দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ৩ ঘণ্টা পর ফেরি চলাচল স্বাভাবিক
Published: 11th, January 2025 GMT
পদ্মা নদীতে আকস্মিক ঘন কুয়াশার কারণে প্রায় তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। আজ শনিবার সকাল সোয়া ১০টায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে এবং সকাল সাড়ে ৯টা থেকে আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ফেরি চলা স্বাভাবিক হয়। এর আগে ঘন কুয়াশার কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে সকাল সাড়ে ৭টায় এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে সকাল ৬টা ২০ মিনিট ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) নাসির মোহাম্মদ চৌধুরী।
আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে পদ্মা নদী অববাহিকায় কুয়াশা পড়েনি। রাত শেষে আজ সকাল থেকে নদীতে আকস্মিকভাবে ঘন কুয়াশা পড়তে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে অতিমাত্রায় কুয়াশা পড়তে থাকলে সকাল ৬টা ২০ মিনিটে মানিকগঞ্জের আরিচা এবং পাবনার কাজীরহাট নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া রো রো ফেরি খান জাহান আলী মাঝনদীতে কুয়াশার কবলে পড়ে। মাঝনদীতে ফেরি আটকে যাওয়ার খবরে ঘাট থেকে কোনো ফেরি ছাড়েনি। এ সময় আরিচা ঘাটে রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান এবং কাজীরহাট ঘাটে কে টাইপ ফেরি চিত্রা ও ধানসিঁড়ি নামে দুটি ফেরি নোঙর করে থাকে।
এদিকে ঘন কুয়াশায় দুর্ঘটনা এড়াতে সকাল ৭টা ২০ মিনিট থেকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া প্রান্ত থেকে এবং সাড়ে ৭টা থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া প্রান্ত থেকে ফেরি ছাড়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগে ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর মাঝ পদ্মায় ঘন কুয়াশার কবলে পড়ে দিক হারিয়ে ফেলে। দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরিটি মাঝনদীতে নোঙর করে থাকে। পরে উভয় ঘাট থেকে আর কোনো ফেরি ছাড়েনি। এ সময় দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় কুমিল্লা, ভাষা শহীদ বরকত, কপোতী, বীরশ্রেষ্ঠ রহুল আমিন, হাসনা হেনা ও বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান নামে ছয়টি ফেরি যানবাহন বোঝাই করে নোঙর করে থাকে। একইভাবে পাটুরিয়া ঘাট প্রান্তেও ফরিদপুর, বনলতা, কেরামত আলী ও শাহ পরান নামের যানবাহনবোঝাই আরও চারটি ফেরি নোঙর করে থাকে।
রাজবাড়ী থেকে আসা ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস জামান পরিবহনের দৌলতদিয়া ঘাট তত্ত্বাবধায়ক মনির হোসেন বলেন, সকাল সাতটার দিকে কয়েকটি যাত্রীবাহী বাস ও অন্যান্য যানবাহন দৌলতদিয়ার ঘাটে পৌঁছে। ৭ নম্বর ঘাটে ভেড়ানো রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে তাঁদের যাত্রীবাহী বাসটি ওঠার পরই আকস্মিকভাবে চারদিক থেকে কুয়াশা ছেয়ে যায়। এরপর কর্তৃপক্ষ ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে ফেরিঘাট এলাকায় শতাধিক ঢাকামুখী যানবাহন নদী পাড়ি দিতে আটকা পড়েছিল।
আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, রাতভর পদ্মা নদী অববাহিকায় কোনো সমস্যা হয়নি। ভোরের দিকেও কুয়াশা দেখা যায়নি। তবে সকালে বেলা বাড়ার সঙ্গে নদী অববাহিকায় চারদিক থেকে আকস্মিকভাবে কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। দুর্ঘটনা এড়াতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে বিতর্ক, কমতে পারে অংশগ্রহণ
‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বৈশাখের অন্যতম আয়োজন। প্রতিবছর আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের নির্দিষ্ট ব্যাচের তত্ত্বাবধানে এবং শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের যৌথ প্রয়াসে আয়োজিত হয়। এবার ভিন্নতা ঘটায় আয়োজন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ২৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের একাংশ তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। ফলে এবার অংশগ্রহণ কমবে বলে তারা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চারুকলার ১৩তম ব্যাচের একজন শিক্ষার্থী সমকালকে বলেন, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনের সম্পূর্ণ অর্থ অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের শিল্পকর্ম বিক্রির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। এখানে কোনো বাণিজ্যিক বিষয় বা স্পন্সর থাকে না। চারুকলার রীতি অনুযায়ী যা এ বছর ২৬তম ব্যাচের দায়িত্ব হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু এবারের আয়োজনে সেই রীতি মানা হচ্ছে না। এতে শিক্ষার্থীদের সম্মতি ও সম্পৃক্ততা নেই। এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিশ্বাস ও ধারণার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।’
