কোরআনের সবচেয়ে মহিমান্বিত আয়াত হলো আয়াতুল কুরসি। ‘আয়াতুল কুরসি’ হলো সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত। এটি আল্লাহর একত্ব, জ্ঞান, শক্তি এবং সার্বভৌমত্বের অনন্য ঘোষণা।

আল্লাহর গুণাবলি নিয়ে এত বিস্তৃত ও গভীর বর্ণনা আর কোনো একক আয়াতে পাওয়া যায় না। এজন্যই রাসুল (সা.) একে কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত বলেছেন।

আয়াতুল কুরসির উচ্চারণ

আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া আল-হাইয়্যুল-ক্বাইয়্যূম, লা তাকুযুহু সিনাতুওঁ ওয়ালা নাওম, লাহূ মা ফিস্-সামাওয়াতি ওয়া মা ফিল আরদ, মান্ যাল্লাযি ইয়াশফাউ ইন্দাহু ইল্লা বি ইযনিহ, ইয়ালামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়া মা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহিতুনা বি শাইইম্ মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শা’আ, ওয়াসিয়া কুরসিইহুস্-সামাওয়াতি ওয়াল আরদ, ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফযুহুমা, ওয়াহুয়াল আলিইয়্যুল আজিম।

আরও পড়ুনআয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ০১ জানুয়ারি ২০২৪আয়াতুল কুরসির মূল শিক্ষা

১.

আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই।

২. তিনি চিরঞ্জীব ও সর্বশক্তিমান।

৩. তাঁর ওপর তন্দ্রা বা ঘুম আসে না।

৪. আসমান ও জমিনের সবকিছু তাঁর মালিকানায়।

৫. কারও সুপারিশ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া গ্রহণযোগ্য নয়।

৬. তাঁর জ্ঞান সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে।

৭. তাঁর কুরসি আসমান-জমিনকে ঘিরে আছে।

৮. সবকিছু সংরক্ষণ করা তাঁর জন্য সহজ।

৯. তিনি মহান ও সর্বোচ্চ।

আয়াতুল কুরসির ফজিলত

১. সবচেয়ে বড় আয়াত:  রাসুল (সা.) উবাই ইবনে কা’ব (রা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন:  “আল্লাহর কিতাবের সবচেয়ে বড় আয়াত কোনটি?”  তিনি বললেন: আয়াতুল কুরসি। রাসুল (সা.) বললেন: “ও উবাই, জ্ঞানের অভিনন্দন তোমাকে।”  (সহিহ মুসলিম, হাদিস ৮১০)
এই ‘বড়’ মানে দৈর্ঘ্যে বড় তা নয়, বরং মর্যাদায় বড় বুঝাবার অর্থে বলা হয়েছে। কোরআনের সবচে; দীর্ঘ আয়াত সুরা বাকারার ২৮২ নম্বর আয়াত।

২. শয়তান থেকে সুরক্ষা: রাসুল (সা.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি রাতে আয়াতুল কুরসি পড়বে, আল্লাহ তার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত করবেন এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তার কাছে আসতে পারবে না।” (সহিহ বুখারি, হাদিস ২৩১১)

৩. নামাজের পর পড়ার ফজিলত: রাসুল (সা.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, তার জান্নাতে প্রবেশে কেবল মৃত্যু বাধা হয়ে থাকবে।” (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৯৯২৮; সহিহুল জামি’, হাদিস: ৬৪৬৪)

মুফাসসিরদের ব্যাখ্যা

ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, আয়াতুল কুরসি আল্লাহর মহিমার এমন সার্বিক বর্ণনা, যা আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠায় সর্বশ্রেষ্ঠ দলিল। এখানে আল্লাহর জীবন, জ্ঞান ও কুদরতের পূর্ণতা বর্ণিত হয়েছে। (কুরতুবি, আল-জামি লি আহকামিল কুরআন, ৩/২৭৬, দারুল কুতুব আল-মিসরিয়্যাহ, ১৯৬৪)

আরও পড়ুন‘ফজিলত’ বলতে কী বোঝায়১৩ জুলাই ২০২৫

ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন, এই আয়াত প্রমাণ করে আল্লাহর কুরসি সমগ্র আসমান-জমিনকে পরিবেষ্টন করেছে। আর “কুরসি” বলতে বোঝানো হয়েছে তাঁর মহিমান্বিত সিংহাসন বা ক্ষমতার আসন। (ইবনে কাসীর, তাফসিরুল কুরআনিল আজিম, ১/৩৯৯, দারুস সালাম, ১৯৯৯)

ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, আয়াতুল কুরসি হলো তাওহীদের স্পষ্টতম ব্যাখ্যা। যে এটিকে আন্তরিকভাবে পাঠ করবে, তার ঈমান আরও দৃঢ় হবে এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা বাড়বে। (ইবনে কাইয়িম, আল-ফাওয়ায়েদ, পৃ. ১০৩, দারুল মাআরিফ, কায়রো, ২০০৪)

কেন আয়াতুল কুরসি এত তাৎপর্যপূর্ণ?

