যাত্রাবাড়ী থানার জিহাদ হোসেন ও ওয়াসিম শেখ হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একইসঙ্গে যাত্রাবাড়ী থানার জিহাদ হোসেন হত্যা মামলায় পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে তিন দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহর আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। 

এছাড়া যাত্রাবাড়ী থানার পৃথক কয়েকটি মামলায় সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তার দেখানো অন্যরা হলেন- সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা.

দীপু মনি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, গুলশান থানার সাবেক ওসি মাজহারুল ইসলাম, ভোলা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল, ভোলা- ৪ আসনের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, ঢাকা-৭ আসনের সাবেক এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিম।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, আনিসুলসহ অন্য আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর দুই হত্যা মামলায় আনিসুলের আট দিন ও মামুনের তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত আনিসুলের দুই মামলায় ছয়দিন ও মামুনের এক মামলায় তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

এদিন সকাল ১০টা ১০ মিনিটে আদালতে তোলার সময় দেখা যায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের পেছনে দুই হাত। তাঁর দুই হাতে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। পরনের সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি। মাথায় পুলিশের হেলমেট। বুকে পুলিশের বুলেট প্রুফ জ্যাকেট। 

সালমান এফ রহমানের ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তাঁর মাথায় হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। তাঁর হাত দু'খানাও পেছনে ছিল। তবে দুই হাতে হাতকড়া পরানো ছিল না। শুধু বাঁ হাতে ছিল হাতকড়া। আর ডান হাত তিনি বাম হাতের ওপরে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। 

মামুনের পেছনে ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তাঁর পরনে ছিল আকাশি রঙের পাঞ্জাবি। তাঁর দুই হাত ছিল পেছনে। দুই হাতেই পরানো ছিল হাতকড়া। আনিসুলের পেছনে ছিলেন সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। তাঁর মাথায় হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। তাঁর দুই হাতও পেছনে ছিল। পরানো ছিল হাতকড়া। 

নুরুজ্জামানের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাবেক বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। তাঁর দুই হাতও পেছনে ছিল। এক হাতে পরানো ছিল হাতকড়া। 

জাকবের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের মাথায় ছিল হেলমেট। বুকে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট। এক হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। দুজন পুলিশ সদস্য তাঁর দুই হাত ধরে সামনের দিকে হাঁটছিলেন। এর বাইরের আজ প্রায় একই সময়ে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে দুজন নারী পুলিশ সদস্য হাত ধরে হাজতখানার বাইরে নিয়ে আসেন। এরপর সালমান, আনিসুল, নুরুজ্জামানদের আদালত ভবনের নিচতলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে হাঁটিয়ে দুই তলায় ওঠানো হয়। তারপর তাঁদের একে একে আসামির কাঠগড়ায় তোলা হয়।

কাঠগড়ায় তোলার পর আনিসুল, সালমান ও নুরুজ্জামানের হাতকড়া খোলা হয়। যখন পুলিশ তাঁদের হাতকড়া খুলছিল, তখন তিনজনেরই মুখ ছিল নিচের দিকে। হাতকড়া খোলার পর বিমর্ষ মুখে সালমান তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। পাশে দাঁড়ানো আনিসুলও তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলছিলেন। তবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন দীপু মনি। 

দীপু মনির ডান পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন নুরুজ্জামান। নুরুজ্জামানের বাম পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাজী সেলিম। হাজী সেলিমের দিকে নুরুজ্জামান চেয়েছিলেন। তিনি মুখের ইশারায় হাজী সেলিমের কাছে জিজ্ঞাসা করেন, কেমন আছেন। হাজী সেলিম মুখ নাড়েন। এ সময় আনিসুলের পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন দীপু মনি। তাঁরা প্রায় দুই থেকে তিন মিনিট ধরে কথা বলতে থাকেন। আনিসুল পরে সালমানের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। 

এরপর সাবেক আইজিপি মামুনের সঙ্গে কথা বলেন সালমান। প্রায় ১০ মিনিটে ধরে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সালমান, আনিসুল, দীপু মনিরা কথা বলেন। এ সময় একজন পুলিশ সদস্য উঁচুস্বরে বললেন, ‘স্যার (বিচারক) আসছেন’। এরপর সবাই বন্ধ করেন কথোপকথন। তারপর তাদের রিমান্ড ও গ্রেপ্তার শুনানি শুরু হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ ল হ তকড় মন ত র জ র কর আইজ প সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়

রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।

গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।

আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।

পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।

প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।

পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।

সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুরনো স্বাদের ঝুরা মাংসের
  • ভাত খাওয়ার সময় কেন ভাতটাই পরে খেতে বলেন চিকিৎসকেরা?
  • অ্যান্টার্কটিকায় বিরল স্কুইডের সন্ধান
  • পানিতে ভাসছিল ২২ দিনের শিশুর মৃতদেহ, ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন মা
  • বাঁধন কাঁদলেন, কিন্তু কেন...
  • মামাত বোনকে ধর্ষণ-হত্যা করে নিখোঁজের গল্প সাজায় নয়ন: পুলিশ
  • আমাদের যত ঘুঘু 
  • বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচের নিয়ম পাল্টাচ্ছে এমসিসি
  • কমিটি নেই, সবাই নেতা
  • কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়