সীমান্ত ঘোষ নামে চারুকলার এক ছাত্র ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, ‘বৈশাখ ১৪৩২-এ আমাদের ব্যাচ, আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে– ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। তবে এ আয়োজনকে ‘স্বজনপ্রীতিদুষ্ট ও দেশের পরিবর্তনকালীন সময়ে রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী’ আখ্যায়িত করেছে ২৬ ব্যাচ। আয়োজন ও আয়োজক কমিটিকে বর্জন করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার শোভাযাত্রা নিয়ে স্পষ্ট বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘এবারের বৈশাখ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ আয়োজনে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের চাটুকারিতাপূর্ণ মনোভাবের কারণে আমরা শিক্ষকদের আয়োজন করা বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতা ও শোভাযাত্রা সমর্থন করছি না।’
ভাটা পড়বে আনন্দ আয়োজনে
প্রাক্তন ও বর্তমান একাধিক শিক্ষার্থী জানান, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কমবে। চারুকলার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের তৈরি শিল্পকর্ম কেনার লোকও কমবে। সেই সঙ্গে এবার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার শঙ্কা রয়েছে। আয়োজন ঘিরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের একাংশের মধ্যে প্রথম বিতর্ক তৈরি হয় শহীদ আবু সাঈদের মোটিফ তৈরির সিদ্ধান্তে। দ্বিতীয় হচ্ছে, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর আয়োজনের নাম পরিবর্তনের ইঙ্গিতে। তৃতীয় বিতর্ক তৈরি হয়, নির্ধারিত ব্যাচকে দায়িত্ব না দেওয়ায়। এসব কারণে প্রাক্তন-বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে চারুকলা অনুষদের একজন শিক্ষক বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আয়োজন ও কমিটিকে বর্জন করেছে বলে শুনেছি। আর শিক্ষার্থীরা যে অভিযোগ তুলেছেন, সেটা ঠিক আছে। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন অনেক বেশি রাজনৈতিক হচ্ছে। এতে সবার অংশগ্রহণের যে স্বতঃস্ফূর্ততা, তা নষ্ট হয়ে গেছে।’ অনেকে জানান, তাদের ব্যাচ এবং পুরো চারুকলার সাধারণ শিক্ষার্থীরা এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা বর্জন করেছেন।
সার্বিক বিষয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম চঞ্চল সমকালকে বলেন, ১৯৮৯ সালে এই শোভাযাত্রা শুরু হয়। তখন থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এর আয়োজন করে। ২০০৬ সালে প্রতিবছর নির্ধারিত একটি ব্যাচকে আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে একটি ব্যাচ আয়োজন করলেও যে এ নিয়ে বিতর্ক ছিল না, তা নয়। সেখানে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হতো না। এ ছাড়া আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এই আয়োজন একাডেমিক কার্যক্রমের অংশ করা হবে। এ কারণে কোনো ব্যাচকে আলাদাভাবে দায়িত্ব দেওয়া যাচ্ছে না। ২৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পাস করে বের হয়ে গেছে। তারা এসে কখনও বলেওনি যে, তারা আয়োজন করতে চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ৯ ও ১২ মার্চ অনুষদের সিনিয়র শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করি। সেখানে কোনো নির্ধারিত ব্যাচকে দিয়ে আয়োজন না করানোর সিদ্ধান্ত হয়। ১৩ মার্চ ছাত্র-শিক্ষক সমন্বয়ে একটা বৈঠক হয়। সেখানে নানা ধরনের কমিটি ও উপকমিটি গঠন করা হয়। কমিটিগুলোতে বর্তমান ছাত্রদের যুক্ত করা হয়। তবে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এসে কাজ করতে চাইলে তাদেরও যুক্ত করা হচ্ছে।’