বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরাহ বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৮টি ব্যাংক থেকে আজ সোমবার (৬ অক্টোবর) নিলামের মাধ্যমে ১০৪ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনায় বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সোমবার (৬ অক্টোম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

আরো পড়ুন:

পাচারের অর্থ উদ্ধারে ব্যাংকগুলোকে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির নির্দেশ

বিদেশে ৩ হাজার ডলার পাঠাতে পারবেন এসএমই উদ্যোক্তারা

তিনি জানান, বাজারে বর্তমানে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। এ কারণেই রিজার্ভ থেকে বিক্রি না করে বাজার থেকেই ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভবিষ্যতেও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে ১০৪ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে। নিলামে ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২১ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৮০ পয়সা পর্যন্ত। এই দামেই ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রিজার্ভে যোগ হচ্ছে নিলামে কেনা ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে মোট ১ হাজার ৯৮১ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। এসব ডলার দেশের ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।  

এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৮ দফায় ডলার কিনেছিল। এর মধ্যে গত ১৫ অক্টোবর ২৬টি ব্যাংক থেকে নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ১৩৪ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। ২ সেপ্টেম্বর একই দরে বাংলাদেশ ব্যাংক ৮ ব্যাংক থেকে ৪৭.

৫০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। ১৩ জুলাই ১৮টি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে এবং ১৫ জুলাই একই দরে ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২৩ জুলাই ডলার কিনেছে ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে। গত ৭ আগস্ট ১২১ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় এবং  গত ১০ আগস্ট ১১টি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বাড়ায় ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে। দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে, চাহিদা কমেছে। এ কারণে ডলারের দাম কিছুটা কমে গেছে। ডলারের দাম আরো কমে গেলে রপ্তানিকারকরা একদিকে সমস্যায় পড়বেন, অপরদিকে রেমিট্যান্স বৈধ পথে আসা কমে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়, যা খুবই যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। তাতে চাহিদা-যোগানের ভারসাম্য রক্ষা হবে এবং ডলারের বাজার স্থিতিশীল থাকবে।

গত ১৫ মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনার পর ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন থেকে ব্যাংক ও গ্রাহক নিজেরাই ডলারের দর নির্ধারণ করছে।

ঢাকা/নাজমুল/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ১২১ ট ক

এছাড়াও পড়ুন:

কাঠের চামচ-খুন্তি-ডালঘুঁটনি বদলে দিল এক জনপদ

যশোর সদরের তেঘরিয়া গ্রামের একরামুল হোসেন। ৩৪ বছর ধরে তাঁতের গামছা বুননের কাজ করছেন। এই কাজ করে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা তাঁর। তাই ৫২ বছর বয়সে এসে পেশা বদল করেন। এখন তিনি কাঠের খুন্তি, চামচ, লেবু চাপা, ডালঘুঁটনি তৈরি করে নিজের ভাগ্য বদলে ফেলেছেন। নিজেই গড়ে তুলেছেন কারখানা। এখন সেই কারখানায় নারী-পুরুষ মিলে ১৫ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে।

একরামুলের মতো তেঘরিয়া গ্রামের অন্তত ২৬ জন উদ্যোক্তা কাঠের খুন্তি, চামচ, লেবু চাপা, ডালঘুঁটনি, কাঠের চিরুনিসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরির ২৬টি কারখানা গড়ে তুলেছেন। এসব কারখানায় উৎপাদিত পণ্য ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। এসব কুটিরশিল্পে গ্রামের ৫০০ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তেঘরিয়া থেকে বছরে অন্তত ৫ কোটি টাকার পণ্য যাচ্ছে সারা দেশে। এভাবে গ্রামের ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প একটি জনপদের মানুষের জীবনযাত্রা বদলে দিয়েছে।

আমার কারখানায় নারী-পুরুষ মিলিয়ে ২৬ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। বছরে ৩০ থেকে ৩২ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করি। যার বড় অংশ যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটে। তবে চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারি না। সুবোধ রায়, উদ্যোক্তা

সম্প্রতি একরামুল হোসেনের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, একরামুলসহ চারজন চারটি যন্ত্রে কাঠের চামচ ও খুন্তি তৈরির কাজ করছেন। কাজ করতে করতেই একরামুল হোসেন বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৫৯ বছর। এর মধ্যে ১৯৮৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩৪ বছর তাঁতের গামছা ও লুঙ্গি বুননের কাজ করেছি। শেষ দিকে যে টাকা আয় হতো, তাতে সংসার চলত না। বাধ্য হয়ে তাই গ্রামের সুবোধ রায়ের কারখানায় কাজ শিখে নিজেই কাঠের খুন্তি–চামচ তৈরির কারখানা দিলাম। প্রথমে আমার তৈরি খুন্তি–চামচের ছবি তুলে ইন্টারনেটে দেয় আমার এক ভাতিজা। এর পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রয়াদেশ আসতে থাকে। এভাবেই ব্যবসার শুরু।’

একরামুল হোসেন আরও বলেন, ‘শুরুতে সুবোধ রায়ের কারখানায় কাজ শিখে সেখানে উৎপাদনের কমিশনে কাজ করতাম। এরপর এক লাখ টাকা বিনিয়োগে একটি মেশিন কিনি। এখন আমার কারখানায় আটটি যন্ত্র। এসব যন্ত্রে আটজন কাজ করেন। পাশাপাশি গ্রামের নারীরা উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য পলিশের কাজ করেন।’

