পুঁজিবাজারে নতুন শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল (এসএসি) গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি বিএসইসি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ফলে, আগের নয় সদস্যের শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল বাতিল হতে যাচ্ছে।

এর আগে ২০২৩ সালের ২৮ মে বিএসইসির তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা জারি করেন। দেশের পুঁজিবাজারে ইসলামী শরিয়াভিত্তিক বিভিন্ন প্রকার সিকিউরিটিজ ইস্যু আনা, ইসলামিক ক্যাপিটাল মার্কেট গঠন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শরিয়াহসম্মত সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করেছিল বিএসইসি। ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (সিকিউরিটিজ মার্কেট শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল) বিধিমালা, ২০২২ নামে গেজেটটি প্রকাশ করা হয়।

শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের কাজ হলো— বিএসইসির চাহিদা অনুসারে বিভিন্ন ইস্যুতে পরামর্শ দেওয়া, শরিয়াহ-সংক্রান্ত গাইডলাইন প্রণয়ন, ইসলামী শরিয়াহসম্মত সিকিউরিটিজের মান প্রণয়ন, কোনো সিকিউরিটিজ শরিয়াহসম্মত কি না, সে বিষয়ে মতামত দেওয়া।

গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে পুনর্গঠিত বিএসইসি পুঁজিবাজারের জন্য গঠিত শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিএসইসির নতুন সিদ্ধান্ত

বিএসইসির পক্ষ থেকে শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল সম্পর্কে কমিশনকে অবহিত করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, আলোচনা ও সার্বিক দিক বিবেচনা করে কমিশনের ২০২৩ সালের ২৮ মে জারি করা আদেশের মধ্যেমে গঠিত শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল বিলুপ্ত করা হবে। একইসঙ্গে নতুন শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল গঠন করা হবে।

কমিশন আরো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচনের জন্য ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জারি করা আদেশের মাধ্যমে গঠিত কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ বিষয়ে বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

শরিয়াহভিত্তিক সিকিউরিটিজ ইস্যু করতে এবং ইসলামিক ক্যাপিটাল মার্কেট গঠন করতে কমিশন শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল গঠনের প্রয়োজন মনে করছে। এজন্য নয় সদস্যের শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। 

শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক ড.

মোহাম্মদ আব্দুর রশিদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কাউন্সিলের জন্য নির্বাচিত পাঁচ জন শরিয়াহ স্কলার হলেন—অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ (ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), মুফতি শহীদ রাহমানী (চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার, সেন্টার ফর ইসলামিক ইকোনমিকস বাংলাদেশ), মুফতি ইউসুফ সুলতান (ফাউন্ডার অ্যান্ড চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার, এডিএল অ্যাডভাইজরি, মালয়েশিয়া), মুফতি ড. ওয়ালিউর রহমান খান (ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিনিধি) এবং মাওলানা শাহ ওয়ালী উল্লাহ (খতিব, সোবহানবাগ মসজিদ অ্যান্ড মাদ্রাসা কমপ্লেক্স)।

ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্ট চার সদস্য হলেন—অধ্যাপক আবু তালেব (ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং এক্সপার্ট), এ কে এম নুরুল ফজল বুলবুল (লিগ্যাল এক্সপার্ট), অধ্যাপক মো. নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া (অ্যাকাউন্টিং এক্সপার্ট) এবং মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ (ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপার্ট)।

শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক সিকিউরিটিজ নিয়ে আসার সুযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং শরিয়াহভিত্তিক সিকিউরিটিজে আগ্রহী দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরো উৎসাহী হবেন।

ঢাকা/এনটি/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসইস র ইসল ম ক সদস য গঠন র

এছাড়াও পড়ুন:

দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে পুঁজিবাজার ও বন্ডকে ব্যবহারের প্রস্তাব

দেশের পুঁজিবাজার ও বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত যৌথ কমিটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে পুঁজিবাজার ও বন্ডকে ব্যবহার করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

গত ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ‘বন্ড মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ: চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড পলিসি রিকমেন্ডেশনস’ শীর্ষক প্রেজেন্টেশনে এ প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।

আরো পড়ুন:

পুঁজিবাজারে সূচকের বড় পতন, কমেছে লেনদেন

তহবিলের অপব্যবহার: বিএসইসির তদন্তের মুখে বেক্সিমকোর ২ বন্ড

বিএসইসি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান, নুরুন নাহার, জাকির হোসেন চৌধুরী, গভর্নরের উপদেষ্টা মো. আহসান উল্লাহসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। আর বিএসইসি থেকে সংস্থার চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনার ফারজানা লালারুখ ও বিএসইসির শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।

যৌথ কমিটির প্রেজেন্টেশনে বাংলাদেশে বন্ড মার্কেট উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা ও বিদ্যমান বিভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয় এবং চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় করণীয় নিয়েও বিস্তারিত উপস্থাপন করা হয়। কমিটির পক্ষ থেকে এসময় কিছু নীতিগত সুপারিশ তুলে ধরা হয়। যৌথভাবে সবার সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে বন্ড মার্কেট উন্নয়নের ওপর এসময় গুরুত্বারোপ করা হয়। একইসঙ্গে যৌথ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়।

এছাড়াও কমিটি জাতীয় পরিসরে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো, বৃহৎ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, আইডিআরএ এবং বিএসইসিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি সেমিনার আয়োজনের সুপারিশ করেছে। কমিটির মতে, ‘সকলের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে দেশে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের ক্ষেত্রে বন্ড মার্কেট ও পুঁজিবাজারকে ব্যবহারের বিষয়টি প্রচার ও প্রসার করা জরুরি।’

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, অনুষ্ঠানে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারের সুযোগ ও সম্ভাবনাকে সদ্ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন তথা পুঁজি উত্তোলনের সুযোগকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাংক ঋণের ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ ও ঝুঁকি হ্রাসের মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিতের বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে।

যৌথ কমিটি জানায়, ‘বিশেষ করে দেশের বৃহৎ কোম্পানিগুলোকে ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে বন্ড ও সিকিউরিটিজ ইস্যুর মাধ্যমে অর্থায়নের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। একইসঙ্গে দেশে একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠা ও বন্ড মার্কেটের তারল্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বারোপ করতে হবে।’

প্রসঙ্গত, প্রধান উপদেষ্টা সভাপতিত্বে গত ১১ মে তার বাসভবন যমুনায় পুঁজিবাজারের সঠিক অবস্থা পর্যালোচনা এবং উন্নয়নে করণীয় নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএসইসির চেয়ারম্যানসহ অর্থ উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে পাঁচটি নির্দেশনা দেন, যার মধ্যে ‘দেশের বৃহৎ কোম্পানিগুলো দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে পুঁজিবাজারে বন্ড বা শেয়ার ছেড়ে পুঁজি সংগ্রহ করে, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ’ শীর্ষক নির্দেশনা অন্যতম। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা মোতাবেক ইতোমধ্যে পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য কমিশন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যক্রম শুরু করেছে। গঠিত যৌথ কমিটিও এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সমন্বিত ও যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে আগামীতে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের প্রধান উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারকে সম্পূর্ণরূপে বিকশিত করে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়ন বেগবান হবে বলে বিশ্বাস করছে সংস্থাটি।

ঢাকা/এনটি/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কালচে হয়ে যাচ্ছে মোগল আমলের লালকেল্লা
  • জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা, নির্বাচন ২৭ নভেম্বর
  • জিল হোসেন মারা গেছেন, আদালতে তাঁর লড়াই শেষ হবে কবে
  • প্রকৌশল পেশাজীবীদের দাবি পূরণে উপাচার্য-অধ্যক্ষদের সঙ্গে আগামীকাল বৈঠক
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর
  • বিএসইসির তদন্তের মুখে ভ্যানগার্ড ও ক্যাপিটেক অ্যাসেট
  • কীভাবে নেট রান রেট হিসাব করা হয়, সুপার ফোর উঠতে বাংলাদেশের হিসাব কী
  • সোনালী ও রূপালী মুনাফায়, অগ্রণী ও জনতা লোকসানে
  • এক সপ্তাহের মধ্যে জকসু নির্বাচনের রূপরেখাসহ ৫ দাবি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের
  • দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে পুঁজিবাজার ও বন্ডকে ব্যবহারের প্রস্তাব