চীনের ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উৎসব ও নববর্ষ উপলক্ষে দেশটির জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি চায়না মিডিয়া গ্রুপকে (সিএমজি) দেওয়া একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে চীনের চান্দ্র নববর্ষ বা বসন্ত উৎসবের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

শুভেচ্ছাবাণীতে তিনি বলেন, চীনের বসন্ত উৎসব’-কে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেসকো) ২০২৪ সালে ‘মানবসভ্যতার প্রতিনিধিত্বকারী অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই অভূতপূর্ব অর্জনে চীনের সরকার ও জনগণের মতো আমরাও অত্যন্ত অনন্দিত। চীনের বসন্ত উৎসবের মতো বাংলাদেশের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রাও’ ইউনেসকোর একই তালিকায় ২০১৬ সালে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। 

আরো পড়ুন:

চীনা ঋণের সুদহার ১ শতাংশ করার প্রস্তাব পররাষ্ট্র উপদেষ্টার

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে লিউ চিয়ান ছাওয়ের সাক্ষাৎ

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং চীনের বসন্ত উৎসবের এ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আমাদের দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের মধ্যে এক গভীর যোগসূত্রের সূচনা করেছে। এই অভিন্ন আনন্দের মুহূর্তে আমরা নতুন বছরের আশা, আনন্দ ও সমৃদ্ধিকে গুরুত্ব দিয়ে দুদেশের নিবিড় সম্পর্ককে সামনে আরো এগিয়ে নিতে একযোগে কাজ করতে পারি।

প্রধান উপদেষ্টা চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তীর কথা উল্লেখ করে বলেন, এ বছর আমরা দুই ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ  চীন ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী ব্যাপক পরিসরে উদযাপন করতে যাচ্ছি। পঞ্চাশ বছরের এই দীর্ঘ পথচলায় দু’দেশের সম্পর্ক যেমন গভীর ও নিবিড় হয়েছে, তেমনি এর ব্যাপকতাও অনেক বেড়েছে। 

সুপ্রতীবেশীসুলভ ও বন্ধুত্বের নীতি অনুসরণের মধ্য দিয়ে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক উন্নীত হয়েছে। এ সম্পর্ক শুধু দুদেশের আস্থা ও বন্ধুত্বের প্রতীকই নয়, বরং দুই জাতি ও দুই দেশের জনগণের মধ্যে বিদ্যমান শান্তি, সহযোগিতা ও সমৃদ্ধির পথে একসাথে চলার এক অবিচল অঙ্গীকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিশ্বের সামনে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। উন্নয়ন সহযোগিতা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সংস্কৃতি ও জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমে এই সম্পর্ক ক্রমাগত আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আগামী দিনে চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্ক, ইতিহাসের সঠিক পথ ধরে সামনে এগিয়ে যাবে এবং দু’দেশের জনগণের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধিশালী এবং স্থিতিশীল বিশ্ব গড়তে একসাথে কাজ করে চাই। তিনি বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে চীনের জনগণকে শুভেচ্ছা জানান। 

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট র জনগণ জনগণ র ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

রোহিঙ্গা সমস্যায় রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান শুধু জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগে সম্ভব নয়। জনগণের ঐক্য, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর মাধ্যমে এর রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।

আজ বুধবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘অ্যাম্প্লিফাইং দ্য রোহিঙ্গা ভয়েসেস অ্যান্ড অ্যাসপাইরেশন: অ্যা স্ট্রাটেজিক ডায়ালগ এহেড অব ইউএনজিএ ২০২৫’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এ সংলাপের আয়োজন করেছে নীতি গবেষণা কেন্দ্র।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান জাতিসংঘ করতে পারবে না। দেশের জনগণের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা ও ঐক্যের মাধ্যমে এর সমাধান করতে হবে। এ কারণেই সমস্যার মূল সমাধান নির্ভর করছে জনগণের মধ্যে বোঝাপড়া ও গণতান্ত্রিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার ওপর।

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান নিছক কারিগরি নয়, বরং রাজনৈতিক প্রশ্ন। তাই এর সমাধানও রাজনৈতিকভাবে হতে হবে। ভারতের ভূমিকাও এখানে উপেক্ষা করার মতো নয়—এটি আগামী দিনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।ফরহাদ মজহার, কবি ও চিন্তক

৮ আগস্ট জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস হয়েছে উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, সংবিধানের নামে একই ফ্যাসিবাদী কাঠামো ও গণতন্ত্রবিরোধী প্রতিষ্ঠান বজায় রেখে দেশের নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।