তেঘরিয়া গ্রামের ২৬টি কারখানার মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো কারখানা সুবোধ রায়ের। ২০১২ সালে সুবোধ রায় কারখানাটি গড়ে তোলেন। এর আগে তিনি কাঠের আসবাব তৈরির কাজ করতেন। তাঁর কারখানা থেকে এর মধ্যে ৫০ জন কাজ শিখে হয় নিজেরা কারখানা করেছেন, নয়তো অন্যের কারখানায় কমিশনে কাজ করছেন।

সরেজমিনে সুবোধ রায়ের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, কারখানার দুটি অংশ। এক অংশ থেকে কাঠ কেটে সাইজ করে অন্য অংশে পাঠানো হচ্ছে। সেখানেই কাঠের গায়ে নানা ধরনের নকশা ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। খুন্তি, চামচ তৈরির পর সেগুলো বান্ডিল করে গ্রামের নারীরা বাড়িতে নিয়ে পলিশের কাজ করেন।

সুবোধ রায়ের কারখানায় কাজ করেন প্রদীপ ভাস্কর।‌ তিনি বলেন, ‘আমি কাটিং কারখানায় উৎপাদনের ওপর কমিশনে কাজ করি। তাতে মাসে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। নিজের গ্রামে বসে মাসে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করা সত্যিই খুব সৌভাগ্যের বিষয়।‌ এ গ্রামের মানুষ এখন কাঠের কাজের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল।’

কারখানার মালিক সুবোধ রায় বলেন, ‘আগে থেকেই আমি কাঠের আসবাব তৈরির কাজ করতাম। পরে চিন্তা করলাম বয়স বাড়ছে, নিজে কোনো কারখানা করলে শেষ বয়সে বাড়িতে বসেই দেখভাল করা যাবে। সেই সঙ্গে গ্রামের নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সেই চিন্তা থেকে ১৪ বছর আগে এই কারখানা গড়ে তুলেছি। এখন আমার কারখানায় নারী-পুরুষ মিলিয়ে ২৬ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। বছরে ৩০ থেকে ৩২ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করি। যার বড় অংশ যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটে। তবে চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারি না। কারণ, সব সময় বিদ্যুৎ থাকে না। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া গেলে বছরে ৫০ লাখ টাকার বেশি পণ্য বিক্রি করতে পারতাম।’

তেঘরিয়া গ্রামের সবচেয়ে বড় কারখানা এখন দিলীপ কুমার দাশের। তাঁর কারখানায় কাজ করেন ৩৫ থেকে ৪০ জন। তিনি বছরে প্রায় ৫০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেন। ‌একরামুল হোসেন, সুবোধ রায়, দিলীপ দাশের পাশাপাশি রমেশ রায়, অমল রায়, মণি গোপাল, সুজন রায়ের মতো উদ্যোক্তারা এই গ্রামে গড়ে তুলেছেন কুটিরশিল্প। তাতেই বদলে গেছে এই গ্রামের মানুষের ভাগ্য।

ক্রেতারা বলছেন, তেঘরিয়া গ্রামে উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান ভালো, দামও তুলনামূলক কম। তাই পাইকারি ব্যবসায়ীরা এই গ্রামে উৎপাদিত পণ্য কিনতে বেশি আগ্রহী।

এ বিষয়ে রাজধানী ঢাকার বাড্ডা এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ী তুহিন পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যশোরের মতো কাঠের খুন্তি, চামচ তৈরি কারখানার সন্ধান অন্য কোথাও পাইনি। যশোরের সুবোধ রায়ের কারখানা থেকে প্রতি মাসে অন্তত দুই লাখ টাকার পণ্য পাইকারি কিনে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করি। ওই কারখানার পণ্যের গুণগত মান ভালো, দামও তুলনামূলক কম।’

ঢাকার আরেক পাইকারি ক্রেতা মো. আবদুল্লাহ বলেন, ‘যশোর থেকে পণ্য কিনে আমি নরসিংদী, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাই।’

উদ্যোক্তা ও শ্রমিকেরা জানান, ‘মূলত মেহগনি কাঠ দিয়ে এসব পণ্য তৈরি হয়। মান বাড়াতে অনেক সময় নিম ও শিশু কাঠ ব্যবহার করা হয়। তেঘরিয়া গ্রামের এই কুটিরশিল্পের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। উদ্যোক্তাদের মূলধন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলে এই শিল্প দেশের অর্থনীতিতে আরও অবদান রাখতে পারবে।

একাধিক উদ্যোক্তা জানান, এই শিল্পের উদ্যোক্তাদের প্রধান সমস্যা মূলধনের অভাব। গ্রামে অনেক এনজিও ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি নিয়ে কাজ করে। এসব এনজিও থেকে চড়া সুদে উদ্যোক্তাদের ঋণ নিতে হয়। সহজ শর্তে কম সুদে ঋণ পাওয়া গেলে উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ সহজ হতো। এ ছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলে উৎপাদন আরও বাড়বে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উপমহাব্যবস্থাপক এনাম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘একই গ্রামে ২৬টি কুটিরশিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে, এটি আমার জানা ছিল না। শিগগিরই আমি ওই গ্রামের কারখানাগুলো পরিদর্শন করে কুটিরশিল্পের সুবিধার আওতায় আনব। এসব উদ্যোক্তাকে সহজ শর্তে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করব। বিসিকের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করতে আমরা প্রস্তুত।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ডেঙ্গু প্রতিরোধে ফগার মেশিন সরবরাহ, প্রশংসায় ভাসছেন শিল্পপতি বাবুল
  • সার কারখানার জন্য গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব
  • জন্মনিয়ন্ত্রণের সুখী বড়ির ফয়েল পেপার বেশি দামে কিনল এসেনসিয়াল
  • কাঠের চামচ-খুন্তি-ডালঘুঁটনি বদলে দিল এক জনপদ