রাতে শাশুড়ি ও স্বজনদের নিয়ে স্বামীর জন্মদিনের কেক কাটেন তরুণী আঞ্জুমান মায়া (১৬)। এরপর মধ্যরাত থেকে তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন সকালে পদ্মা নদীতে ভাসমান মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে জানায় স্থানীয়রা। খবর পেয়ে শনিবার সকাল ৯টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নের কালোয়া এলাকা থেকে মরদেহ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। দুপুরে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে নৌপুলিশ। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নৌ পুলিশের উপপরিদর্শক মো.

মনির উদ্দিন।

নিহত আঞ্জুমান মায়া ওই এলাকার আজিজ শেখের ছেলে আসিফ শেখের (১৮) স্ত্রী। আসিফ কয়া মহাবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ও একটি বেসরকারি কোম্পানির খাদ্য পরিবেশক। তিনি কুষ্টিয়া সদরের ত্রিমোহনী বারখাদা এলাকার আজিম উদ্দিনের মেয়ে।

শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ভাষ্য, ‘আঞ্জুমানের উপসর্গজনিত রোগ ছিল। উপসর্গ রাতে ঘর থেকে বের করে নিয়ে নদীতে ফেলে মেরেছে।’ 

তবে বাবার বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, ‘ব্যবসায়ীর টাকা না পেয়ে আঞ্জুমানকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করেছে স্বামী আসিফ।’

স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়া ইউনিয়নের রাঁধানগর এলাকায় আঞ্জুমানের নানা বাড়ি। সাত মাস আগে নানাবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে আসিফের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এ সম্পর্কের প্রায় দুই মাস পর ঘর ছেড়ে বিয়ে করে পালিয়ে যান তারা। পরে বউ নিয়ে নিজ বাড়িতে উঠেন আসিফ। দুই বার মিলেমিশে পুনরায় তাঁদের সামাজিকভাবে বিয়ে দেন। এরপর বেশ ভালই চলছিল তাদের দাম্পত্য জীবন।

তারা আরও জানান, শুক্রবার ছিল আসিফের জন্মদিন। বাড়িতে বন্ধু ও স্বজনরা এসেছিলেন। বিকেলে আঞ্জুমান স্বামীকে নিয়ে বাজার থেকে কেক কিনে আনেন। রাত ৮টার দিকে স্বামী ও শাশুড়িকে নিয়ে ধুমধাম করে কেক কাটেন। রাতে স্বজনদের সঙ্গে খেয়ে ১০টার দিকে ঘুমিয়ে পড়েন আসিফ। আঞ্জুমান স্মার্টফোনে ব্যস্ত ছিলেন। রাত ১টার দিকে আসিফ জেগে দেখেন স্ত্রী ঘরে নেই। ঘরের দরজা খোলা। সে সময় তিনি স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়ে সম্ভাব্য স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও স্ত্রীকে পাননি। শনিবার সকাল ৬টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে পদ্মা নদীতে ভাসমান মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা।

মরদেহ উদ্ধারের পর আসিফের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, আঞ্জুমানের মরদেহের চারদিকে স্বজন ও প্রতিবেশীদের ভিড়। পাশে পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ছিলেন। ঘরে বসে ছিলেন আসিফ। 

আঞ্জুমানের শাশুড়ি ফেরদৌসী খাতুন বলেন, ‘প্রেম করে বিয়ে করলেও সংসারে কোনো অশান্তি ছিল না। শুক্রবার রাতেও সবাই মিলেমিশে জন্মদিন পালন করা হলো। সকলে একসঙ্গেই রাতে খেয়েছিলাম। পরে রাত একটার দিকে ছেলের কাছ থেকে শুনি, বউ ঘরে নেই। এরপর সবাই মিলে সারারাত খুঁজেও কোথাও পাইনি। পরে সকালে নদীতে লাশ পাইছি।’ তার ভাষ্য, ‘আঞ্জুমানের উপসর্গজনিত রোগ ছিল। প্রায়ই ঘর থেকে হারিয়ে যেত। উপসর্গই তাকে মেরেছে।’

