চীনের বসন্ত উৎসবে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা
Published: 29th, January 2025 GMT
চীনের ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উৎসব ও নববর্ষ উপলক্ষে দেশটির জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি চায়না মিডিয়া গ্রুপকে (সিএমজি) দেওয়া একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে চীনের চান্দ্র নববর্ষ বা বসন্ত উৎসবের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
শুভেচ্ছাবাণীতে তিনি বলেন, চীনের বসন্ত উৎসব’-কে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেসকো) ২০২৪ সালে ‘মানবসভ্যতার প্রতিনিধিত্বকারী অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই অভূতপূর্ব অর্জনে চীনের সরকার ও জনগণের মতো আমরাও অত্যন্ত অনন্দিত। চীনের বসন্ত উৎসবের মতো বাংলাদেশের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রাও’ ইউনেসকোর একই তালিকায় ২০১৬ সালে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
আরো পড়ুন:
চীনা ঋণের সুদহার ১ শতাংশ করার প্রস্তাব পররাষ্ট্র উপদেষ্টার
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে লিউ চিয়ান ছাওয়ের সাক্ষাৎ
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং চীনের বসন্ত উৎসবের এ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আমাদের দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের মধ্যে এক গভীর যোগসূত্রের সূচনা করেছে। এই অভিন্ন আনন্দের মুহূর্তে আমরা নতুন বছরের আশা, আনন্দ ও সমৃদ্ধিকে গুরুত্ব দিয়ে দুদেশের নিবিড় সম্পর্ককে সামনে আরো এগিয়ে নিতে একযোগে কাজ করতে পারি।
প্রধান উপদেষ্টা চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তীর কথা উল্লেখ করে বলেন, এ বছর আমরা দুই ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ চীন ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী ব্যাপক পরিসরে উদযাপন করতে যাচ্ছি। পঞ্চাশ বছরের এই দীর্ঘ পথচলায় দু’দেশের সম্পর্ক যেমন গভীর ও নিবিড় হয়েছে, তেমনি এর ব্যাপকতাও অনেক বেড়েছে।
সুপ্রতীবেশীসুলভ ও বন্ধুত্বের নীতি অনুসরণের মধ্য দিয়ে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক উন্নীত হয়েছে। এ সম্পর্ক শুধু দুদেশের আস্থা ও বন্ধুত্বের প্রতীকই নয়, বরং দুই জাতি ও দুই দেশের জনগণের মধ্যে বিদ্যমান শান্তি, সহযোগিতা ও সমৃদ্ধির পথে একসাথে চলার এক অবিচল অঙ্গীকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিশ্বের সামনে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। উন্নয়ন সহযোগিতা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সংস্কৃতি ও জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমে এই সম্পর্ক ক্রমাগত আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আগামী দিনে চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্ক, ইতিহাসের সঠিক পথ ধরে সামনে এগিয়ে যাবে এবং দু’দেশের জনগণের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধিশালী এবং স্থিতিশীল বিশ্ব গড়তে একসাথে কাজ করে চাই। তিনি বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে চীনের জনগণকে শুভেচ্ছা জানান।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট র জনগণ জনগণ র ইউন স
এছাড়াও পড়ুন:
ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।
কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।
এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।
অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।
একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’