Samakal:
2025-06-15@21:38:44 GMT

দুর্নীতির সূচকে সুখবর নেই কেন?

Published: 17th, February 2025 GMT

দুর্নীতির সূচকে সুখবর নেই কেন?

বহু বছর ধরে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে তার অবস্থান ধরে রেখেছে। ২০২৩ সালে সেরা দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আমাদের অবস্থান ছিল দশম। এ বছর আমাদের অবস্থান হয়েছে ১৪তম। মানে আমাদের আগে আরও চারটি দেশের নাম এ তালিকায় ঢুকেছে। বাংলাদেশ দশম থেকে ১৪তম হয়েছে মানে যে আমাদের দেশে দুর্নীতি কমেছে তা নয়। দুর্নীতিতে আমাদের স্কোর প্রায় একই আছে (১ কমেছে)। ২০২৩-এ স্কোর ছিল ২৪, ২০২৪ সালের স্কোর হয়েছে ২৩। সহজ কথা, আমাদের চেয়ে আরও কয়েকটি দেশে বেশি দুর্নীতি হওয়ায় সূচকে চার ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। ১৮০টি দেশের মধ্যে আমাদের অবস্থান এখন ১৫১তম। 

 

দুর্নীতি দেশে আগেও ছিল, এখনও আছে। ব্রিটিশ আমলেও এ দেশে দুর্নীতি হয়েছে। তার প্রমাণ ‘দুর্নীতি বিরোধী আইন ১৯৪৭’, যা এখনও কার্যকর। মূলত পাবলিক সেক্টরের দুর্নীতিই এ আইনের উপজীব্য। তার মানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্রিটিশ আমল থেকেই দুর্নীতিপ্রবণ ছিলেন। সে কারণেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি প্রতিরোধে ব্রিটিশ সরকার আইন করে গেছে। ঔপনিবেশিক শাসন এখান থেকে বিদায় হয়েছে প্রায় ৮০ বছর, কিন্তু আমাদের ঔপনিবেশিক মানসিকতা এখনও দূর হয়নি। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্রিটিশ মহারানীর আমলে যেমন দুর্নীতি করেছেন, হাল আমলের মহারানী বা সরকারের আমলেও দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। সরকারি কর্মকর্তারা ব্রিটিশ আমলেও নিজেদের মহারানীর খাস প্রতিনিধি মনে করতেন, এখনও নিজেদের তা-ই মনে করেন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আজও নিজেদের জনগণের সেবক মনে করতে পারলেন না। 
দুর্নীতির সঙ্গে গণতন্ত্র ও সুশাসনের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। স্থিতিশীল গণতন্ত্রে ধীরে ধীরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা পায়। গণতন্ত্রে জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহি থাকে। গণতন্ত্র না থাকলে সরকারের জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহি থাকে না। গত ১৫ বছর বিশেষ করে ১০ বছর (২০১৪ থেকে) সরকারের জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহি ছিল না। ফলে সরকারের ভেতরে ও বাইরে দুর্নীতি বেড়েছে। 


প্রশাসন সরকারের অধীনে কাজ করে। প্রশাসন সরকারের কাছে জবাবদিহি করে। যেহেতু সরকারেরই কোনো জবাবদিহি ছিল না, তাই ধীরে ধীরে এখানে গড়ে উঠেছে এক জবাবদিহিহীন প্রশাসন। জনগণের কাছে আস্থাহীন একটি সরকার প্রশাসন বা রাষ্ট্রের অপরাপর প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে ওঠে। ফলে প্রশাসন বা সরকারের অপরাপর প্রতিষ্ঠানগুলোও জবাবদিহির ঊর্ধ্বে উঠে সরকারের কাছ থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে থাকে। এভাবে গণতন্ত্রহীনতা রাষ্ট্রের সব অঙ্গপ্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। যে যেভাবে পারে লাগামহীন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। সবাই যেন দুর্নীতির লাইসেন্স পেয়ে যায়। বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে দুর্নীতিবাজরা দুর্নীতির লাইসেন্স পেয়ে যেন ব্রেক-ফ্রি দুর্নীতিতে জড়িয়েছে। 


