সার কারখানার জন্য গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব
Published: 6th, October 2025 GMT
ইউরিয়া সার উৎপাদনের ক্ষেত্রে মূল কাঁচামাল হিসেবে কাজ করে প্রাকৃতিক গ্যাস। কিন্তু গ্যাস–সংকটে বছরের বেশির ভাগ সময় সরকারি সার কারখানা বন্ধ রাখতে হয়। প্রতিবছর সার উৎপাদন কমছে। চাহিদা মেটাতে বাড়তি দামে সার আমদানি করতে হচ্ছে। এখন আমদানি কমিয়ে উৎপাদন বাড়াতে চায় সরকার। তাই গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়ে সার কারখানা চালু রাখার নামে বাড়ছে গ্যাসের দাম।
সার কারখানায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে আজ সোমবার গণশুনানি করেছে জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এতে অংশীজনেরা বলেন, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের কথা বলে ২০২২ সালে শিল্পে ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয় গ্যাসের দাম। যদিও বাড়তি দাম দিয়ে গ্যাস পায়নি শিল্প। সার কারখানায় প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম দাম ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করার পরও কারখানা বন্ধ ছিল। এখন আরও বাড়িয়ে ৩০ টাকা করার চেষ্টা চলছে।
সরকারি মালিকানায় ৫টি ইউরিয়া সার কারখানা আছে। এগুলো বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) অধীনে। সংস্থাটির কর্মকর্তারা শুনানিতে জানান, গ্যাসের অভাবে গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) যমুনা সার কারখানা বন্ধ ছিল ৩৫১ দিন। তার মানে চালু ছিল মাত্র ১৪ দিন। আশুগঞ্জ সার কারখানা বন্ধ ছিল ২৫৯ দিন। শাহজালাল সার কারখানা বন্ধ ছিল ১৪৭ দিন। চট্টগ্রাম ইউরিয়া কারখানা বন্ধ ছিল ৮১ দিন। এর আগের বছরেও বেশির ভাগ সময় বন্ধ ছিল কারখানা। ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকেই বছরের বড় একটি সময় সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা শুরু হয়।
রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে আজ সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গণশুনানি চলে। এতে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) ও ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি দাম বাড়ানোর অভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরে। তারা সার কারখানার জন্য গ্যাসের দাম ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে বিইআরসি গঠিত কারিগরি কমিটির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা নির্ধারণের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়।
এর আগে গত ১০ আগস্ট সার কারখানায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় পেট্রোবাংলা। এরপর একই প্রস্তাব আলাদা করে জমা দেয় ৬টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। এতে বলা হয়, প্রতি ঘনমিটার গ্যাসে গড়ে খরচ হয় ২৮ টাকা ৭৮ পয়সা। বর্তমানে বিক্রি করা হচ্ছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সা। প্রতি ঘনমিটারে লোকসান হচ্ছে ৫ টাকা ৮৫ পয়সা। এতে চলতি অর্থবছরে ১২ হাজার ২৯১ কোটি টাকা ঘাটতি হতে পারে। সরকার ভর্তুকি বরাদ্দ রেখেছে ৬ হাজার কোটি টাকা। সার কারখানায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে ঘাটতি কমানো সম্ভব হবে।
শুনানি শেষে বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, ২০ বছর আগে প্রিপেইড মিটারের কাজ শুরু হয়েছে, এখনো ২০ শতাংশ হয়নি। সদিচ্ছা থাকলে এটা হতো। গ্যাস খাতে সিস্টেম লস (কারিগরি ক্ষতি) কমাতে সদিচ্ছা থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, ১৭ কোটি মানুষকে খাইয়ে পরিয়ে রাখছে কৃষি। তাই কৃষির জন্য বোঝা তৈরি করা যাবে না। সার কারখানায় উৎপাদন ধরে রাখতে হবে। আবার পেট্রোবাংলার ঘাটতিও করা যাবে না। সব দিক চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। সবার মতামত বিবেচনা করা হবে। এর বাইরে ১৩ অক্টোবরের মধ্যে লিখিত মতামত দিতে পারবেন।
শুনানিতে অংশ নিয়ে নাগরিকদের কেউ কেউ গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করেন। তাঁরা বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে সারের উৎপাদন খরচ বাড়বে। এরপর সেই অজুহাতে সারের দাম বাড়ানো হবে। এতে কৃষিপণ্যের খরচ বাড়বে, যা ভোক্তার ওপর প্রভাব পড়বে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো.
