সিলেটের সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে বৈধতা চেয়ে আবারও বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছে। অন্যদিকে পরিবহনসংশ্লিষ্ট কয়েকটি সংগঠন এসব যান চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়ে সমাবেশ করেছে। আজ শনিবার দুপুরে নগরে পাল্টাপাল্টি এসব কর্মসূচি হয়।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরের কোর্ট পয়েন্টে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে সমাবেশ হয়। ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল বন্ধ এবং গত বৃহস্পতিবার এসব যানের চালকদের দ্বারা সিএনজি অটোরিকশা, ট্রাক, লেগুনার ওপর হামলার প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালিত হয়।

সংগঠনের সভাপতি হাজী ময়নুল ইসলাম সমাবেশে বলেন, আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও টমটম বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া গত বুধবার যেসব ব্যাটারিচালিত যানের চালক ভাঙচুর চালিয়েছেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে ৮ অক্টোবর থেকে সব পরিবহনের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে।

এদিকে দুপুর ১২টার দিকে নগরের আম্বরখানা এলাকা থেকে অভিন্ন ও সমন্বিত নীতিমালা চূড়ান্ত করে ব্যাটারিচালিত যানের নিবন্ধন ও চালকদের লাইসেন্স প্রদানসহ আট দফা দাবিতে মিছিল হয়। সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট এবং রিকশা, ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ সিলেট জেলা ও মহানগরের উদ্যোগে আয়োজিত এ মিছিল শেষ হয় নগরের চৌহাট্টা এলাকায়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট সিলেটের সভাপতি আবু জাফরের সভাপতিত্বে সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ব্যাটারিচালিত রিকশা ভ্যান ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ সিলেট মহানগরের সভাপতি প্রণব জ্যোতি পাল। বক্তারা বলেন, ব্যাটারিচালিত যানগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনলে ৫০ ভাগ সমস্যা শুরুতেই দূর হয়ে যাবে।

এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে মহানগর পুলিশের উদ্যোগে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়। এতে কয়েক শতাধিক অবৈধ যানবাহন আটকের পাশাপাশি মামলা করা হয়। অভিযানের অংশ হিসেবে গত বুধবার নগরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশার চার্জিং পয়েন্টেও অভিযান চালিয়ে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

অভিযানের প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে নগরে বিক্ষোভ করেন কয়েক শ চালক। বিক্ষোভের একপর্যায়ে কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশাসহ যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে ব্যাটারিচালিত যানের চালকেরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে রাস্তায় তাঁদের যান চলাচলে বৈধতার দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন।

এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরীর উদ্যোগে তাঁর কার্যালয়ে নগরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে নগরের যানজট নিরসন, পথচারী ও যাত্রীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে আলোচনা হয়। এ সময় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা ব্যাটারিচালিত ও অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়ে ‘সর্বস্তরের সিলেট নগরবাসী’র ব্যানারে আগামীকাল রোববার মিছিল ও সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেন।

বৈঠকে থাকা সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বেলা সাড়ে ১১টায় নগরের কোর্ট পয়েন্ট থেকে মিছিল শুরু হয়ে চৌহাট্টা এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে শেষ হবে। পরে সেখানে সমাবেশ হবে। এতে নগরের সর্বস্তরের মানুষকে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র উদ য গ নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

রুনা লায়লার জন্মদিন: সংগীতজীবনের বর্ণময় ৬ দশকের উদ্‌যাপন

উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। সোমবার (১৭ নভেম্বর) ৭৩ বছর পূর্ণ করলেন। একইসঙ্গে পূর্ণ করলেন তার গৌরবময় সংগীত-জীবনের ৬০ বছর। উপমহাদেশের তিন দেশ—বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে সমানতালে গান গেয়ে কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছেন রুনা লায়লা। ১৮টি ভাষায় তার গাওয়া গানের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। ফলে তিনি যে উপমহাদেশের শীর্ষ সংগীতশিল্পীদের একজন—এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বাংলাদেশের বাংলা গানকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেওয়ার পেছনে তার অবদান অনন্য। দেশ-বিদেশ থেকে প্রাপ্ত অগণিত স্বীকৃতির মাঝে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ তার অর্জনকে আরো মহিমান্বিত করেছে।

আরো পড়ুন:

কনসার্টে গায়ক একনের পরনের প্যান্ট নিয়ে টানাটানি

চতুর্থ সন্তানের মা হলেন কার্ডি বি

ভক্তদের কাছে রুনা লায়লার এবারের জন্মদিনটি বিশেষ। কোক স্টুডিও বাংলার তৃতীয় মৌসুমের শেষ গানটি প্রকাশ পেয়েছে তার গাওয়া জনপ্রিয় সুফি কাওয়ালি ‘দামা দম মাস্ত কালান্দার’ দিয়ে—যে গানটি বহু বছর আগে তাকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দিয়েছিল।

তবে জন্মদিন নিয়ে শিল্পীর বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি জানান, পরিবারকে সময় দিয়েই কাটাবেন দিনটি। ঘরোয়া পরিবেশেই উদ্‌যাপিত হবে জন্মদিন।

১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন রুনা লায়লা। সংগীতজীবনের শুরু ষাটের দশকের শেষ দিকে পাকিস্তানের চলচ্চিত্র শিল্পে। শিল্পী আহমেদ রুশদির গায়কিতে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগীতাঙ্গনে পথচলা শুরু করা এই কণ্ঠশিল্পী দ্রুতই উর্দুভাষী শ্রোতাদের মন জয় করে নেন। ‘উনকি নজরোঁ সে মোহাব্বত কা জো পয়গাম মিলা’—এর মতো গান তাকে এনে দেয় ব্যাপক জনপ্রিয়তা।

এরপর ভারতেও ছড়িয়ে পড়ে তার কণ্ঠের জাদু। ‘ও মেরা বাবু ছৈল ছাবিলা’ তাকে পরিচিত করে তোলে সাদাকালো যুগেই। পরে সংগীত পরিচালক বাপ্পি লাহিড়ীর সঙ্গে ‘ডিস্কো দিওয়ানে’ (১৯৮২) অ্যালবাম তাকে বিশ্বব্যাপী নতুন আরেক পরিচিতির শিখরে পৌঁছে দেয়। 

যদিও তিন দেশে সাফল্য পেয়েছেন, রুনা লায়লার সংগীতজীবনের মূল ভিত্তি ছিল বাংলাদেশ। ‘দ্য রেইন’ (১৯৭৬), ‘জাদুর বাঁশি’ (১৯৭৭), ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ (১৯৮৯), ‘অন্তরে অন্তরে’ (১৯৯৪)—সহ মোট সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ গায়িকা নির্বাচিত হয়েছেন। ‘সাধের লাউ বানাইলা মোরে বৈরাগী’, ‘বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িতে গেলাম’—এর মতো বাংলা লোকগান তার কণ্ঠে নতুন প্রাণ পেয়েছে। 

দীর্ঘ ও সফল এই যাত্রায় মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি—এ কথা প্রায়ই উল্লেখ করেন রুনা লায়লা। তিনি বলেন, “মা আমাকে প্রচণ্ড সহযোগিতা করেছেন। ছোটবেলায় গান গাইতে গেলে মা সবসময় সঙ্গে যেতেন।”

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