বিগত সরকার পুলিশের ওপর যারপরনাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পুলিশের ওপর নির্ভর করেছে। পুলিশকে দিয়ে সরকার বিরোধীদের দমন করেছে। ফলে পুলিশও এ সুযোগ নিয়ে সীমাহীন দুর্নীতিতে জড়িয়েছে। পুলিশের সবাই দুর্নীতিবাজ তা নয়। এ বাহিনীতেও সৎ কর্মকর্তা আছেন। কিন্তু মোটের ওপর গত ১৫ বছরে পুলিশ ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। সরকারের পুলিশের ওপর এই নির্ভরতার সুযোগে পুলিশ বাহিনীতে বেনজীর আহমেদের মতো কর্মকর্তারা লাগামছাড়া দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। এ তালিকায় বেনজীরের মতো আরও অনেকেই আছেন। আসলে একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না। দুর্নীতিবাজদের ওপর নির্ভর করেই টিকে থাকেন কর্তৃত্ববাদী শাসকরা। 
টিআইবির প্রতিবেদন অনুযায়ী সবচেয়ে কম দুর্নীতি হয়েছে ডেনমার্কে। তালিকায় এর পরে আছে ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম দুর্নীতি হয়েছে ভুটানে। 


গণতন্ত্র ও সুশাসনের সঙ্গে যে দুর্নীতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে, তা তালিকায় থাকা দেশগুলোর অবস্থান থেকেই বোঝা যায়। ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড– এ দেশগুলোতে এক ধরনের স্থিতিশীল শাসন ব্যবস্থা বিরাজ করছে। যেখানে যে শাসন ব্যবস্থা বিরাজ করছে, জনগণ সে শাসন ব্যবস্থাই মেনে নিয়েছে। নরওয়েতে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র চালু আছে। সেখানকার জনগণ সেই রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেই অভ্যস্ত। আবার ফিনল্যান্ডে গণতন্ত্র চলছে। এটিই সেখানকার রাজনৈতিক সংস্কৃতি। ওই দেশগুলোর শাসক ও শাসন ব্যবস্থার ওপর জনগণ আস্থাশীল। নিয়মতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাই সেখানে চলছে। ফলে সেখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসন আছে। তাই ওই দেশগুলোতে দুর্নীতি কম।


বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোতে দেখা যায় ঠিক তার বিপরীত চিত্র। ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে দক্ষিণ সুদানে। এরপর সোমালিয়া, ভেনিজুয়েলা ও সিরিয়ার অবস্থান। এই তিনটি দেশেই রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক অস্থিতিশীলতা বিরাজমান। দেশগুলোতে গণতন্ত্র নেই। রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে। কর্তৃত্ববাদী শাসন বিদ্যমান। তাই সুশাসনও নেই। ফলে দেশগুলো চরম দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। 


গণতন্ত্রহীন রাষ্ট্রগুলোতে শুধু যে দুর্নীতি বেড়ে যায় তা নয়, এসব রাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতিও ধীরে ধীরে অবনতি হয়। আসলে গণতন্ত্রের সঙ্গে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের সবকিছুই সম্পর্কযুক্ত। গণতন্ত্র থাকলে সুশাসন থাকে, সুশাসন থাকলে জনকল্যাণও হয়– কিছু কম নয় তো বেশি। উন্নয়ন না গণতন্ত্র– এই নব্য রাজনৈতিক মতবাদ কর্তৃত্ববাদী শাসনের দিকে দেশকে ধাবিত করে। উদাহরণ বাংলাদেশ ও সিরিয়া। সুশাসন থাকলে মানবাধিকার পরিস্থিতিও উন্নত হয়। কারণ সুশাসনের মূল ভিত্তিই হলো আইনের শাসন। আমাদের গণতন্ত্রের সংকট থাকায় অপরাপর সব সূচকেই আমরা নিম্নগামী। 


বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যে রাজনৈতিক সংকট দেখা যাচ্ছে, তার মূল কারণ গণতন্ত্রের সংকট। গণতন্ত্রের সংকটের কারণেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অস্থিরতার সূত্রপাত, সেখানে থেকেই মানবাধিকার লঙ্ঘন। গণতন্ত্রের সংকটের জন্যই সুশাসন বাধাগ্রস্ত হয় এবং দুর্নীতি বেড়ে যায়। কর্তৃত্ববাদী শাসনের ফলে ‍দুর্নীতি বেড়ে যায়। আবার দুর্নীতিপ্রবণ রাষ্ট্র ব্যবস্থাতেই কর্তৃত্ববাদী শাসন বিকাশ লাভ করে। ফলে দুটিরই লাগাম টেনে ধরতে হবে। তা না হলে একটি শান্তিপূর্ণ, মুক্ত ও টেকসই বিশ্বব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হবে। আমরা নিশ্চয়ই সে রকম একটি বিশ্বব্যবস্থা চাই না। কিন্তু বাস্তবে মনে হচ্ছে, আমরা যেন ক্রমে সে পথেই হাঁটছি। 

এরশাদুল আলম প্রিন্স: আইনজীবী, প্রাবন্ধিক
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ট আইব জনগণ র ক ছ র জন ত ক স র অবস থ ন সরক র র র জনগণ আম দ র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

ড. ইউনূস ও তারেকের বৈঠক জাতির জন্য স্বস্তির বার্তা: ১২ দলীয় জোট

১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক সব আশঙ্কার অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। আগামী রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে যে ফলপ্রসূ ঐকমত্য হয়েছে, তা অনিশ্চয়তা কাটিয়ে দেশের মানুষের জন্য এনেছে স্বস্তির বার্তা, আশার আলো। শুক্রবার যৌথ বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তারা।

নেতারা বলেন, সমগ্র বাংলাদেশের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সংযোগ ঘটিয়ে এপ্রিল থেকে সরে এসে নির্বাচনের জন্য ফেব্রুয়ারি প্রথমার্ধে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে নির্বাচন আয়োজনে ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

তারা বলেন, আজকের এই বৈঠক যেন শুধু কথার কথা না থাকে, প্রয়োজনীয় সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের এই সৌহার্দ্য ও সহমতের মধ্য দিয়ে জয় হবে গণতন্ত্রের, বাংলাদেশের, জনগণের।

বিবৃতিতে সই করেন- ১২ দলীয় জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার,  এলডিপির চেয়ারম্যান ও জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম, জোটের সমন্বয়ক বজাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়াতে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপার) স-সভাপতি রাশেদ প্রধান, ন্যাশনাল লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ফারুক রহমান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রাকিব, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দল (পিএনপি) চেয়ারম্যান ফিরোজ মো. লিটন ও নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি এম এ মান্নান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরানের পাল্টা আঘাতে কাঁপল ইসরায়েল
  • জাফলংয়ের পাথর কোয়ারিতে এখনও রাজনৈতিক ছায়া
  • রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে জনগণের হিস্যা কোথায়
  • আলীকদমে ২ পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনায় ‘ট্যুর এক্সপার্টের’ বর্ষা গ্রেপ্তার
  • ইরানে এখনও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল: আইডিএফ
  • স্বপ্নে হলো দেখা
  • প্রধান উপদেষ্টা অনেক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন: ফখরুল
  • ইউনূস-তারেকের বৈঠক দেশের মানুষের জন্য স্বস্তির বার্তা, আশার আলো
  • বর্তমান সংকটে হবস, রবীন্দ্রনাথ ও অমর্ত্য সেন যেখানে প্রাসঙ্গিক
  • ড. ইউনূস ও তারেকের বৈঠক জাতির জন্য স্বস্তির বার্তা: ১২ দলীয় জোট