ভারতে ‘আই লাভ মোদি’ বলা গেলেও ‘আই লাভ মুহাম্মদ (সা.)’ বলা যায় না: ওয়াইসি
Published: 4th, October 2025 GMT
ভারতের হায়দরাবাদ থেকে নির্বাচিত লোকসভার সদস্য এবং অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) সভাপতি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, এ দেশে ‘আই লাভ মোদি’ বলা সম্ভব, কিন্তু ‘আই লাভ মুহাম্মদ (সা.)’ বলা সম্ভব নয়।
হায়দরাবাদে এক জনসভায় বক্তৃতাকালে ওয়াইসি বলেন, ‘দেশের আইন এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূয়সী প্রশংসা করা সম্ভব, কিন্তু মহানবী মুহাম্মদ (সা.
ওয়াইসি গত ২৬ সেপ্টেম্বর বেরেলিতে ঘটা সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করছিলেন। সেখানে জুমার নামাজের পর ‘আই লাভ মুহাম্মদ (সা.)’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া লোকজনকে পুলিশ বাধা দিয়েছিল। বেশির ভাগ মানুষ ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেও অভিযোগ রয়েছে, ভিড়ের মধ্যে থাকা কিছু লোক পাথর ছুড়েছিল, স্লোগান দিয়েছিল এবং গুলি চালিয়েছিল।
ওই সহিংসতার ঘটনায় ৮০ জনের বেশি লোককে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ইত্তেহাদ-ই-মিল্লাত কাউন্সিলের (আইএমসি) প্রধান মাওলানা তকির খান এবং তাঁর কিছু সহযোগীও রয়েছেন। তাঁরা পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘শুটআউটে’ আহত হয়েছিলেন।
এ বিতর্ক নিয়ে ওয়াইসি আরও বলেন, ‘সম্ভল মসজিদ নিয়ে একটি মামলা চলছে। আমাদের মসজিদগুলো কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এ দেশে একজন “আই লাভ মোদি” বলতে পারেন, কিন্তু “আই লাভ মুহাম্মদ (সা.)” বলতে পারেন না। আপনারা এ দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? যদি কেউ “আই লাভ মোদি” বলে পোস্টার লাগায়, সবাই খুশি হয়। কিন্তু যদি কেউ “আই লাভ মুহাম্মদ (সা.)” বলে, তাহলে তাতে আপত্তি জানানো হয়।’
এআইএমআইএম নেতা বলেন, তিনি ‘মুহাম্মদ (সা.)–এর কারণেই’ একজন মুসলমান। তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা কী করতে চান? দেশের স্বাধীনতায় অংশগ্রহণকারী ১৭ কোটি ভারতীয় মুসলিমের জন্য তাঁর (নবী) ঊর্ধ্বে আর কিছু নেই। আমরা হিংসার নিন্দা করি। কিন্তু এমনটা হওয়া উচিত নয় যে যারা নবীর নামকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে, আপনি তাদেরই নিন্দা করছেন।’
ওয়াইসি যোগ করেন, ‘আমি এমন ভিডিও দেখছি, যেখানে পুলিশ লাঠিপেটা করছে আর কিছু লোক পুলিশের ওপর ফুলের পাপড়ি বর্ষণ করছে। এরা কারা?’
তবে ওয়াইসি এ–ও বলেছেন, যাঁরা পোস্টার লাগান, তাঁদের আইনের সীমার মধ্যে থাকা উচিত। তিনি আরও বলেন, ‘যাঁরা “আই লাভ মুহাম্মদ (সা.)” পোস্টার লাগাও, তাদের বলতে চাই, পোস্টার লাগালে তোমাদের সেই পোস্টারকে সম্মানও করতে হবে।’
ভারতের এই মুসলিম নেতা বলেন, মহানবীকেই সর্বপ্রথম ‘মুহাম্মদ (সা.)’ নামে নামকরণ করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ‘তরুণদের বলছি, আমাদের আইন অমান্য করা উচিত নয়। যা কিছুই ঘটুক না কেন, আমাদের আইনের পরিধির মধ্যেই থাকা উচিত।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আই ল ভ ম দ আরও বল ন র আইন
এছাড়াও পড়ুন:
জবি ছাত্র জোবায়েদ হত্যা মামলায় ২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জোবায়েদ হোসেন হত্যা মামলায় দুইজন সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিজাম উদ্দীন তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
আরো পড়ুন:
সখীপুরে মেয়েকে হত্যার পর নিজেকে শেষ করলেন মা
নেত্রকোণায় চালককে হত্যা করে মোটরসাইকেল ছিনতাই
সাক্ষীরা হলেন, জবি শিক্ষার্থী সৈকত হোসেন এবং সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. ওয়াহিদুর রহমান। সৈকত নিহত জোবায়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই এবং ডা. ওয়াহিদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি বর্ষার মামা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বংশাল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশরাফ হোসেন সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আবেদন করেন।
