রূপগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ, আহ
Published: 9th, April 2025 GMT
বিনা নোটিশে ছাঁটাই, বোনাস ও বকেয়া বেতনের দাবিতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে রবিনটেক্স নামে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন চার ঘণ্টা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে গেলে শ্রমিকদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ঘটনা ঘটে। এতে শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
সংঘর্ষের ঘটনায় ১০ জনকে আটকের কথা জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (‘গ’ সার্কেল) মেহেদী ইসলাম। শ্রমিক ছাঁটাই ও সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
বুধবার (৯ এপ্রিল) দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জের আউখাবো এলাকায় রবিনটেক্স পোশাক কারখানার সামনে ঘটনাটি ঘটে। শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়।
আরো পড়ুন:
ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে ছাত্রদলের ২ পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৪
ক্যারাম খেলা নিয়ে ২ গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, আহত ২০
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিনটেক্স নামে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানায় প্রায় ৮-১০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত ২৯ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত পোশাক কারখানাটি বন্ধ ছিল। বন্ধ দেওয়ার আগে গত ২৮ মার্চ বিনা নোটিশে ৬৫ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। কারখানা বন্ধ দেওয়ার আগে শ্রমিকদের ৬৫ শতাংশ বোনাস দেওয়ার কথা থাকলেও ৫০ শতাংশ মালিকপক্ষ প্রদান করেন। শ্রমিকদের এক মাসের বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও ২০ দিনের বেতন দিয়েই কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার কারখানা খোলার দিন শ্রমিকরা মালিকপক্ষকে ছাঁটাইয়ের কারণ, বেতন ও বোনাস দেওয়ার কথা জানান। মালিকপক্ষ টালবাহানা শুরু করেন। আজ সকালে শ্রমিকরা তাদের দাবি নিয়ে কারখানার ভেতরে অবস্থান করছিল। এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার কথা বলেন। এসময় তাদের সঙ্গে শ্রমিকদের বাকবিতণ্ডা হয়। পরে শ্রমিকরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে পানির বোতল নিক্ষেপ করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শ্রমিকদের লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেন। পরে শ্রমিকরা কারখানার বাইরে গিয়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছের গুঁড়ি ফেলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবরোধ করে।
এসময় মহাসড়ক থেকে শ্রমিকদের সরাতে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। শ্রমিকরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ করে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সেনাবাহিনীর লেফটেনেন্ট মুবীন, সৈনিক বাঁধন, সোহরাব, মেহেদী ও শ্রমিকদের মধ্যে শাফিয়া, রুনা, মলিনা, মাজেদা, রুপুসহ শতাধিক আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আন্দোলনরত শ্রমিক জানান, তারা কারখানার ভেতরে শান্তিপূর্ণভাবে দাবি আদায়ের চেষ্টা করছিলেন। তাদের ওপর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিচার্জ করে। এতে নারীসহ ৬৫ জন শ্রমিক আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, “রবিনটেক্স গার্মেন্টস কর্মীদের মধ্যে আজ অসন্তোষ দেখা দেয়। এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কাজে যোগ দেওয়ার কথা বলে। শ্রমিকরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন।”
ঢাকা/অনিক/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ঘর ষ আহত ব হ ন র সদস য স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
‘এইচ টি ইমামের’ বন্ধ কারখানায় ডাকাতির চেষ্টা, আটক ৬
গাজীপুরের শ্রীপুরে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা পিপিএস পাইপ অ্যান্ড প্লাস্টিক কারখানায় ডাকাতির চেষ্টা করা ছয় ব্যক্তিকে আটক করেছে স্থানীয় জনতা ও পুলিশ। এসময় ক্ষুদ্ধ লোকজন তাদের মারধর করেন।
সোমবার (২৮ জুলাই) রাত ১১টার দিকে শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের সাতখামাইর এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে গুরুতর দুইজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) শ্রীপুর থানার ওসি মো. আব্দুল বারিক এতথ্য জানান।
আরো পড়ুন:
র্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমনের বাবাকে মারধরের অভিযোগ
গাজীপুরে গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ১, আহত ৩
এলাকাবাসীর ভাষ্য, এই কারখানাটি কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের। গত বছরের ৫ আগস্ট কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে কারখানাটি ইসলামী ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
ইসলামী ব্যাংক শ্রীপুর শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “রাত ১১টার দিকে কারখানার তৃতীয় তলায় সন্দেহজনক কিছু গতিবিধি দেখতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ও স্থানীয়দের জানানো হয়। তারা ঘটনাস্থলে আসেন। এসময় ডাকাতরা পালানোর চেষ্টা করলে ছয়জনকে ধরা সম্ভব হয়।”
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ১০–১২ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল প্রথমে প্রাচীর টপকে কারখানার ভেতরে প্রবেশ করে। তারা কারখানার নিরাপত্তা প্রহরীর হাত-পা বেঁধে মারধর করে এবং লুটপাট শুরু করে। স্থানীয় লোকজন গিয়ে ছয়জনকে আটকের পর মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
কারখানার নিরাপত্তা প্রহরী মো. মকবুল হোসেন বলেন, “গেট টপকে কয়েকজন আমার ওপর চড়াও হয়। আমাকে বেঁধে মারধর করে। যখন লোকজন আসতে শুরু করে, তখন ডাকাতেরা দেয়াল টপকে পালাতে শুরু করে।”
আটক ডাকাতরা হলো- ময়মনসিংহের বাঘটিয়ার মো. সোহেল মিয়া (৩২), তারাকান্দার মো. এমদাদুল হক (৪৫), বগুড়ার কামুলার মো. ফারুক (৩২), নওগাঁর রাজাপুরের আরিফ (৩০), নরসিংদী বালুর মাঠ এলাকার সীমান্ত (২১) ও চাঁদপুরের ইব্রাহীম (২৩)।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. আজগর হোসেন সোহাগ জানান, “রাত ১২টার দিকে ছয়জনকে আহত অবস্থায় পুলিশ নিয়ে আসে। চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, গুরুতর সোহেল ও এমদাদুলকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”
শ্রীপুর থানার ওসি মো. আব্দুল বারিক বলেন, “কারখানাটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। ডাকাতরা যন্ত্রপাতি লুট করতে এসেছিল। স্থানীয়দের সহায়তায় ছয়জনকে ধরতে সক্ষম হই। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। আটক ব্যক্তিরা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।”
ঢাকা/রফিক/মাসুদ