পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনুসঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফাইন ফুডস লিমিটেডের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ানোর অভিযোগে ৪ জন বিনিয়োগকারী ও দুই প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করে কারসাজির মাধ্যমে কোম্পানির শেয়ার কারসাজির অপরাধ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্তদের জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সে নতুন চেয়ারম্যান 

পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সহযোগিতায় ‘ফোকাস গ্রুপ’ গঠন

জানা গেছে, ফাইন ফুডস লিমিটেডের শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগে মোহাম্মদ শামসুল আলমকে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া তার সহযোগী হিসেবে সাজিয়া জেসমিনকে ৪৯ লাখ টাকা, সুলতানা পারভিনকে ১১ লাখ টাকা, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে ১ লাখ টাকা, এএএ এগ্রো এন্টারপ্রাইজকে ৭৫ লাখ টাকা এবং আরবিম টেকহো লিমিটেডকে ২৩ লাখ টাকা জারিমানা করা হয়েছে। জরিমানা করা আরবিম টেকহো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকায় তাকেও জরিমানা করা হয়েছে।

তথ্য বলছে, পুঁজিবাজারে কয়েক বছর ধরে গুঞ্জন ছিল ফাইন ফুডসের শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলছে। কোম্পানির ব্যবসা ও আর্থিক অবস্থার উন্নতির কারণে নয়, বরং কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে। অবশেষে তদন্ত সাপেক্ষে কোম্পানির শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় এনেছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

গত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা শেয়ার কারসাজির বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে শেয়ার কারসাজির আলোচিত কোম্পানি ফাইন ফুডস। ব্যবসায়িক পারফরমেন্স ভালো না হলেও শেয়ার দর আকাশ চুম্বি। এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ শেয়ার দর নিয়ে কারসাজির জন্য কৃত্রিম আর্থিক হিসাব দেখিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে ব্যয় কমিয়ে মুনাফা বেশি ও সম্পদ বেশি দেখিয়ে আসছে, যা কোম্পানির নিরীক্ষকের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে স্বল্প মূলধনী কোম্পানি ফাইন ফুডসের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে শেয়ারটিকে ২০০ টাকার উপরে তুলে আনা হয়েছে। যার সঙ্গে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সরাসরি যোগসাজোশ রয়েছে। তারা শেয়ারটি নিয়ে কারসাজিতে সহযোগিতা করতে কৃত্রিম আর্থিক হিসাবসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়টি তদন্ত করে দেখার দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরবিম টেকহো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। এখন পর্যন্ত আমি বিএসইসি থেকে এ বিষয়ে কোনো চিঠি পাইনি। আমি বিষয়টি জেনে নেই, পরে বিস্তারিত জানাতে পারব।”

শেয়ার কারসাজির সময়কাল
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে কোম্পানির শেয়ারের দাম কারসাজি করে বাড়িয়ে তোলা হয়। পরে সুবিধামতো সময়ে শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা হাতিয়ে নেয় কারসাজি চক্র। ২০২৩ সালের ১ মার্চ ফাইন ফুডসের শেয়ারের দাম ছিল ৬০.

৯০ টাকা। আর ২৫ জুন কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১২৩ টাকায়। ফলে প্রায় চার মাসের ব্যবধানে কোম্পানির শেয়ারের দাম কারসাজির মাধ্যমে বেড়ে দাঁড়ায় ৬২.১০ টাকা বা ১০১.৯৭ শতাংশ।

বিএসইসির জরিমানার সিদ্ধান্ত
২০২৩ সালের ২ মার্চ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত ফাইন ফুডের শেয়ার কারসাজি করে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(২) ও সেকশন ১৭(ই)(৫) এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণ) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪(১) ভঙের দায়ে মোহাম্মদ শামসুল আলমকে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং তার সহযোগী সাজিয়া জেসমিনকে ৪৯ লাখ টাকা, সুলতানা পারভিনকে ১১ লাখ টাকা, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে ১ লাখ টাকা, এএএ এগ্রো এন্টারপ্রাইজকে ৭৫ লাখ টাকা এবং আরবিম টেকহো লিমিটেডকে ২৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এ বিষয়ে বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

কোম্পানির ব্যবসায়িক পরিস্থিতি
ফাইন ফুডস লিমিটেড পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০২ সালে। ‘বি’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সে হিসাবে কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ৩৯ লাখ ৭৩ হাজার ৯১৮টি। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ১৫.২৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৫.২৫ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৯.৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।

গত ১৫ জানুয়ারি উচ্চ মূল্যের শেয়ারটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের গছিয়ে দেওয়ার অংশ হিসেবে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর, ২০২৪) ও অর্ধবার্ষিক (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০২৪) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে অস্বাভাবিক মুনাফা দেখিয়েছে কোম্পানিটি। তবে বিনিয়োগকারীরা এ ফাঁদ বুঝতে পারায় কোম্পানির মুনাফা ৩৭৬ শতাংশ উত্থান দেখানোর পরও গত কয়েকদিনে শেয়ারটির দর ২১৯ টাকা থেকে ২০০ টাকায় নেমে এসেছে। রবিবার (২৬ জানুয়ারি) ফাইন ফুডসের শেয়ার সর্বশেষ ১৯৯ টাকায় লেনদেন হয়েছে।

ঢাকা/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ব যবস থ ব এসইস ন র পর আর থ ক সহয গ

এছাড়াও পড়ুন:

সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলম কারাগারে

যুবদল নেতা শামীম মোল্লা হত্যার অভিযোগে রাজধানীর পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় কক্সবাজার–১ (চকরিয়া–পেকুয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. জাফর আলমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত আজ সোমবার এ আদেশ দেন।

২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশের দিন সংঘর্ষে যুবদল নেতা শামীম মোল্লা নিহত হন। তাঁকে হত্যার অভিযোগে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৭০৪ জনকে আসামি করে পল্টন থানায় একটি মামলা করেন ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা।

এ মামলায় জাফর আলমকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। আসামিপক্ষ থেকে জামিন আবেদন করা হলে, সেটি নাকচ করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

আরও পড়ুনযুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় আ.লীগের সভাপতিমণ্ডলীর ১১ সদস্যসহ ৭০৪ জন আসামি২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

গতকাল রোববার রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে জাফর আলমকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জাফর আলম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে ২০২৪ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরে যান।

আরও পড়ুনকক্সবাজারের সাবেক সংসদ সদস্য জাফর গ্রেপ্তার২৭ এপ্রিল ২০২৫

জাফর আলম ২০০৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত চকরিয়া পৌরসভার মেয়র ছিলেন। ২০১৪ সালে চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে জয়ী হন।

আওয়ামী লীগের পতনের পর জাফর আলমের বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চকরিয়া ও পেকুয়ায় ১৫ থেকে ১৬টি মামলা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শক্তিশালী ব্যালান্স শিট প্রবৃদ্ধিসহ ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য সাফল্য
  • ২০২৪ সালে রেকর্ড হারে বেড়েছে বিশ্বের সামরিক ব্যয়: সিপ্রির প্রতিবেদন
  • তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফা কমেছে স্কয়ার ফার্মার
  • ৭৮০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে পূবালী ব্যাংক
  • রেকর্ড ১৪৩২ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জন ব্র্যাক ব্যাংকের
  • রেকর্ড ১৪৩২ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক
  • হাজার কোটি টাকা নিট মুনাফার মাইলফলকে সিটি ব্যাংক
  • রেকর্ড ১৪৩২ কোটি টাকা মুনাফা ব্র্যাক ব্যাংকের
  • বিশ্বে সামরিক ব্যয় রেকর্ড বেড়ে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার
  • সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলম কারাগারে