্য নিয়েই এই মিশন চালু হচ্ছে।”
এদিন লাল কেল্লায় দাঁড়িয়ে ভারতের ‘মিশন সুদর্শন চক্র’-এর ঘোষণা দিয়েছেন মোদি। তিনি বলেন, “মিশন সুদর্শন চক্রের আওতায় ২০৩৫ সালের মধ্যে রাষ্ট্রের সব গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরকে পুরোপুরি একটি নির্দিষ্ট সুরক্ষাকবচের মধ্যে আনা হবে। এর সেক্টরগুলোর মধ্যে সামরিক সেক্টর যেমন রয়েছে, তেমনই থাকবে হাসপাতাল, রেলও।”
“নতুন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পুরোপুরি সুরক্ষাকবচ দেওয়া হবে এই সব ক্ষেত্রকে। এই সুরক্ষা নিয়মিত বাড়ানো হবে। এই শক্তিশালী অস্ত্র যেমন হামলা ঠেকাবে, তেমনই দ্বিগুণ শক্তিতে শত্রুর ওপরে আঘাতও হানবে। রাষ্ট্রীয় সুরক্ষাকে মজবুত, আধুনিক করার জন্য এই সিদ্ধান্ত,” যোগ করেন মোদি।
স্বাধীনতা দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণে আত্মনির্ভরতা ভারত গড়ার ওপরও জোর দেন মোদি। শুধু সেমিকন্ডাক্টর বা অন্যান্য পণ্যই নয়, ভারতীয় যুদ্ধবিমানের জন্য ইঞ্জিনের ক্ষেত্রেও সেই একই বার্তা তার। একবিংশ শতককে ‘প্রযুক্তিনির্ভর সময়কাল’ হিসেবে তুলে ধরে মোদি ঘোষণা দেন, “২০২৫ সালের মধ্যেই ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ চিপ বাজারে আসবে।”
ভাষণে আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক যুদ্ধ ইস্যুতেও মুখ খুলেছেন মোদি, বলেছেন, “স্বাধীনতার পর সকলের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কৃষকরা আমাদের স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। তাই ভারত সরকার কৃষকদের স্বার্থের সঙ্গে কোনো আপস করবে না। দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে মোদি।”
আত্মনির্ভর ভারত নিয়ে তার সরকারের সাফল্যের কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল হওয়া বিপর্যয়ের অন্যতম অংশ। আমাদের স্বার্থরক্ষার জন্য আমাদের অবশ্যই স্বনির্ভর হতে হবে।”
মোদি বলেন, “আমাদের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে আমরা অনেক দেশের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সত্যিকার অর্থে আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তুলতে হলে আমাদের জ্বালানির ক্ষেত্রে স্বাধীনতা লাভ করতে হবে।”
“এখন ইতিহাস লেখার সময়। বিশ্ববাজারকে আমাদের শাসন করতে হবে। কম দাম, উচ্চ মান- এই মন্ত্র সকলের লক্ষ্য হওয়া উচিত,” যোগ করেন মোদি।
স্বাধীনতা দিবসে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও নতুন প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছেন মোদি। তিনি জানান, প্রথমবার চাকরিতে যোগ দেওয়া যুবক-যুবতীদের ১৫ হাজার টাকা দেবে সরকার, একইসঙ্গে বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও সাহায্য করবে।
তিনি জানান, নতুনদের যেসব সংস্থা চাকরিতে নেবে, তাদেরকে কর্মচারীপ্রতি ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি দেবে সরকার। এই প্রকল্পের জন্য ৯৯ হাজার ৪৪৭৬ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করেছে সরকার।
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব ধ নত আম দ র র জন য ন র ভর মন ত র স রক ষ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ: ‘সীমান্তে লড়াই চলে আর আমরা ক্রিকেট খেলতে নেমে পড়ি, এটা হতে পারে না’
‘ঘাম ও রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না। আমরা ওদের এত গুরুত্ব দিই কেন?’
এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি ভারতের বর্জন করা উচিত কি—ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার করা প্রশ্নের উত্তরে এ মন্তব্য করেন হরভজন সিং।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর শুরু হবে এশিয়া কাপ। টি-টোয়েন্টি সংস্করণের এ টুর্নামেন্টে ‘এ’ গ্রুপে আরব আমিরাত ও ওমানের সঙ্গে রয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। সূচি অনুযায়ী, ১৪ সেপ্টেম্বর এশিয়া কাপে নিজেদের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হবে ভারত ও পাকিস্তান।
আরও পড়ুন৩৪ বছর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের১ ঘণ্টা আগেএবারের এশিয়া কাপ নিয়ে জটিলতা বাড়ে গত মে মাসে ভারত ও পাকিস্তান সামরিক সংঘাতে জড়ালে। এসিসির এই দুই প্রভাবশালী দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে ক্রিকেট খেলবে না—এমন আলোচনাও ওঠে তখন। ২৪ জুলাই ঢাকায় এসিসি এজিএম হওয়া নিয়েও মুখোমুখি দাঁড়ায় দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ড। শেষ পর্যন্ত অনলাইনে এজিএমে যোগ দেয় বিসিসিআই। এজিএমের পর এক্সে করা পোস্টে এশিয়া কাপের দিন-তারিখ ও সূচি প্রকাশ করেন এসিসি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি।
তবে এর মধ্যে অন্য ঘটনাও ঘটেছে। সম্প্রতি শেষ হওয়া ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লিজেন্ডস (ডব্লিউসিএল) টুর্নামেন্টে ইন্ডিয়া চ্যাম্পিয়নস দলে খেলেছেন হরভজন। গ্রুপ পর্ব ও সেমিফাইনালে ইন্ডিয়া চ্যাম্পিয়নস পাকিস্তান চ্যাম্পিয়নসের সঙ্গে খেলতে অস্বীকৃতি জানায়। গত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার প্রতিবাদে এ টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ বর্জন করেন ভারতের সাবেকেরা।
হরভজনের মতে, ‘জাতি সবার আগে’ এবং তিনি মনে করেন প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে এশিয়া কাপে খেলতে অস্বীকৃতি জানানো উচিত হবে ভারতের, ‘তাদের বুঝতে হবে, কোনটা গুরুত্বপূর্ণ ও কোনটা অগুরুত্বপূর্ণ। আমার কাছে ব্যাপারটা এমনই। যেসব সৈন্য সীমান্তে আছেন, পরিবারের সঙ্গে দেখা হয় না সেভাবে, কখনো কখনো নিজেদের জীবন উৎসর্গ করছেন এবং আর কখনোই বাড়ি ফেরেন না, তাঁদের ত্যাগ আমাদের সবার জন্যই অনেক বড় ব্যাপার। সে তুলনায় একটি ক্রিকেট ম্যাচ ছাড়াটা খুবই সামান্য বিষয়।’
আরও পড়ুনআন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে চমকের নাম ফয়সাল২ ঘণ্টা আগেভারতের হয়ে ১০৩ টেস্টে ৪১৭ উইকেট নেওয়া ৪৫ বছর বয়সী সাবেক এই ক্রিকেটার আরও বলেন, ‘আমাদের সরকারেরও একই অবস্থান। রক্ত ও ঘাম একসঙ্গে বইতে পারে না। সীমান্তে লড়াই চলছে আর আমরা ক্রিকেট খেলতে নেমে পড়ছি, এটা হতে পারে না। এ বড় ইস্যুগুলো সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ক্রিকেট খুবই ছোট বিষয়। জাতি সবার আগে।’
হরভজন ব্যাখ্যা করেন, ‘আমাদের যা কিছু পরিচয়, সবই এই দেশের জন্য। সেটা আপনি খেলোয়াড়, অভিনেতা কিংবা যাই হোন—কেউ জাতির চেয়ে বড় নয়। সবার আগে দেশ এবং যে দায়িত্ব আসে, সেটা পালন করতেই হবে। দেশের বিষয়ে ক্রিকেট ম্যাচ না খেলাটা খুবই সামান্য ব্যাপার।’
২০০৭ সালে বেঙ্গালুরু টেস্টে ভারতের হরভজন সিং (বাঁয়ে) ও পাকিস্তানের শোয়েব আখতার। ওই ম্যাচের পর দুই দল আর কখনো টেস্টে মুখোমুখি হয়নি