পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে লিচু তলায় তারা এ পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন। কর্মকর্তা, সহায়ক কর্মচারী, সাধারণ কর্মচারী, পরিবহন কর্মচারী সমিতি এ কর্মসূচির আয়োজন করে।

এ সময় আইন অনুষদের কর্মচারী রফিকুল ইসলাম সদর বলেন, “যৌক্তিক দাবিতে আমরা মাঠে নেমেছি। বর্তমান প্রশাসন তাদের চেয়ার ঠিকিয়ে রাখতে আমাদের সঙ্গে নাটক শুরু করেছে। প্রশাসন যদি ভালোভাবে আমাদের দাবি না মেনে নেয়, তাহলে সামনে কঠোর কর্মসূচি অপেক্ষা করছে।”

অফিসার সমিতির কোষাধ্যক্ষ কাজী মামুন রানা বলেন, “যারা প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে নিজেদের হিরো মনে করছে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। এ রকম আমারও একদিন ছাত্র ছিলাম, প্রশাসনের কাছ থেকে দাবি আদায় করেছিলাম। কিন্তু প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে জিম্মি করে না। যারা এ কাজ করেছে, তারা আন্দোলনের ‘আ' টাও বুঝে না। সামনে রাকসু নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করার জন্য কিছু ছাত্র লাফালাফি শুরু করেছে।”

কম্পিউটার সাইন্সল্যাবের কর্মকর্তা আলাউদ্দিন মন্টু বলেন, “উপাচার্য স্যার গুটিকয়েক ছাত্রের দাবির মুখে আমাদের একটি প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধাকে বাতিল করে দিয়েছে। উপাচার্য স্যারকে বলতে চাই, আপনি দাবি মেনে নিয়ে আমাদের অফিসে ফিরিয়ে নিন। না হলে হয়তো আপনার সেই চেয়ারটি আগামীদিনে আর থাকবে না। এমন কর্মসূচি দেব, যার মাধ্যমে আপনি চেয়ার ছেড়ে দাবি মেনে নিয়ে চলে যেতে বাধ্য হবেন।”

তিনি আরো বলেন, “রাবিতে দীর্ঘদিন থেকে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা পেয়ে আসছে। কিন্তু হঠাৎ কী কারণে কয়েকটি দুষ্কৃতী ছাত্রের কারণে আমাদের এ সুবিধা বাতিল করা হলো। সেই ছাত্র ভাইকে বলতে চাই, আপনিও তো আইএস কোটাতে ভর্তি হয়েছেন। আপনি তো মাদার বখ্শ হলে জোর করে সিট নিয়েছেন। আমরা আপনার চরিত্র সম্পর্কে জানি। আপনি সেখান থেকে পদত্যাগ করে চলে যান, তাহলেই বুঝতে পারবো আপনি সঠিন ন্যায়-নীতিবান ছেলে।”

এর আগে, গত ২ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত পোষ্য কোটা বাতিল করতে বাধ্য হয়। এতে শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬, ৭ ও ৮ জানুয়ারি অবস্থান ধর্মঘট ও কর্মবিরতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

চোর-ডাকাতের দোহাই দিলে মানবেন না সালেহা মনির

১৩ বছর হলো। তবুও সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। পরিবার হতাশ হলেও আশা ছাড়েনি বিচারের। মেয়ে হত্যার বিচার না দেখে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন রুনির মা। বেঁচে আছেন সাগরের মা সালেহা মনির। কেন, কিসের জন্য ওদের খুন করা হলো- দেখে যেতে চান তিনি। তবে চোরের দোহাই বা ডাকাতির দোহাই দিয়ে খুনের কারণ জানালে মেনে নেবেন না তিনি। কেন মেনে নিবেন না, তিনি এর যুক্তিও তুলে ধরেছেন ।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন সাগর সারোয়ার ও  মেহেরুন রুনি। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার ১৩ বছর পার হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। কবে নাগাদ মামলার তদন্ত শেষ হবে বলতে পারছেন না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। পুলিশ, র‍্যাবের হাত ঘুরে বর্তমানের মামলার তদন্ত পেয়েছে পিবিআই। তারাও আশার বাণী শোনাতে পারছেন না। তবে যথাযথ সময়ে প্রতিবেদন দাখিলের কথা জানিয়েছে তদন্ত সংস্থাটি।

এদিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এখন পর্যন্ত ১১৫ বার সময় নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৭ জানুয়ারি মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ছিলো। তবে ওই দিন মামলার তদন্ত সংস্থা (পিবিআই) প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি৷  ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি.এম. ফারহান ইশতিয়াকের আদালত প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ২ মার্চ ধার্য করেছেন।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (পিবিআই) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজিজুল হক বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তবে এখনই তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে কিছু বলা যাবেনা। তদন্ত সাপেক্ষে আমরা যথাসময়ে প্রতিবেদন দাখিল করবো।”

সাগরের মা সালেহা মনির বলেন, “অন্ধকারে পড়ে আছি। প্রত্যাশার বা আশার কিছু নাই। পিবিআই তদন্তভার নিয়েছে। তারা এসেছিলেন। দেখি কতদূর কি করেন। এরপর বুঝবো কতদূর অগ্রসর হতে পারেন।”

তিনি বলেন, “তাদের একটা কথায় বলেছি, চোরের দোহাই বা ডাকাতির দোহাই দিবেন না। আমি এটা মেনে নিবো না। চোর চুরি করতে আসলে চুরি করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাবে। আর ডাকাতরা অস্ত্র নিয়ে আসবে, তারা মারবে না। এটা বলে দিয়েছি।”

সাগর-রুনীর সন্তান মেঘের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ হয় সালেহা মনিরের। মাঝে মাঝে দাদীকে দেখতে যাই বলে জানায় মেঘ।

এক প্রশ্নের জবাবে সালেহা মনির বলেন, “তখনই বলেছি র‍্যাব এ মামলার তদন্ত করতে পারবে না। তারা বারবার সময় নিচ্ছে। না পারলে তদন্ত ছেড়ে দিক। এখন অন্য সংস্থাকে দিয়েছে। দেখি তারা কি বলে।”

জীবদ্দশায় ছেলে ও ছেলের বউকে কেন খুন করা হলো দেখে যেতে যান সালেহা মনির। তিনি বলেন, “শুধু এটুকু দেখে যেতে চাই কেন, কিসের জন্য ওদের খুন করা হলো। এরপর কি হলো না হলো (বিচার) জানার দরকার নাই। দেখতে চাই কেন, কিসের জন্য তাদের মারা হলো। ছেলের কবরস্থানে এখনো যাইনি। রুনীর মা তো চলে গেছে (মারা গেছে)। এখন আমি একা আছি। দেখি আল্লাহ ভরসা।”

এই সরকারের প্রতি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন সালেহা মনির। তিনি বলেন, “গত সরকার আমাদের জন্য কিছু করে নাই। আমাদের আশা, উনার সময় হত্যার রহস্য উদঘাটন হবে। এটা আশা করবো। সঠিকভাবে যেন মামলার তদন্ত শেষে দোষীদের বের করেন। এই প্রত্যাশা ইউনূস সরকারের প্রতি।”

মামলার বাদী রুনীর ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, “আমরা বিচার চাই। আর নতুন করে চাওয়ার কি আছে। সরকার ৬ মাস সময় দিছে। দেখি, অপেক্ষা করি, কি দাঁড়ায়। তবে নতুন করে চাওয়ার কিছু নাই। বিচার চাই। জানি না বিচার হবে কি না।”

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সারোয়ার ওরফে সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন নাহার রুনা ওরফে মেহেরুন রুনী দম্পতি। ঘটনার পরের দিন রুনীর ভাই নওশের আলম রোমান রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।

থানা পুলিশের পর ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তের জন্য প্রথম ডিবি পুলিশ, পরে র‍্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আওয়ামী সরকারের পতনের পর দায়িত্বভার পিবিআইকে দেওয়া হয়।

মামলায় রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত অপর আসামিরা হলেন- বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুন, পলাশ রুদ্র পাল,  ও আবু সাঈদ। এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ রুদ্র জামিনে আছেন। অপর আসামিরা কারাগারে আছেন।

আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ আবু সাইদ সিদ্দিকী (টিপু) বলেন,  “মামলাটা নিয়ে আমরা পরিশ্রান্ত। বারবার বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করছে। এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়নি। আমরা পরিশ্রান্ত। পরিত্রাণ চাই।”

ঢাকা/মামুন/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