১. এতে তাওহীদের ঘোষণা আছে, যা আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করে।

২. আল্লাহর হেফাজতের প্রতিশ্রুতি আছে, অর্থাৎ, শয়তান ও অশুভ শক্তি থেকে মানুষকে রক্ষা করে।

৩. আত্মার প্রশান্তি লাভ হয় এবং পাঠ করলে হৃদয়ে সান্ত্বনা আসে।

৪. জান্নাতের সুসংবাদ আছে, অর্থাৎ, নামাজের পর নিয়মিত পাঠকারীর জন্য জান্নাত অবধারিত।

কখন পড়ব আয়াতুল কুরসি

প্রতিটি ফরজ নামাজের পর পড়া।

ঘুমানোর আগে পড়া।

বিপদের সময়ে পড়া।

বাচ্চাদের শেখানো যাতে তারা আল্লাহর হেফাজতে থাকে।

আয়াতুল কুরসি কেবল একটি আয়াত নয়; এটি মুমিনদের জন্য ঢাল, প্রশান্তি ও ঈমানের দৃঢ়তা। আল্লাহর মহিমা ও একত্বের ঘোষণা সম্বলিত এই আয়াতের ফজিলত কোরআন ও হাদিসে বারবার উল্লেখিত হয়েছে।

এজন্য আমাদের প্রত্যেকের উচিত আয়াতুল কুরসি মুখস্থ করা, নিয়মিত পাঠ করা এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের চেষ্টা করা।

আরও পড়ুনকোরআনের সঙ্গে সংযোগ বাড়াতে ‘কোরআন জার্নালিং’২২ জুলাই ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত ল ক রস র ন ম জ র পর ক রআন র র জন য আল ল হ একত ব

এছাড়াও পড়ুন:

লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণে এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে সরকারের চুক্তি

লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে এই চুক্তি করা হয়েছে।

আজ সোমবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দুই পক্ষ এ চুক্তিতে সই করে। এতে ডেনমার্ক, বাংলাদেশ সরকার ও বন্দর সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকেরা অংশ নেন।

চুক্তিতে সই করেন এপিএম টার্মিনালসের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টেইন ভ্যান ডোঙ্গেন ও চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।

ডেনমার্কের পক্ষে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইবিএস এপিএম টার্মিনালসের হেড অব ইনভেস্টমেন্ট ভাস্কর সেনগুপ্ত, ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টেট সেক্রেটারি লিনা গান্ডলোসে হ্যানসেন ও বাংলাদেশে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার। বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও আশিক চৌধুরী, নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন (অব.) ও নৌপরিবহন সচিব নুরুন্নাহার চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনবলেন, ‘এই চুক্তি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতির জন্য বড় অবদান। যাঁদের মধ্যে এ নিয়ে সন্দেহ ছিল, আশা করি, আজ তা দূর হবে।’ তাঁর আরও আশা, এই ধারাবাহিকতায় মোংলা সমুদ্রবন্দর পরিচালনায়ও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে।

পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও আশিক চৌধুরী বলেন, ‘লালদিয়া দেখিয়ে দিয়েছে—পিপিপি শুধু তত্ত্বে নয়, বাস্তবেও কার্যকর। ভবিষ্যতেও আমরা বাস্তবায়ন-কেন্দ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নেই মনোযোগ দেব।’ তিনি আরও জানান, আগামী কয়েক বছরে চারটি নতুন সমুদ্রবন্দর বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এর মধ্যে আছে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর, একটি আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ও একটি নির্ধারিত মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল।

ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোক্কে রাসমুসেন বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই ডেনমার্কের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত পাঁচ দশকে দুই দেশের উন্নয়ন সহযোগিতার সফলতা দেখা গেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমাদের সম্পর্ক সহায়তা থেকে ব্যবসায় রূপ নিয়েছে। মাথাপিছু হিসাবে ডেনমার্ক বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানি গন্তব্য। বাংলাদেশের বন্দর অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্য পূরণে লালদিয়া প্রকল্প নতুন মাইলফলক।’

পরিবহন কোম্পানি মেয়ার্স্কের চেয়ারম্যান রবার্ট মেয়ার্স্ক উগলা বলেন, লালদিয়া হবে অত্যাধুনিক গ্রিনফিল্ড টার্মিনাল; সেখানে নিরাপত্তা, অটোমেশন ও স্থায়িত্বের সর্বোচ্চ মান থাকবে। এতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। সেই সঙ্গে লজিস্টিকস খাতের অগ্রযাত্রায় এটি বিশেষ মুহূর্ত হয়ে থাকবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