তবে বিসিআইসির পরিচালক (পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ২০২২ সালে গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দাম বাড়িয়েছিল, সেটা রক্ষা করা হয়নি। এতে আগের চেয়ে বছরে উৎপাদন কমেছে ৩ লাখ টন। গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। আর দাম যদি বাড়াতেই হয়, তাহলে ১৬ টাকা থেকে ৪ টাকা বাড়িয়ে ২০ টাকা করা যেতে পারে। এতে কৃষক বাঁচবে।
বিসিআইসির তথ্য বলছে, ২০০৬-০৭ সালে তারা সার উৎপাদন করেছে ১৮ লাখ ১৭ হাজার টন। কমতে কমতে ২০২১-২২ সালে করেছে ১০ লাখ ১০ হাজার টন। গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর ২০২২-২৩ সালে করেছে ৭ লাখ ১৮ হাজার টন ও ২০২৩-২৪ সালে করেছে ৬ লাখ ৯৪ হাজার টন। তবে গত অর্থবছরে উৎপাদন ১০ লাখ টন ছাড়িয়েছে। যদিও এর মধ্যে প্রায় ৮ লাখ টন উৎপাদন করেছে গত বছরের মার্চে উৎপাদনে আসা ঘোড়াশালের নতুন সার কারখানা। সেই হিসাবে আগের কারখানাগুলোয় উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ টন। যদিও পুরোনো কারখানাগুলোর জ্বালানির সাশ্রয়ী ব্যবহারের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শুনানিতে। বিসিআইসির কর্মকর্তারা শুনানিতে বলেন, প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা করা হলেও সার আমদানির চেয়ে দেশে সার উৎপাদন খরচ কম হবে।
শুনানিতে অংশ নেবে না বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছিল ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম আজ প্রথম আলোকে বলেন, দাম বাড়ানোর পর গ্যাস পাবে কোথায়? আগেও গ্যাস দেবে বলে দাম বাড়ানো হয়েছিল। এভাবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর সারের দাম বাড়বে। সারের দাম বাড়লে কৃষি ধ্বংস হয়ে যাবে। এরপর খাদ্যও আমদানি করতে হবে। দেশ ধীরে ধীরে আমদানি বাজারে পরিণত হচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ য স সরবর হ র প রস ত ব হ জ র টন বন ধ ছ ল ব স আইস ল খ টন সরক র আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা কমেছে: এফএও
বিশ্ববাজারে সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বরে খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা কমেছে। বিশেষ করে চিনি ও দুগ্ধজাত পণ্যের দাম হ্রাস পেয়েছে। যদিও মাংসের মূল্য কিছুটা বেড়েছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আজ শুক্রবার জানিয়েছে, গত মাসে বৈশ্বিক খাদ্য মূল্যসূচক কিঞ্চিৎ কমে ১২৮ দশমিক ৮ পয়েন্ট হয়েছে, যা আগের মাস আগস্টে (সংশোধিত) ছিল ১২৯ দশমিক ৭ পয়েন্ট।
এফএওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে চিনির দাম কমে ২০২১ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। যদিও গত জুলাইয়ে পণ্যটির দাম দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। পরের মাসেও সেই দাম স্থিতিশীল ছিল। তবে সেপ্টেম্বরে চিনির মূল্যসূচক ৪ দশমিক ১ শতাংশ কমে।
চিনির দাম কমার মূল কারণ হচ্ছে, সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি। এবার ব্রাজিলে উৎপাদন প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হয়েছে। ভারত ও থাইল্যান্ডেও ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে দুগ্ধজাত পণ্যের মূল্যসূচক গত মাসে ২ দশমিক ৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। মূলত মাখনের দাম কমার কারণে এটির মূল্য হ্রাস হয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এফএওর শস্যসূচক আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। এর মধ্যে বৈশ্বিক চাহিদা কমার ফলে গমের দাম তিন মাস ধরে কমছে। আর্জেন্টিনা রপ্তানি কর সাময়িকভাবে স্থগিত করায় ভুট্টার দামও কমেছে। আবার ফিলিপাইন ও আফ্রিকার ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ কমায় চালের মূল্যসূচকও গত মাসে হ্রাস পেয়েছে।
গরু ও ভেড়ার মাংসের দাম বাড়ার কারণে গত মাসে মাংসের মূল্যসূচক শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে দেশীয় সরবরাহ সীমিত ও তার বিপরীতে চাহিদা বৃদ্ধির কারণে গরুর মাংসের দাম নতুন করে শীর্ষে পৌঁছেছে।
এফএওর এক পৃথক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক শস্য উৎপাদন ২ দশমিক ৯৭১ বিলিয়ন মেট্রিক টন হতে পারে, যা আগস্টে দেওয়া ২ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন টনের পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরে বৈশ্বিক শস্য উৎপাদন গত বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি হতে পারে। তাহলে তা হবে ২০১৩ সালের পর সর্বোচ্চ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি।