ভারতে বাড়ছে ধনীর সংখ্যা, সবচেয়ে বেশি মুম্বাইয়ে
Published: 24th, September 2025 GMT
বছরে কোটি রুপি আয় করা ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা গত বেড়েছে। সমীক্ষা সংস্থা হুরুন ইন্ডিয়ার হিসাব অনুসারে, গত ছয় অর্থবছরে বছরে কোটি রুপি আয় করা ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। শুধু তা-ই নয়, এই অঙ্ক আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। সবচেয়ে বেশি সম্পদশালী মানুষের বসবাস মুম্বাইয়ে।
ব্যক্তিগত আয়ের নিরিখে ‘মার্সিডিজ-বেঞ্জ হুরুন ইন্ডিয়া ওয়েলথ, ২০২৫’ শীর্ষক সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওই বেসরকারি সংস্থা। আয়কর রিটার্নের তথ্য উল্লেখ করে সেখানে বলা হয়েছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বছরে কোটি রুপি রোজগার করে—এমন ব্যক্তির সংখ্যা ছিল মাত্র ৮১ হাজার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বছরে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ২৭ হাজার। খবর ইকোনমিক টাইমসের
এদিকে সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউশনাল রিসার্চ গত বছর জানায়, আগের পাঁচ বছরে ১০ কোটি টাকা রোজগার করা ভারতীয়র সংখ্যা বেড়েছে ৬৩ শতাংশ। ২০২৪ সালে বাৎসরিক ১০ কোটি টাকা আয় করা ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৮০০। আরও বলা হয়, বছরে ৫০ লাখ রুপি আয় করা ব্যক্তিদের সংখ্যা ২৫ শতাংশ বেড়েছে বলে দাবি করা হয়েছিল।
গত বছরের হিসাবে দেখা গেছে, বছরে পাঁচ কোটি রুপি রোজগার করা ভারতীয়র সংখ্যা ছিল ৫৮ হাজার ২০০। এ সময় এই সংখ্যা বেড়েছে ৪৯ শতাংশ। ২০১৯-২৪ সালের মধ্যে ১০ কোটি রুপি রোজগার করা ধনকুবেরদের আয় বার্ষিক চক্রবৃদ্ধি হারে ১২১ শতাংশ বেড়েছে বলে জানা গেছে।
মার্সিডিজ-বেঞ্জ হুরুন ইন্ডিয়া ওয়েলথ রিপোর্ট ২০২৫-এর তথ্য অনুযায়ী, নেট সম্পদ ৮ কোটি ৫০ লাখ রুপি সমপরিমাণ—২০২১ সালে এমন পরিবারের সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৫৮ হাজার। ২০২৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৭১ হাজার।
রিপোর্টটি প্রকাশের পাশাপাশি প্রথম মার্সিডিজ-বেঞ্জ হুরুন ইন্ডিয়া ইনডেক্স (এমবিএইচএক্স) ও লাক্সারি কনজ্যুমার সার্ভে ২০২৫ প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ভারতের ‘মিলিয়নিয়ার রাজধানী’ হলো মুম্বাই; সেখানে ১ লাখ ৪২ হাজার সম্পদশালী পরিবারের বসবাস।
এরপরই আছে দিল্লি (৬৮ হাজার ২০০ পরিবার) ও বেঙ্গালুরু (৩১ হাজার ৬০০ পরিবার)। রাজ্যগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে মহারাষ্ট্র, যেখানে মিলিয়নিয়ার পরিবারের সংখ্যা ১ লাখ ৭৮ হাজার। রাজ্যের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি এই সমৃদ্ধির পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে।
জরিপে দেখা যায়, ধনীদের মধ্যে ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবহারের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি (ইউপিআই অ্যাপ ব্যবহার করেন ৩৫ শতাংশ)। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে আছে শেয়ারবাজার, আবাসন ও স্বর্ণ। ব্র্যান্ডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আস্থা অর্জন করেছে রোলেক্স, তানিস্ক, এমিরেটস ও এইচডিএফসি ব্যাংক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ র ন ইন ড য় পর ব র সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