ফরহাদ মজহার আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান নিছক কারিগরি নয়, বরং রাজনৈতিক প্রশ্ন। তাই এর সমাধানও রাজনৈতিকভাবে হতে হবে। ভারতের ভূমিকাও এখানে উপেক্ষা করার মতো নয়—এটি আগামী দিনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

সংলাপে আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম রোহিঙ্গা জনগণের বিরুদ্ধে নৃশংসতা ও গণহত্যার জন্য দায়ীদের বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি জানান।

নুরুল ইসলাম বলেন, সব অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা, সহিংসতার পুনরাবৃত্তি রোধ করা, আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা তোলা, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, সম্মানজনক এবং টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, তাদের নাগরিকত্ব ও জাতিগত পরিচয় সুরক্ষিত রাখা এবং উপযুক্ত শিক্ষা ও পুনর্বাসনের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি প্রত্যাবর্তনের পথে রাজনৈতিক বাধা মোকাবিলার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারে উদ্ভূত রাজনৈতিক সমস্যা, যার স্থায়ী সমাধানও মিয়ানমারেই আছে। —পিটার কার্ন, আইওএম বাংলাদেশ উপকার্যালয়ের প্রধান

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) বাংলাদেশ উপকার্যালয়ের প্রধান পিটার কার্ন বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারে উদ্ভূত রাজনৈতিক সমস্যা, যার স্থায়ী সমাধানও মিয়ানমারেই আছে। বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে যে উদারতা প্রদর্শন করেছে, তার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের কাছ থেকে আরও স্বীকৃতি প্রাপ্য।

পিটার কার্ন বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে সমর্থন দিয়ে স্বীকার করেছে, এই বিশাল বোঝা বাংলাদেশ একা বহন করতে পারবে না। এর মাধ্যমে বিশ্ব বাংলাদেশের ভূমিকা ও রোহিঙ্গাদের স্বদেশে নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করছে।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নীতি গবেষণা কেন্দ্রের ট্রাস্টি অধ্যাপক শেখ তৌফিক এম হক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক কূটনীতিক মোহাম্মদ সুফিউর রহমান। ‘অ্যাম্প্লিফাইং দ্য রোহিঙ্গা ভয়েসেস অ্যান্ড অ্যাসপাইরেশন: অ্যা স্ট্রাটেজিক ডায়ালগ এহেড অব ইউএনজিএ ২০২৫’ শিরোনামের প্রবন্ধে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আগ্রহ কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গা সংকট জটিল হচ্ছে। অর্থের ঘাটতি প্রকল্পগুলোর কার্যকারিতা সীমিত করছে। বড় দেশগুলো শুধু নিজেদের স্বার্থ দেখছে, আঞ্চলিক দেশগুলোও তেমন সক্রিয় নয়। বাংলাদেশে মানবিক সহায়তা, শিক্ষা, কাজের সুযোগ ও চলাচলের স্বাধীনতার দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হলেও রাখাইন ও মিয়ানমারে সহিংসতার বিষয়টি প্রায় অবহেলিত। নিরাপত্তা–সংক্রান্ত প্রতিবেদনে পক্ষপাত লক্ষ্য করা যাচ্ছে; রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর কার্যক্রম বেশি তুলে ধরা হয়, আর রাখাইন জাতীয়তাবাদীদের কর্মকাণ্ড তেমন আলোচনায় আসে না।

আরও পড়ুনআসিয়ান জোট রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণকে উপেক্ষা করেছে: এপিএইচআর০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের করণীয় সম্পর্কে প্রবন্ধে বলা হয়, জাতিগত ও সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব এড়াতে আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া এবং রাজনৈতিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি দেশের নিরাপত্তা হুমকিমুক্ত রাখতে মাদক, মানব পাচার, সীমান্ত লঙ্ঘন এবং জেলেদের অপহরণ বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো এবং সমাজে সমান অধিকারপ্রাপ্ত নাগরিক হিসেবে একীভূত করার জন্য পন্থা নির্ধারণ করা। মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সংযোগ বৃদ্ধি করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে হারাল বায়ার্ন, চ্যাম্পিয়ন পিএসজির গোল উৎসব
  • রোহিঙ্গা সমস্যায় রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে
  • কারও কোনো অপরাধ নাই
  • বিশ্বকর্মা পূজা: গাঙ্গেয় শিল্পের উৎসব
  • আজ থেকে বুসান উৎসব, নানাভাবে রয়েছে বাংলাদেশ
  • ‎সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব : ডিসি
  • ‎পূজাকে  ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
  • ঘুম থেকে অনন্ত ঘুমে অস্কারজয়ী রবার্ট রেডফোর্ড
  • ২০০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে ভোলার বৈষা দধি
  • শেষ হলো সপ্তম যোসেফাইট ম্যাথ ম্যানিয়া ২০২৫