দেশের ৭০ ভাগ নারী তাঁদের জীবদ্দশায় অন্তত একবার হলেও শারীরিক, যৌন, মানসিক ও অর্থনৈতিক সহিংসতার শিকার হন। গত বছর (২০২৪) ৪৯ শতাংশ নারীর ওপর এ ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। পরিবারের অন্য সদস্যদের তুলনায় স্বামীর মাধ্যমে বেশি নির্যাতনের শিকার হন নারীরা।

‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০২৪’–এ চিত্র উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) যৌথভাবে এ জরিপ করে। গত বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জরিপের প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।

এর আগে ২০১১ ও ২০১৫ সালে এ ধরনের জরিপ হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নারীর জীবদ্দশায় স্বামী বা জীবনসঙ্গীর মাধ্যমে সহিংসতার বিস্তৃতি এখনো ৭০ শতাংশ। অর্থাৎ এটি উচ্চমাত্রায় রয়েছে। তবে বিগত ১২ মাসে এই হার ৪১ শতাংশ। এই হার ২০১৫ সালে জীবদ্দশায় ছিল ৭৩ শতাংশ। নন-পার্টনার সহিংসতার চেয়ে জীবনসঙ্গী বা স্বামীর মাধ্যমে সহিংসতা (আইপিভি) বিস্তারের মাত্রা বেশি। জরিপটিতে, ‘জীবনসঙ্গী’ বলতে বর্তমান বা সাবেক স্বামী এবং ‘নন-পার্টনার’ বলতে বর্তমান বা সাবেক স্বামী ব্যতীত উত্তরদাতার ১৫ বছর বয়সের পর হতে জীবনের যেকোনো সময়ে সংস্পর্শে আসা যেকোনো ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে।

জরিপে দেখা যায় যে নারীদের অন্য কারও তুলনায় স্বামীদের কাছ থেকে শারীরিক সহিংসতার শিকার হওয়ার আশঙ্কা তিনগুণ বেশি এবং যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা ১৪ গুণ বেশি। এতে প্রতীয়মান যে বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শারীরিক ও যৌন সহিংসতার ঝুঁকি অত্যধিক বেশি।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্যোগপ্রবণ এলাকার নারীরা তাঁদের জীবদ্দশায় এবং বিগত ১২ মাসে, অদুর্যোগপ্রবণ এলাকার নারীদের তুলনায় জীবনসঙ্গী বা স্বামীর মাধ্যমে বেশি মাত্রায় সহিংসতার সম্মুখীন হন।

জীবনসঙ্গী বা স্বামীর মাধ্যমে সহিংসতার মাত্রা বেশি হলেও সহিংসতার শিকার নারীদের প্রায় ৬৪ শতাংশ তাঁদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সহিংসতার কথা কাউকে কখনো বলেননি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পরিবারের সুনাম রক্ষা করার আকাঙ্ক্ষা, সন্তানদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উদ্বেগ এবং এ ধরনের সহিংসতাকে ‘স্বাভাবিক’ বলে মনে করার প্রবণতাসহ বিভিন্ন কারণ থেকে মূলত এই নীরবতা।

গতকালের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব আলেয়া আক্তার। এ ছাড়া সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএনএফপিএর ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধি মাসাকি ওয়াতাবে, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার ক্লিনটন পবকে। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপের মূল ফলাফল উপস্থাপন করেন বিবিএসের প্রকল্প পরিচালক ইফতেখাইরুল করিম।

এই খানাভিত্তিক জরিপে শহর, গ্রাম, দুর্যোগপ্রবণ, বস্তি এলাকাসহ ২৭ হাজার ৪৭৬ নারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ বনসঙ গ

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাশিয়ার প্রয়াত বিরোধী নেতা নাভালনির শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল: স্ত্রীর দাবি
  • কমলাফুল ফার্মেসি চালু করবে সিটি ব্যাংক ও ইউএনএফপিএ 
  • রূপালী লাইফের আর্থিক হিসাবে ৬৯ কোটি টাকার গরমিল
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি ইউনিটে ভর্তি: মাইগ্রেশন, বিষয় ও প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ প্রকাশ
  • হেলথ টেকনোলজি কোর্সে ভর্তি, অপেক্ষমাণ থেকে তৃতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর
  • তাপমাত্রা বেড়ে দেশের ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা, কীভাবে হচ্ছে, কেন হচ্ছে
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
  • শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দিল ঢাকা ইন্স্যুরেন্স
  • সোনালী ও রূপালী মুনাফায়, অগ্রণী ও জনতা লোকসানে