মসুর ডালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা
Published: 7th, October 2025 GMT
খুচরা বাজারে এক কেজি মসুর ডালের দাম এখন ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। এই দাম ছোট দানার; অর্থাৎ সরু মসুর ডালের। গত দেড় মাস আগে বাজার থেকে এই ডাল কেনা যেত ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়; অর্থাৎ দেড় মাসের ব্যবধানে ছোট দানার মসুর ডালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। মসুর ডালের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে খুচরা বাজারে ছোলা ও অ্যাংকর ডালের দামও কিছুটা বেড়ে গেছে।
রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজারের বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে সরু মসুর ডালের সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মসুর ডালের বড় অংশই আমদানি করা হয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মসুর ডালের আমদানি আগের তুলনায় কিছুটা কমে গেছে। অন্যদিকে বাজারে সবজি ও মাছ–মাংসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ডালের চাহিদাও বেড়েছে। এসব কারণে দামও বাড়তি।
বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০–১৯০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০–৩২০ টাকা ও এক ডজন ডিম ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ সবজির কেজি ৮০ টাকার আশপাশে। মাছের দামও আগের তুলনায় চড়া। এ কারণে সীমিত ও নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ ডাল খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়েছেন।
গতকাল সোমবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার, কাঁঠালবাগান বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখেন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক। বাজার ঘুরে দেখা যায়, চারটি বাজারেই সরু দানার মসুর ডাল দেড় মাস আগের তুলনায় কেজিতে ২০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর অন্যান্য ডালের দামেও কিছুটা তারতম্য রয়েছে।
অবশ্য মোটা দানার মসুর ডালের দাম বাড়েনি। বর্তমানে প্রতি কেজি মোটা দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। কিছু কিছু দোকানে অবশ্য ১০৫ টাকাতেও তা বিক্রি হতে দেখা গেছে। অন্যান্য ডালের মধ্যে খুচরা পর্যায়ে ছোলা ও অ্যাংকর ডালের দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি ছোলা ১১০ টাকা, ছোলার ডাল ১২০–১২৫ টাকা ও অ্যাংকর ডাল ৭০–৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকান একতা জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা মো.
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের মুদিদোকানের একজন বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাইকারিতে ছোলা ও অ্যাংকর ডালের দাম বাড়েনি। তবে মসুর ডালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে খুচরা বিক্রেতারা এসব ডালের দাম কিছুটা বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।
বাজারে দাম কমেছে মুগ ডালের। দেড় মাস আগে ভালো মানের এক কেজি মুগ ডাল বিক্রি হয়েছে ১৭০–১৭৫ টাকায়। বর্তমানে তা ১৬০–১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে; অর্থাৎ কেজিতে প্রায় ১০ টাকা দাম কমেছে। আর আমদানি করা সাধারণ মানের মুগ ডালের দাম আরও কিছুটা কম, কেজি ১২০ টাকা।
অবশ্য সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবে, গত এক মাসে সরু মসুর ও ছোলার দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। অন্যান্য ডালের দাম অপরিবর্তিত আছে। তবে গত বছরের তুলনায় বর্তমানে সরু মসুর ডালের দাম ১৭ শতাংশ বেশি বলে উল্লেখ আছে টিসিবির তালিকায়। এক বছর আগে সরু মসুর ডালের কেজি ছিল ১৩০–১৩৫ টাকা।
বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ডাল আমদানিকারক নেসার উদ্দিন খান বলেন, গত দুই মাসে ডাল আমদানির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে সবজির দাম বেশি থাকার কারণে মসুর ডালের চাহিদা বেড়েছে। ফলে সরবরাহের একটা ঘাটতি আছে বাজারে। এই ঘাটতির জায়গা থেকে দামটা বেড়েছে। সরবরাহ বাড়লে দাম আবার কমে আসতে পারে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন য ন য ড ল র কর ড ল আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
জন্মনিয়ন্ত্রণের সুখী বড়ির ফয়েল পেপার বেশি দামে কিনল এসেনসিয়াল
খুচরা বাজারে ভালো মানের এক পিস ফয়েল পেপার বিক্রি হয় ৯০ পয়সায়। কিন্তু এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) প্রতি পিস ফয়েল পেপার ২ টাকা ৫৭ পয়সায় কিনেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জন্মনিয়ন্ত্রণের সুখী বড়ির প্যাকেট বানাতে মাত্রাতিরিক্ত দামে এই ফয়েল পেপার কিনেছে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি।
ইডিসিএল একটি শতভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। ইডিসিএলের মূল উদ্দেশ্য সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন ওষুধ তৈরি করা। সরকারি হাসপাতালসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে তা সরবরাহ করা।
আরও পড়ুন৪৭৭ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা দুদককে অনুসন্ধানের নির্দেশ হাইকোর্টের১২ মার্চ ২০২৩সুখী বড়ির প্যাকেট বানাতে ফয়েল ও শ্রিঙ্ক পেপার ব্যবহার করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইডিসিএল দীর্ঘদিন ফয়েল ও শ্রিঙ্ক পেপার কিনে এসেছে কেজি হিসেবে। কিন্তু ইডিসিএলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আ. সামাদ মৃধা দায়িত্বে আসার পর থেকে কেজির পরিবর্তে পিস হিসেবে তা কেনা হচ্ছে।
সুখী বড়ির প্যাকেট বানাতে ফয়েল ও শ্রিঙ্ক পেপার ব্যবহার করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইডিসিএল দীর্ঘদিন ফয়েল পেপার ও শ্রিঙ্ক পেপার কিনে এসেছে কেজি হিসেবে। কিন্তু ইডিসিএলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আ. সামাদ মৃধা দায়িত্বে আসার পর থেকে কেজির পরিবর্তে পিস হিসেবে তা কেনা হচ্ছে।নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের মধ্যে গত বছরের ২ অক্টোবর ইডিসিএলের এমডির পদ থেকে ইস্তফা দেন এহসানুল কবির। পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সামাদ মৃধাকে ইডিসিএলের নতুন এমডি হিসেবে নিয়োগ দেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সুখী বড়ির প্যাকেট তৈরির জন্য ১ কোটি ৭৮ লাখ পিস ফয়েল পেপার এবং ১৮ লাখ পিস শ্রিঙ্ক পেপার কিনতে গত জুলাইয়ে দরপত্রের বিজ্ঞাপন দেয় ইডিসিএল। ফয়েল পেপার সরবরাহের কাজ পায় এস এস ফ্লেক্সিপ্যাক লিমিটেড। আর শ্রিঙ্ক পেপার সরবরাহের কাজ পায় সুরাইয়া প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠান দুটির মালিক মোস্তাফিজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সুকানা কামাল। অভিযোগ আছে, তাঁদের প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত ব্যবসার সুযোগ দিতে কেজির পরিবর্তে এসব পণ্য পিস হিসেবে কেনা হয়েছে। এমডি হিসেবে সামাদ মৃধার যোগদানের পর এ দুই প্রতিষ্ঠান ইডিসিএলের অধিকাংশ কেনাকাটার কাজ পাচ্ছে।
নথি অনুযায়ী, প্রতি পিস ফয়েল পেপার ২ টাকা ৫৭ পয়সায় কিনেছে ইডিসিএল। আর প্রতি পিস শ্রিঙ্ক পেপার কিনেছে ৪ টাকা ৪৫ পয়সায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আগে এক কেজি ফয়েল পেপার কেনা হতো ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে। আর এখন তা পিস হিসেবে কেনা হচ্ছে। পিস থেকে কেজিতে রূপান্তর করলে প্রতি কেজি ফয়েল পেপারের দাম পড়ছে প্রায় দুই হাজার টাকা।
অন্যান্য কোম্পানির থেকে তাঁদের কেনা ফয়েল ও শ্রিঙ্ক পেপার উন্নত মানের। তাই বাজারের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে এগুলো কেনা হয়েছে। এতে পিস অথবা কেজি মুখ্য বিষয় নয়।মো. আ. সামাদ মৃধা, ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)বেশি দামে কেনাকাটার বিষয়ে জানতে চাইলে ইডিসিএলের এমডি সামাদ মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, অন্যান্য কোম্পানির থেকে তাঁদের কেনা ফয়েল ও শ্রিঙ্ক পেপার উন্নত মানের। তাই বাজারের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে এগুলো কেনা হয়েছে। এতে পিস অথবা কেজি মুখ্য বিষয় নয়। কেজিতে হিসাব করলে তাঁদের কেনা ফয়েল পেপারের দাম ১ হাজার ৫০০ টাকার বেশি হবে। আর প্যাকেটের ওজন বেশি হওয়ায় প্রতি কেজিতে ৬০০ পিসের মতো হবে।
আরও পড়ুনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এসেনসিয়াল ড্রাগসে ৩ হাজারের বেশি বাড়তি লোক ০৫ অক্টোবর ২০২৪নথি অনুযায়ী, প্রতি পিস ফয়েল পেপার ২ টাকা ৫৭ পয়সায় কিনেছে ইডিসিএল। আর প্রতি পিস শ্রিঙ্ক পেপার কিনেছে ৪ টাকা ৪৫ পয়সায়।পুরান ঢাকার ফয়েল ও শ্রিঙ্ক পেপারের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁদের একজন মো. ফারুক হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিন স্তরের ভালো মানের এক পিস ফয়েল পেপারের মূল্য সর্বোচ্চ ৯০ পয়সা। আর এক পিস শ্রিঙ্ক পেপার বিক্রি হয় ১ টাকা ২০ পয়সায়। বেশি পরিমাণ কিনলে দাম আরও কম হয়।
আরও পড়ুনসরানো হচ্ছে এসেনসিয়াল ড্রাগসের তেজগাঁও কারখানা২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১আরও পড়ুনযাঁরা অনিয়ম ধরবেন, তাঁদের স্বজনেরাই পান চাকরি০৮ জুন ২০২১আরও পড়ুনকোম্পানি কি এমপি ইলেকশন করবে যে নির্বাচনে প্রভাব পড়বে?০২ আগস্ট ২০২৩