সাত বছর ধরে হাতে লিখে পত্রিকা বের করছেন একজন দিনমজুর
Published: 14th, March 2025 GMT
পত্রিকার নাম ‘আন্ধারমানিক’। পত্রিকার স্লোগান ‘আমরাই লিখি আমাদের খবর’। ৭ বছর ধরে হাতে লিখেই পত্রিকাটি বের করছেন হাসান পারভেজ নামে একজন দিনমজুর। পত্রিকাটির ঘোষণায় জানানো হয়েছে, ‘এটি উপকূলীয় কমিউনিটি পত্রিকা’।
পত্রিকার রিপোর্টার রয়েছেন ১৬ জন। তাদের মধ্যে কেউ ইলেট্রিশিয়ান, কেউ গৃহিনী আবার কেউ মৎস্যজীবী। তারা সবাই জীবিকার পাশাপাশি কাজের ফাঁকে ফাঁকে লিখেন নিজের এবং হতদরিদ্র মানুষের অসহায়ত্বের গল্প। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে এ পত্রিকায় লিখে আসছেন তারা। আর ৭ বছর ধরে ২ মাস অন্তর অন্তর ব্যক্তিগত খরচে এ পত্রিকাটি প্রকাশ করছেন দিন মজুর সম্পাদক হাসান পারভেজ।
হাতে লেখা পত্রিকা ‘আন্ধারমানিক’
পত্রিকাটির সম্পাদক জানালেন, এরমধ্যে এ পত্রিকাটির জনপ্রিয়তা বেড়েছে বহুগুণে। তবে সরকারি সহায়তা পেলে তিনি সাপ্তাহিক হিসেবে পত্রিকাটি বের করতে চান।
হাসান পারভেজ পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাতলা গ্রামের বাসিন্দা। ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল হওয়ায় তাদের গ্রামে গিয়ে পৌঁছায় না কোন জাতীয় বা আঞ্চলিক পত্রিকা। তাই খেটে খাওয়া সাধারন মানুষের সুখ-দুঃখের গল্প তুলে ধরতে হাতে লিখে বের করেন ‘আন্ধারমানিক’।
পত্রিকা তৈরিতে ব্যস্ত হাসান পারভেজ
২০১৯ সালের ১ মে এ পত্রিকার যাত্রা শুরু হয়। পত্রিকাটি দীর্ঘ ৭ বছর ধরে প্রকাশিত হওয়ায় পাঠক বেড়েছে অনেক। তারা পত্রিকাটি সাপ্তাহিক হিসেবে বের করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
পশ্চিম সোনাতলা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আব্দুর রব মিয়া বলেন, “বয়সের ভারে এখন আর কোন কাজকর্ম করতে পারিনা। তাই বাড়িতে থাকা পড়ে। মোবাইল ইন্টারনেট সম্পর্কেও তেমন ধারণা নেই। তাই মাঝে মাঝে হাসান পত্রিকা দিয়ে যায়, সে পত্রিকা পড়ি। বেশ ভালোই লাগে। তবে তাকে প্রতি সপ্তাহে পত্রিকা দিতে বলেছি, সম্ভবত আর্থিক সমস্যার কারণে সে দিতে পারছে না।”
পাঠকের হাতে ‘আন্ধারমানিক’ পত্রিকা
একই এলাকার সত্তরোর্ধ্ব জসিম হোসেন বলেন, “এলাকার কোন কৃষক কোন সবজিতে অধিক লাভবান হয়েছে, কোন ব্যক্তি হাঁস বা মুরগি পালনে সাবলম্বী হয়েছে, আবার কোন ব্যক্তি অসহায় অবস্থায় আছে সে সব নিউজই হাসান পারভেজের পত্রিকায় ছাপা হয়। এসব ইতিবাচক পত্রিকা পড়তে বেশ ভালই লাগে। তবে দুই মাস অন্তর অন্তর পত্রিকাটি ছাপা হচ্ছে। আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি পত্রিকাটি যেন প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার হলেও ছাপা হয়।”
‘আন্ধারমানিক এর নারী রিপোর্টার
হাসান পারভেজ বলেন, “আর্থিক সংকটের কারণে প্রতি দুইমাস অন্তর অন্তর এ পত্রিকাটি বের করছি। তবে একটি প্রিন্টার এবং কম্পিউটারসহ সরকারি সহায়তা পেলে সাপ্তাহিক হিসেবে পত্রিকাটি বের করার ইচ্ছা রয়েছে আমার।”
‘আন্ধারমানিক এর একজন রিপোর্টার
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, “হাসান পারভেজের পত্রিকার প্রচার সংখ্যা বাড়াতে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। পাশাপাশি তার দাবিগুলো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।”
ঢাকা/ইমরান/টিপু
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ডেঙ্গু-করোনায় দুই মৃত্যু, আক্রান্ত ২৭৫ জন
ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৭৫ জন। তাদের মধ্যে ডেঙ্গুতে ২৪৯ ও করোনা নিয়ে ভর্তি ২৬ জন।
রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কভিড-১৯ ৩০০ শয্যার হাসপাতাল ডেঙ্গু ও করোনা রোগীর চিকিৎসায় প্রস্তুত। বর্তমানে করোনা আক্রান্ত ১০ ও ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ১৫ রোগী চিকিৎসাধীন। কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগীদের ৬০ শতাংশের বেশি ঢাকার বাইরে থেকে আসা। করোনা আক্রান্ত তিনজনকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে রোববার পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন একজনসহ চলতি বছর ডেঙ্গুতে ৩০ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৮৮ জনে। মারা যাওয়া ব্যক্তি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪৩, ঢাকা বিভাগে ৯, চট্টগ্রামে ৩৯, ময়মনসিংহে ৭, খুলনায় ৮, রাজশাহীতে ৫, রংপুরে ৩ ও সিলেট বিভাগে একজন ভর্তি হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৬৫৯ জন।
আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে নতুন করে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা বিভাগের ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী পুরুষ এ রোগী একটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ নিয়ে চলতি বছর করোনায় চারজনের মৃত্যু হলো। নতুন করে ২৬ জনসহ এ বছর আক্রান্ত দাঁড়িয়েছে ২৪৬ জনে। গত এক দিনে ২৯১ নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ রোগী পজিটিভ হয়েছেন।