প্রেমের সম্পর্কে পাঁচ মাস আগে নিজেরা বিয়ে করেছিলেন বলে জানিয়েছেন আসিফ শেখ। স্ত্র্রীকে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘সংসার খুব ভালো চলছিল। রাতে ধুমধাম করে আমার জন্মদিন পালন করি। রাত ১০টার দিকে শুয়ে পড়ি আমি। তখনও মায়া (আঞ্জুমান) ফোন চালাচ্ছিল। এরপর রাত ১টার দিকে জেগে দেখি মায়া নেই। রাতে খোঁজাখুঁজি করে না পাইনি। সকালে নদীতে লাশ পেয়েছি।’ তিনিও দাবি করে বলেন, ‘ স্ত্রীর উপসর্গজনিত রোগ ছিল।’

কয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রাতে নিখোঁজ ছিল ওই গৃহবধূ। সকালে স্থানীয়রা নদীতে দেখতে পান মাছধরা জালের সঙ্গে আটকে আছে লাশ। কি ঘটেছে তা ময়নাতদন্ত করলেই জানা যাবে।’

সরেজমিন রাঁধানগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নানা বাড়িতে মেয়ের মৃত্যু শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েন আঞ্জুমানের মা পারভীন খাতুন। এ সময় বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ‘আসিফ আমার মেয়েকে ছলাকলা করে বিয়ে করেছে। তিনদিন আগে ব্যবসা করার জন্য তিন লাখ টাকা চেয়েছিল। টাকা না পেয়ে মেয়েকে নদীতে ডুবিয়ে হত্যা করেছে। আমার মেয়ের কোনো উপসর্গ ছিল না। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।’

কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ বলেন, খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে নৌপুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নৌপুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মরদ হ উপসর গ মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

ভাড়া বাসায় একা থাকতেন বৃদ্ধা, তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার

চুয়াডাঙ্গা শহরের দক্ষিণ কবরস্থান পাড়ায় বাসা থেকে গুলশান আরা চমন (৬৫) নামে বৃদ্ধার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করছে পুলিশ। তিনি ঝিনাইদহের শৈলকুপার উপজেলার দামুদহ গ্রামের মৃত আবুক কাশেমের স্ত্রী। 

আজ সোমবার ( ১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। 

আরো পড়ুন:

নারায়ণগঞ্জে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানের লাশ উদ্ধার

গাজীপুরে নৌকা ভ্রমণে গিয়ে নিখোঁজ, নদীতে মিলল লাশ

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদুর রহমান জানান, শয়ন কক্ষের মেঝে থেকে গুলশান আরা চমনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘরের ভেতর থেকে দরজা লাগনো ছিল। চমন হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে।

বাড়ির মালিকের স্ত্রী রেহেনা খাতুন বলেন, ‘‘দীর্ঘ সাত বছর বাসা ভাড়া নিয়ে চমন একাই বসবাস করছিলেন। তিন মাস আগে তিনি স্ট্রোক করলে তাকে উদ্ধার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তাকে পরামর্শ দেওয়া, ঘরের দরজা খোলা রেখে ঘুমাতে। যেন প্রয়োজনে সাহায্য করতে যায়। কিন্তু উনি দরজা দিয়ে ঘুমাতেন।’’ 

বাসা থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকলে তিনি পুলিশে খবর দেন।

গুলশান আরা চমনের ছোট বোন খুশি বলেন, ‘‘গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) চমনকে সঙ্গে নিয়ে বাজার করে তাকে বাড়ি রেখে যাই। এরপর তার সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি।’’  

ঢাকা/মামুন/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার 
  • আমার স্বামীর উপরে কু-নজর পড়েছে: অঙ্কিতা
  • সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
  • ‘আমি থানার ওসি, আপনার মোবাইল হ্যাকড হয়েছে’
  • কালিয়াকৈরে এক মাসে ২০ ডাকাত গ্রেপ্তার 
  • পিসিওএস এখন জনস্বাস্থ্য সমস্যা
  • গবাদিপশু থেকে মানুষের শরীরে ‘তড়কা’ রোগ, প্রতিরোধে যা করবেন
  • ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
  • প্রোস্টেট ক্যানসারের উপসর্গগুলো আপনার জানা আছে কি
  • ভাড়া বাসায় একা থাকতেন বৃদ্ধা, তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার