পদ্মা নদীতে আকস্মিক ঘন কুয়াশার কারণে প্রায় তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। আজ শনিবার সকাল সোয়া ১০টায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে এবং সকাল সাড়ে ৯টা থেকে আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ফেরি চলা স্বাভাবিক হয়। এর আগে ঘন কুয়াশার কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে সকাল সাড়ে ৭টায় এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে সকাল ৬টা ২০ মিনিট ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) নাসির মোহাম্মদ চৌধুরী।

আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে পদ্মা নদী অববাহিকায় কুয়াশা পড়েনি। রাত শেষে আজ সকাল থেকে নদীতে আকস্মিকভাবে ঘন কুয়াশা পড়তে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে অতিমাত্রায় কুয়াশা পড়তে থাকলে সকাল ৬টা ২০ মিনিটে মানিকগঞ্জের আরিচা এবং পাবনার কাজীরহাট নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া রো রো ফেরি খান জাহান আলী মাঝনদীতে কুয়াশার কবলে পড়ে। মাঝনদীতে ফেরি আটকে যাওয়ার খবরে ঘাট থেকে কোনো ফেরি ছাড়েনি। এ সময় আরিচা ঘাটে রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান এবং কাজীরহাট ঘাটে কে টাইপ ফেরি চিত্রা ও ধানসিঁড়ি নামে দুটি ফেরি নোঙর করে থাকে।

এদিকে ঘন কুয়াশায় দুর্ঘটনা এড়াতে সকাল ৭টা ২০ মিনিট থেকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া প্রান্ত থেকে এবং সাড়ে ৭টা থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া প্রান্ত থেকে ফেরি ছাড়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগে ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর মাঝ পদ্মায় ঘন কুয়াশার কবলে পড়ে দিক হারিয়ে ফেলে। দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরিটি মাঝনদীতে নোঙর করে থাকে। পরে উভয় ঘাট থেকে আর কোনো ফেরি ছাড়েনি। এ সময় দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় কুমিল্লা, ভাষা শহীদ বরকত, কপোতী, বীরশ্রেষ্ঠ রহুল আমিন, হাসনা হেনা ও বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান নামে ছয়টি ফেরি যানবাহন বোঝাই করে নোঙর করে থাকে। একইভাবে পাটুরিয়া ঘাট প্রান্তেও ফরিদপুর, বনলতা, কেরামত আলী ও শাহ পরান নামের যানবাহনবোঝাই আরও চারটি ফেরি নোঙর করে থাকে।

রাজবাড়ী থেকে আসা ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস জামান পরিবহনের দৌলতদিয়া ঘাট তত্ত্বাবধায়ক মনির হোসেন বলেন, সকাল সাতটার দিকে কয়েকটি যাত্রীবাহী বাস ও অন্যান্য যানবাহন দৌলতদিয়ার ঘাটে পৌঁছে। ৭ নম্বর ঘাটে ভেড়ানো রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে তাঁদের যাত্রীবাহী বাসটি ওঠার পরই আকস্মিকভাবে চারদিক থেকে কুয়াশা ছেয়ে যায়। এরপর কর্তৃপক্ষ ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে ফেরিঘাট এলাকায় শতাধিক ঢাকামুখী যানবাহন নদী পাড়ি দিতে আটকা পড়েছিল।

আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, রাতভর পদ্মা নদী অববাহিকায় কোনো সমস্যা হয়নি। ভোরের দিকেও কুয়াশা দেখা যায়নি। তবে সকালে বেলা বাড়ার সঙ্গে নদী অববাহিকায় চারদিক থেকে আকস্মিকভাবে কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। দুর্ঘটনা এড়াতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

টাঙ্গাইলে ৩ দিনব্যাপী পিঠা উৎসব শুরু

টাঙ্গাইলে বিলুপ্তপ্রায় গ্রামীণ খেলাধুলা ও বাহারি পিঠা নিয়ে তিন দিনব্যাপী লোকজ সাংস্কৃতিক ও পিঠা উৎসব শুরু হয়েছে। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে টাঙ্গাইল কালচারাল রিফরমেশন ফোরাম এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

এ উৎসবের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব হাসান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহেল রানা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হামিদুল হক মোহন, এ উৎসব উদযাপন পরিষদের গোলাম আম্বিয়া নুরী, আবুল কালাম মোস্তফা লাবু, অনিক রহমান বুলবুল প্রমুখ।

আয়োজকেরা জানান, বর্তমান প্রজন্মের মাঝে লোকসংস্কৃতি তুলে ধরা এ আয়োজনের লক্ষ্য। এখানে হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ খেলাধুলাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়েছে, যা শিশুরা জানতে পারে। 

তারা জানান, উৎসবে ৪০টি দোকানে পিঠা ছাড়াও বিভিন্ন খাবার পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় ২০০ রকমের পিঠার পসরা রয়েছে। এ সব পিঠার মধ্যে মালাই পিঠা, মুঠি পিঠা, আন্দশা, কুলশি, কাটা পিঠা, কলা পিঠা, খেজুর পিঠা, ক্ষীর কুলি, গোকুল পিঠা, গোলাপ ফুল পিঠা, পুলি পিঠা, পাতা পিঠা, পাটিসাপটা,পাকান পিঠা, নারকেলের সেদ্ধ পুলি, নারকেল জিলাপি, তেলের পিঠা, চাঁদ পাকান পিঠা, ঝুরি পিঠা, ছাঁচ পিঠা, দুধি চিতই, বিবিখানা, ভাঁপা পিঠা, চিতই পিঠা, ঝাল পিঠা, মালপোয়া, নকশি পিঠা উল্লেখযোগ্য।

উৎসবে দেশীয় খেলা দাঁড়িয়বান্দা, বউচি, লাঠিখেলা, ওপেন্টি বায়োস্কোপ, হা-ডু-ডু, চিবুরি, গোল্লাছুট, এক্কা-দোক্কা; লোকজ সংস্কৃতি জারিগান, পুথিপাঠ, পালাগান, লোকনৃত্য, কবিগান, লোকগীতি, পল্লীগীতি, ভাওয়াইয়া, শ্যামাসংগীত, কীর্তন, কিচ্ছা বয়ান প্রভূতি পরিবেশন করা হচ্ছে। মেলায় প্রতিদিন থাকছে বাউলগান, কবিগান, লোকনৃত্য, সঙযাত্রা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পৌরউদ্যানের উম্মুক্ত প্রাঙ্গণে স্টলে স্টলে পিঠার পসরা সাজিয়ে চলছে বিকিকিনি। দোকানে পিঠা বানাচ্ছে বিক্রেতা আর কিনে খাচ্ছে ক্রেতারা। পিঠাপুলির সঙ্গে সেলফি তুলে পিঠা কেনা ও খাওয়ার দৃশ্য স্মৃতিময় করে রাখার চেষ্টাও লক্ষ্যণীয়। 

উৎসবে ছাত্রছাত্রী ও শহরের সাধারণ মানুষের ভিড় লেগে ছিল। 

আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক আবুল কালাম মোস্তফা লাবু বলেন, এমন আয়োজন আগামী প্রজন্মের সন্তানকে মাদক, সন্ত্রাস থেকে দূরে রাখবে। ভবিষ্যতে আবারও আয়োজন করা হবে।

উৎসবের শেষ দিনে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ।

ঢাকা/কাওছার/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