শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ঠিক আগের দিন মাকে চুল কাটানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন ওয়াকিল আহমেদ শিহাব (১৮)। যোগ দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে। ফেনীর মহিপালে সেই মিছিলে নির্বিচার গুলি চালান আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তিনটি গুলি ঝাঁঝরা করে দেয় শিহাবের বুক।

শিহাব ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমপুর গ্রামের প্রবাসী সিরাজুল ইসলামের বড় ছেলে। ২০২৩ সালে স্থানীয় জায়লস্কর উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ছোট ভাই ওয়ামিদ আহমেদ সায়েম মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে।

শিহাব শহীদ হওয়ার কয়েক মাস আগে তাঁর বাবা সিরাজুল ইসলাম সৌদি আরবে যান। শিহাবেরও ইচ্ছা ছিল বিদেশে গিয়ে পরিবারের হাল ধরবেন। এ জন্য পড়ালেখার পাশাপাশি মহিপাল প্লাজায় মোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ শিখছিলেন।

ছেলে হারানোর শোক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি শিহাবের মা মাহফুজা আক্তার। সম্প্রতি তাঁর বাড়িতে গিয়ে ছেলের বিষয়ে কথা তুলতেই কেঁদে ওঠেন তিনি। আক্ষেপ করে বলেন, এক বছর অতিবাহিত হলেও মামলার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। গুলিবর্ষণকারী সন্ত্রাসীরা কেউ ধরা পড়েনি।

মহিপালে অস্ত্র হাতে হামলায় অংশ নেওয়া অন্তত ৩০ জনের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে। এই অস্ত্রধারী এবং হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্বে থাকা সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের কেউ গ্রেপ্তার হননি।

ছেলেকে হারানোর পর বিগত এক বছরে সরকারি–বেসরকারিভাবে বিভিন্ন অনুদান পেয়েছেন জানিয়ে মাহফুজা বলেন, সবকিছুর ঊর্ধ্বে তাঁর কাছে ছেলে হত্যার বিচার।

শিহাবের সঙ্গে সেদিন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গুলিতে ফেনীর মহিপাল এলাকায় সাতজন ছাত্র-জনতা প্রাণ হারান। ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে শিহাবের মা গত বছরের ২০ আগস্ট ফেনী মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।

পুলিশের তথ্য অনুসারে, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ফেনীর মহিপালে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৭টি হত্যা মামলা ও ১৫টি হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২ হাজার ১৯৯ জন এজাহারভুক্ত আসামি। এর মধ্যে একই ব্যক্তির নাম অনেক মামলায় রয়েছে। পুলিশ এ পর্যন্ত এক হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। একটি মামলায় (কলেজছাত্র মাহবুবুল হাসান মাসুম হত্যা) গত ৩১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।

গত বছরের ৪ আগস্ট ছাত্র–জনতার ওপর হামলায় অংশ নেওয়া চিহ্নিত আসামিদের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন কেবল তিনজন—নূর নবী মেম্বার, ছাত্রলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম ও পৌরসভার সাবেক কমিশনার খালেদ হাসান। তবে মহিপালে অস্ত্র হাতে হামলায় অংশ নেওয়া অন্তত ৩০ জনের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে। এই অস্ত্রধারী এবং হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্বে থাকা সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের কেউ গ্রেপ্তার হননি। বরং দেশে–বিদেশে থাকা নেতা–কর্মীরা ফোনে, ভিডিও কলে একে অন্যের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

ফেনী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কহিনূর আলম.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

আজমেরী ওসমানের দুই সহোযোগীসহ আ’লীগের ৩ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে আজমেরী ওসমানের দুই সহোযোগীসহ আওয়ামী লীগের ৩ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার রাতভর অভিযান চালিয়ে তাদেরকে ফতুল্লা থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ফতুল্লার  রামারবাগ এলাকার আওয়মীলীগ নেতা মৃত লেহাজ আলীর পুত্র তাহের আলী (৬১), আজমেরী ওসমানের সহোযোগী এনায়েতনগর শাসনগাও এলাকার হাজী আলমাস আলী সর্দারের পুত্র মোঃ সাগর সর্দার (২৬) ও একই এলাকার শহিদুল ইসলামের পুত্র মোঃ সেতু (৪৫)।

ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া তারা ফতুল্লায় আতঙ্ক সৃষ্টি করতে নাশকতার পরিকল্পনা করেছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠনো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