উসমানে দেম্বেলে: আলো-অন্ধকার পেরিয়ে সোনালি মুকুটে ব্যালন ডি’অর
ফুটবলের আকাশে কত তারাই জ্বলে ওঠে, আবার ম্লান হয়ে যায়। কিন্তু উসমানে দেম্বেলের কাহিনি আলাদা। এ যেন এক ভাঙা ডানার পাখির আকাশ ছোঁয়ার গল্প। চোট, সমালোচনা আর অনিশ্চয়তার অন্ধকার গলিপথ পেরিয়ে অবশেষে নিজের নাম ইতিহাসের পাতায় খোদাই করলেন তিনি। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) প্যারিসের আলোকোজ্জ্বল মঞ্চে ঘোষিত হলো- ২০২৫ সালের ব্যালন ডি’অরের অধিকারী ফ্রান্সের এই ফরোয়ার্ড। শুধু তার নয়, এটি পিএসজির ইতিহাসেও প্রথম ব্যক্তিগত গৌরবময় শিরোপা।
পরিসংখ্যানের সুরেলা সিম্ফনি:
পুরো মৌসুমে দেম্বেলের পারফরম্যান্স যেন এক সঙ্গীত রচনা। প্রতিটি নোটে নিখুঁত ছন্দ। ৩৫ গোল, ১৬ অ্যাসিস্ট আর একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। এ যেন সংখ্যার ভাষায় রচিত এক অদ্বিতীয় কবিতা। ‘মার্কা’ লিখেছে, “এ মৌসুম ছিল অপরাজেয়।” তাদের মন্তব্য, “লামিনে ইয়ামাল ভবিষ্যৎ, কিন্তু বর্তমানের মঞ্চে আলো ছড়াচ্ছে দেম্বেলে।” ‘এএস’ যুক্ত করেছে, “সবচেয়ে ধারাবাহিক, সবচেয়ে প্রভাবশালী আর সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন- ফলাফল ছিল অবধারিত।”
আরো পড়ুন:
মার্টিনেল্লির জাদুকরী গোলে শেষ মুহূর্তে সিটিকে রুখল আর্সেনাল
রোনালদো-ফেলিক্সের জোড়া গোলে আল-নাসরের দাপুটে জয়
অতীতের ক্ষত থেকে বর্তমানের গৌরব:
কাতালোনিয়ার ‘মুন্দো দেপোর্তিভো’ আবেগঘনভাবে লিখেছে, “চোটের দগদগে ক্ষত নিয়েও বার্সেলোনায় তিনি ফুটে উঠেছিলেন। আজ তিনি জনতার ব্যালন ডি’অর, ভেরনের সেই ছেলেটি যে একদিন পাহাড় জয় করার স্বপ্ন দেখেছিল, আর আজ সেটি সত্যি করেছে।”
খামখেয়ালিপনা থেকে পেশাদারিত্বের প্রতিমূর্তি:
ব্রিটিশ গণমাধ্যমের দৃষ্টিতে দেম্বেলে আজ এক বদলে যাওয়া চরিত্র। ‘ডেইলি মেইল’ লিখেছে, “বার্সেলোনার সেই খামখেয়ালি তরুণ আজ হয়ে উঠেছেন অনুকরণীয় পেশাদার।” আর ‘দ্য সান’ শিরোনাম করেছে শক্তিশালী বাক্যে: “ফ্লপ থেকে রোল মডেল- সে দৌড়ায়, লড়াই করে, ডিফেন্ড করে, গোল করে। সে-ই পিএসজির হৃদস্পন্দন।”
অশ্রুর প্রতিশোধ:
ডর্টমুন্ডের দিনগুলো মনে করিয়ে ‘বিল্ড’ লিখেছে, “তখন সে ছিল অপরিশোধিত হীরা, আজ সে দীপ্তিময় রত্ন। থিয়েটার দ্য শাতলে-তে দেম্বেলের চোখের অশ্রু শুধু আনন্দ নয়, এটি সেই যন্ত্রণার প্রতিশোধ যা এত বছর তাকে তাড়া করেছে।”
সমষ্টির প্রতীক:
‘লা গাজেত্তা দেল্লো স্পোর্ট’ দেম্বেলের অর্জনকে দেখেছে নতুন এক দলোদ্দীপক সাফল্যের প্রতীক হিসেবে: “মেসি কিংবা এমবাপ্পে ছাড়াই পিএসজি ভেঙেছে প্রিভিলেজের যুগ। দেম্বেলে প্রমাণ করেছে- ধৈর্য, পরিশ্রম আর শৃঙ্খলাই সাফল্যের আসল ঠিকানা।”
আবেগের উচ্ছ্বাস:
দক্ষিণ আমেরিকার ‘ওলে লিখেছে, “ফরাসি প্রতিভা বিশ্বকে আন্দোলিত করেছে। দেম্বেলে শুধু নিজের জন্য জেতেননি, জিতেছেন তাদের জন্যও যারা একসময় তার ওপর বিশ্বাস হারিয়েছিল।” আর ব্রাজিলের ‘গ্লোবো’ আখ্যা দিয়েছে, “ভঙ্গুর এক তারকার পুনর্জন্ম, আজ সে বিশ্বের সেরা।” শেষ করেছে এক গাঢ় বাক্যে: “সে ইতিহাসকে নতুন করে লিখলো।”
দেম্বেলের গল্প কোনো সাধারণ ট্রফি জয়ের ইতিহাস নয়। এটি এক তরুণের অন্ধকার থেকে আলোয় ওঠার উপাখ্যান। ক্ষত-বিক্ষত শরীর, ভাঙা স্বপ্ন, সমালোচনার ভার- সব পেছনে ফেলে তিনি দাঁড়ালেন দৃঢ়ভাবে, নতুন এক উচ্চতায়। উসমানে দেম্বেলে- একজন প্রতিশ্রুতিশীল ছেলে থেকে আজকের বিশ্বের সেরা, ২০২৫ ব্যালন ডি’অরের অমর নায়ক।
ঢাকা/আমিনুল