জবানবন্দিতে সৈকত বলেন, “আমি জবির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ও জোবায়েদ ভার্সিটির বড় ভাই। আমি জোবায়েদ ভাইয়ের ক্লোজ ছোট ভাই হওয়াতে বর্ষা আমার নাম্বার জোবায়েদ ভাই থেকে নেয়। মাঝে মাঝে হোয়াটসঅ্যাপ হাই, হ্যালো কথাবার্তা হত। ২-৩ মাস আগে বর্ষা আমাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। তখন থেকে বর্ষার সঙ্গে আমার আর যোগাযোগ হয়নি। জোবায়েদ ভাই প্রায় ১ বছর ধরে বর্ষাকে বাসায় টিউশন পড়াত।”
তিনি বলেন, “ভার্সিটি এলাকায় থাকাকালে গত ১৯ অক্টোবর বিকেল ৫টা ৫৮ মিনিটের দিকে বর্ষা তাকে ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ দেয়, ‘ভাইয়া কই তুমি?’ আমি জানাই ক্যাম্পাসে। বর্ষা বলে, ‘স্যারের আম্মুর নাম্বার আছে?’ কারণ জানতে চাইলে বর্ষা বলে, ‘লাগবে।’ ভাইয়ের কিছু হয়ছে কি না জানতে চাইলে বর্ষা বলে, ‘ভাইরে (জোবায়দে) কে জানি মাইরা ফেলছে।’ আমি বলি, মাইরা ফেলছে বলতে? বর্ষা বলে, ‘খুন করে ফেলছে।’ তখন বর্ষাকে কল দেওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। এরপর বিষয়টি বড় ভাইদের জানাই।”
ডা. ওয়াহিদুর রহমান জবানবন্দিতে বলেন, “গত ১৯ অক্টোবর সাপ্তাহিক নৈশ্যকালীন ডিউটি থাকায় বাসায় অবস্থান করছিলাম এবং ড্রইং রুমে বসে টিভি দেখছিলাম। হঠাৎ আমার স্ত্রীকে দ্বিতীয় তলার চাচাতো ভাই ফোন করে জানায়, সিঁড়িতে কোনো একজন লোক পড়ে আছে। আমরা তখন সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে দেখি সিঁড়ির মাঝামাঝি একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।”
তিনি বলেন, “তাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে বাড়ির লোকজন জড় হয়ে যায় এবং সেখানে শনাক্ত হয় যে, আমার ভাগ্নি বর্ষার প্রাইভেট টিউটর জুবায়েদের মরদেহ। তাৎক্ষণিক ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে অবহিত করি।”
বর্ষার মামা জানান, পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন তার ভাগ্নি বর্ষার সঙ্গে মাহির নামক এক ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং জোবায়েদ মাস্টারের সঙ্গেও বর্ষার প্রেম ছিল। এই দ্বন্দ্বের কারণে মাহির রহমান, জোবায়েদ মাস্টারকে হত্যা করে ঘটনার দিন দৌড়ে পালিয়ে যায়।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, মো. জোবায়েদ হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করতেন। প্রতিদিনের মতো গত ১৯ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বংশাল থানাধীন ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে নুর বক্স লেনের ১৫ নম্বর হোল্ডিং রৌশান ভিলায় বর্ষাকে পড়ানোর জন্য যান।
সন্ধ্যা ৫টা ৪৮ মিনিটের দিকে ওই ছাত্রী জোবায়েদ হোসেনের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই সৈকতকে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে জানায়, “জোবায়েদ স্যার, খুন হয়ে গেছে। কে বা কারা জোবায়েদ স্যারকে খুন করে ফেলছে।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. কামরুল হাসান ৭টার দিকে জোবায়েদের ভাই এনায়েত হোসেনকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তথ্যটি জানান। এনায়েত তার শ্যালক শরীফ মোহাম্মদকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাস্থল রৌশান ভিলায় পৌঁছান। ভবনের নিচতলা থেকে ওপরে ওঠার সময় সিঁড়ি এবং দেয়ালে রক্তের দাগ দেখতে পান। ওই ভবনের তৃতীয় তলার রুমের পূর্ব পার্শ্বে সিঁড়িতে জোবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ উপুড় অবস্থায় দেখতে পান।
ঘটনার দুইদিন পর ২১ অক্টোবর জোবায়েদের ভাই এনায়েত হোসেন বংশাল থানায় মামলা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে জোবায়েদকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলার ডান পাশে আঘাত করে হত্যা করেছে।
মামলায় বর্ষা, তার প্রেমিক মো. মাহির রহমান, মাহিরের বন্ধু ফারদীন আহম্মেদ আয়লান ২১ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছে।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী