খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে আধা বেলা অবরোধ চলছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টায় এ অবরোধ শুরু হয়। ফলে ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে আসা সাজেক ও খাগড়াছড়িগামী পর্যটকেরা আটকা পড়েছেন। দুপুর ১২টায় এ অবরোধ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

দলবদ্ধ ধর্ষণে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে গতকাল বুধবার এ অবরোধের ডাক দেয় ‘জুম্ম ছাত্র–জনতা’। অবরোধের কারণে ঢাকা-খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

আজ সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, অবরোধের সমর্থনে জেলার বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে রেখেছেন বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা। খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের চেঙ্গী সেতু এলাকা, স্বনির্ভর এলাকা, খাগড়াছড়ি–পানছড়ি সড়কের পেরাছড়া, টেকনিক্যাল স্কুল; খাগড়াছড়ি–দীঘিনালা সড়কের চার মাইল, ৯ মাইলসহ বিভিন্ন সড়কে অবরোধকারীদের উপস্থিতি দেখা গেছে। এসব সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। কিছু জায়গায় পুলিশ গিয়ে সড়ক থেকে টায়ার ও গাছের গুঁড়ি সরিয়েছে। এসব সড়কে সীমিত পরিসরে অটোরিকশাসহ ছোট কিছু যান চলছে। আজ খাগড়াছড়ির শহরে সাপ্তাহিক বাজারের দিন হলেও পাহাড়ি ক্রেতা ও বিক্রেতাদের বাজারে দেখা যায়নি।

আরও পড়ুনখাগড়াছড়িতে কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের বিচারের দাবিতে রাঙামাটিতে বিক্ষোভ১৫ ঘণ্টা আগে

জেলার নেন্সী বাজার দীঘিনালায় অপেক্ষারত অমর জ্যোতি চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি দীঘিনালা সদর থেকে আরও ১৫ কিলোমিটার দূরে মেরুং এলাকায় যাবেন। তবে অবরোধের কারণে যান বন্ধ থাকায় স্টেশনে অপেক্ষা করছেন। অবরোধ শেষ হলে রওনা দেবেন।

এদিকে অবরোধের কারণে জেলা শহরে আটকা পড়েছেন পর্যটকেরা। খাগড়াছড়ি বাজারে মো.

আরমান, সাজ্জাদ হোসেনসহ একদল তরুণকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। জানতে চাইলে তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, অবরোধের বিষয়টি তাঁরা আগে থেকে জানতেন না। ঢাকা থেকে আসার পথে কুমিল্লায় যাত্রাবিরতির সময় তাঁরা বিষয়টি জানতে পারেন। আট বন্ধু মিলে এক সপ্তাহ আগেই সাজেকে হোটেল বুকিং দিয়েছিলেন। এখন আর যেতে পারছেন না।

সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে রেখেছেন বিক্ষুব্ধরা। আজ সকাল সাতটার দিকে জেলার চেঙ্গীর সেতু এলাকায়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অবর ধ র

এছাড়াও পড়ুন:

খাগড়াছড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের’ অভিযোগের তদন্তসহ ৯ দফা দাবি

খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ৯ দফা দাবি জানিয়েছেন ৪১ বিশিষ্ট নাগরিক।

আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তাঁরা এ দাবি জানান।

ওই বিবৃতিতে মারমা এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ-সহিংসতা ও গুলিবর্ষণে ৩ জন নিহত ও ৩০ জন আদিবাসী আহত হয়েছেন বলে জানান বিশিষ্ট নাগরিকেরা। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগের বিষয়ে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনেরও দাবি জানান তাঁরা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কোনো বাহিনী আইনের শাসন ও মানবাধিকারের ঊর্ধ্বে নয়। মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে তাঁকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। দায়মুক্তির সংস্কৃতি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

নাগরিক সমাজের ৯ দফা দাবিগুলো হলো:

১. খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের দ্রুত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ভুক্তভোগী কিশোরী এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সহায়তা দিতে হবে।

২. সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনায় সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং মদদের অভিযোগের বিষয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।

৩. সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিরা যে বাহিনীর সদস্যই হোক না কেন, তাঁদের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

৪. নিহত ও আহতদের পরিবারকে সুরক্ষা, যথার্থ ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৫. পাহাড়ে দীর্ঘদিনের সামরিকীকরণ নীতি পর্যালোচনা করে শান্তিপূর্ণ, রাজনৈতিক সমাধানের পথে এগোতে হবে।

৬. পাহাড়ে বসবাসরত সব নাগরিকের জীবনের অধিকার, নিরাপত্তা ও সম্প্রীতিনির্ভর সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

৭. পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ওপর যেন কাঠামোগত নিপীড়ন চালানো না হয় এবং এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা যেন আরও হয়রানি, গ্রেপ্তার ও আইনি নিপীড়নের শিকার না হয়—রাষ্ট্রকে তা নিশ্চিত করতে হবে।

৮. পাহাড়ে অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভুক্তভোগীদের কণ্ঠস্বর দমন না হয় এবং জনগণ সত্য জানতে পারে।

৯. নারীদের ওপর সংঘটিত নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনাগুলোর প্রতিকার ও জবাবদিহি নিশ্চিতে স্বাধীন তদন্ত করতে হবে।

আরও পড়ুনখাগড়াছড়িতে সহিংসতায় প্রাণহানির কারণ ও দায়ীদের চিহ্নিত করার দাবি আসকের২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, আসিফ শাহান, মোশাহিদা সুলতানা, রুশাদ ফরিদী, তাসনীম মাহবুব, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন, মানজুর আল মতিন, কাজী জাহেদ ইকবাল, সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ, সংগীতশিল্পী বীথি ঘোষ, লেখক ফিরোজ আহমেদসহ ৪১ বিশিষ্ট নাগরিক এ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।

আরও পড়ুনখাগড়াছড়িতে সহিংসতার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি এইচআরএফবির২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে ধর্ষণ ও প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলার বিচার দাবিতে মানববন্ধন
  • খাগড়াছড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের’ অভিযোগের তদন্তসহ ৯ দফা দাবি