আপন মামার হাতে খুন রোহিঙ্গা কিশোর, মুক্তিপণ দিয়েও রক্ষা হয়নি
Published: 17th, April 2025 GMT
কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবির থেকে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করা হয়েছিল রোহিঙ্গা কিশোর মো. আকরামকে (১৩)। নানা কৌশলে দুই লাখ টাকার বেশি মুক্তিপণ আদায় করা হয়। তারপরও রক্ষা পায়নি আকরাম। তাকে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়। ঘটনার ১৪ দিন পর পুলিশ মোহাম্মদ কামাল (২৫) নামে আরেক রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থেকে আকরামের মরদেহ উদ্ধার করেছে। গ্রেপ্তার কামাল সম্পর্কে নিহত আকরামের আপন মামা।
পুলিশ জানায়, নিহত আকরাম উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরের মোহাম্মদ ইদ্রিসের ছেলে। গ্রেপ্তার কামাল একই আশ্রয়শিবিরের আবুল কাশেমের ছেলে।
ঘটনার সভ্যতা নিশ্চিত করে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো.
মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী আরও বলেন, ৩ এপ্রিল মোহাম্মদ আকরাম অপহরণের শিকার হয়। এরপর পরিবারের কাছে ফোন করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরবর্তী সময়ে আকরামের বাবা মোহাম্মদ ইদ্রিস মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের অ্যাপস থেকে ২ লাখ ১৩ হাজার টাকা পাঠান। এরপরও আকরামকে ছেড়ে না দেওয়ায় মঙ্গলবার তার বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে উখিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ জানায়, মামলা দায়েরের পরপরই উখিয়া থানার একটি বিশেষ দল আকরামকে উদ্ধারে কাজ শুরু করে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গতকাল বুধবার বিকেলে কামালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
অভিযুক্ত রোহিঙ্গা কামাল সাতকানিয়া বিবিসি নামের একটি ইটভাটায় কাজ করেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কামাল স্বীকার করেন, তিনি ৩ এপ্রিল সকালে তাঁর বোনের বাড়িতে ঈদ উপলক্ষে বেড়াতে যান। ফেরার সময় কৌশলে ভাগনে আকরামকে বাসে করে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার কেরানীহাট বাজারে নিয়ে যান। কেরানীহাট থেকে তেমহনী এলাকায় নিয়ে আকরামকে আটকে রাখেন। ৪ এপ্রিল বোনের নম্বরে কল করে আকরামকে দিয়ে কথা বলিয়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশায় অপহরণ চক্রের দেওয়া অ্যাকাউন্টে ২ লাখ ১৩ হাজার টাকা পাঠায় পরিবার। কিন্তু মুক্তি পেলে বাড়িতে ফিরে সব ঘটনা বলে দেবে, এমন সন্দেহে কামাল শ্বাসরোধ করেন তাঁর ভাগনেকে।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার কামালের দেখিয়ে দেওয়া রসুলাবাদ গ্রামের একটি খালের কচুরিপানার নিচ থেকে গতকাল সন্ধ্যায় আকরামের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফ হোসাইন বলেন, আকরামের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে আকরামের এক জোড়া প্লাস্টিকের স্যান্ডেল পাওয়া যায়। গ্রেপ্তার কামালকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের তথ্য বলছে, এ নিয়ে গত ১৫ মাসে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৪৫ জন এবং উখিয়া থেকে ৮৮ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে বেশির ভাগ মুক্তিপণ দিয়ে ফিরলেও হত্যা করা হয়েছে ৩ জনকে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পটিয়ায় ব্যবসায়ীকে অপহরণ, দুই ঘণ্টা পর উদ্ধার
চট্টগ্রামের পটিয়া পৌর সদরের মুন্সেফ বাজার এলাকার একটি দোকান থেকে নুরুল আবছার (২৭) নামের এক ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায় একদল মুখোশধারী ব্যক্তি। আজ বুধবার সকাল সাতটায় তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে পুলিশের তৎপরতায় সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি ছাড়া পান।
উদ্ধারের পর পটিয়া থানা প্রাঙ্গণে অপহরণের শিকার নুরুল আবছার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ব্যাংকে চাকরি করতেন। সম্প্রতি তাঁর চাকরি চলে যায়। এরপর পটিয়া পৌর সদরের মুন্সেফ বাজার এলাকার সাহিত্য বিশারদ সড়কে মুরগির দোকান দেন। প্রতিদিনের মতো আজ সকালে দোকান খোলেন তিনি। এ সময় তিন থেকে চারজন মুখোশধারী লোক ধারালো অস্ত্রের মুখে তাঁকে ধরে অটোরিকশায় উঠিয়ে নিয়ে যায়। তারা তাঁর পকেটে থাকা ৪০ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। পরে আরও ৪ লাখ টাকা দাবি করে, পরে ১৭ লাখ এনে দিতে বলেন। তাঁকে চন্দ্র কালারপোল নামের নির্জন এলাকায় নিয়ে অপহরণকারীরা তাঁকে মারধরের পাশাপাশি ছুরিকাঘাতও করেন।
পটিয়া থানার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) প্রদীপ চন্দ্র দে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত তাঁকে উদ্ধারের তৎপরতায় নামে। পরে চন্দ্র কালারপোল এলাকায় পুলিশ গেলে উপস্থিতি টের পেয়ে অপহরণকারীরা পালিয়ে যায়।
পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান জানান, ব্যবসায়ীকে অপহরণ করার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরে তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।