ঢাকায় বাড়ছে বাইরের রোগী
ডেঙ্গু ও করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কভিড-১৯ হাসপাতালের ৩০০ শয্যা প্রস্তুত করেছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এখানে ২৫ রোগী চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে আইসিইউতে থাকা তিনজনের অবস্থা জটিল।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, চিকিৎসাধীন রোগীর বড় অংশ ঢাকার বাইরের। প্রকোপ বাড়লে আগের মতো ধাপে ধাপে লোকবলের পাশাপাশি শয্যা বৃদ্ধি করা হবে।
সরেজমিন হাসপাতালটির বহির্বিভাগে ২০ থেকে ৩০ রোগী ও তাদের স্বজনের ভিড় দেখা যায়। জ্বর-সর্দি নিয়ে এসেছেন। লক্ষণ দেখে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দিলেও, অনেকেই তা না করে ফিরে যান। প্রায় আধা ঘণ্টার অপেক্ষায় অ্যাম্বুলেন্সে গাজীপুর থেকে এক রোগীকে পাওয়া যায়। স্বজন জানান, চার দিন ধরে শরীর ব্যথা, জ্বর। পরীক্ষা করে রোগ শনাক্ত না হওয়ায় এ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
মাকে ভর্তি করেছেন লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার ইউনিয়নের বাহার হোসেন। তিনি সমকালকে জানান, স্থানীয় হাসপাতালে অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় ডিএনসিসি হাসপাতালে মাকে নিয়ে এসেছেন তিনি। বর্তমানে অবস্থা ভালো। পেটে একটু ব্যথা আছে, আলট্রাসনোগ্রাম করে ছাড়পত্র দেবেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল তানভীর আহমেদ জানান, গত মাস থেকে রোগী বাড়ছে। মে মাসে করোনা নিয়ে ভর্তি হন ২৪ জন। এ মাসের ১৫ দিনে ভর্তি হয়েছেন ১৪ জন। ডেঙ্গু নিয়ে মে মাসে ভর্তি হন ৪৭ জন। চলতি মাসে এ পর্যন্ত এসেছেন ২৬ জন। রোববার বহির্বিভাগে পাঁচ শতাধিক রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়। বেশির ভাগ রোগী আসছেন জ্বর-সর্দি ও গায়ে ব্যথা নিয়ে। গুরুতর রোগীরা অন্য হাসপাতালের রেফারে আসছেন।
বাইরের রোগী বেশি হলেও তা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ভর্তি রোগীদের ৬০ শতাংশের বেশি ঢাকার বাইরের বাসিন্দা।
কর্নেল তানভীর আহমেদ বলেন, হাসপাতালে প্রতিটি শয্যার সঙ্গে অক্সিজেন লাইন রয়েছে। বর্তমানে একসঙ্গে ৩০০ শয্যায় চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। ৪৫ আইসিইউ সক্রিয়, ৭৯ চিকিৎসক ও নার্স রয়েছেন ৮৪ জন।
চট্টগ্রামে দুই হাসপাতালে শুরু পরীক্ষা
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ৬৫ শয্যা করোনা চিকিৎসায় প্রস্তুত করা হয়েছে। গতকাল এখানে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তবে রোগীদের মধ্যে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। দুই হাসপাতালে বর্তমানে তিনজন চিকিৎসাধীন। পাঁচ শয্যার আইসিইউ প্রস্তুত করার কথা থাকলেও পারেনি কর্তৃপক্ষ। আজ তিনজনের নমুনা পরীক্ষা করে একজনের করোনা শনাক্ত হয়।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আকরাম হোসেন বলেন, ‘আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত হলেও যন্ত্রপাতির অভাবে আইসিইউ শয্যাগুলো সক্রিয় করা সম্ভব হয়নি।’ চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘আপাতত ডেঙ্গু ওয়ার্ডকে করোনা রোগীর জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে। আইসিইউ প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা করব।’
খুলনার পিসিআর ল্যাব বিকল
খুলনা ব্যুরো জানায়, জেলায় সরকারিভাবে করোনা পরীক্ষার একমাত্র আরটিপিসিআর ল্যাব খুলনা মেডিকেল কলেজে। মেরামত না করায় দীর্ঘদিন পিসিআর ল্যাবটি বিকল পড়ে আছে। বর্তমানে র্যা পিড অ্যান্টিজেন্ট কিট দিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
খুমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান জানান, ৪০ শয্যা করোনা রোগীর জন্য প্রস্তুত করেছেন তারা।
সিলেটের দুই বন্দরে বিকল থার্মাল স্ক্যানার
সিলেট ব্যুরো জানায়, সরকারি নির্দেশে সিলেটে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও এর অধীনে শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যে এখানে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হবে। অবশ্য গত শুক্রবার শামসুদ্দিন হাসপাতালে দুই করোনা রোগী ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্যের বিভাগীয় পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানান, দুই নারী-পুরুষ চিকিৎসাধীন। একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
এদিকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও তামাবিল স্থলবন্দরের থার্মাল স্ক্যানার বিকল হয়ে যাওয়ায় শরীরের তাপমাত্রা মাপা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ওসমানী বিমানবন্দরে বিকল্প পদ্ধতি ইনফারেড থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।