রাষ্ট্রের মূলনীতি পরিবর্তনে জোর আপত্তি বিএনপির
Published: 17th, April 2025 GMT
সংবিধান সংস্কারে বিএনপি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে লিখিতভাবে যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছিল, গতকাল কমিশনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় নানা যুক্তি-ব্যাখ্যায় দলটি সে অবস্থানই প্রকাশ করেছে। অর্থাৎ সংবিধান ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি পরিবর্তনে কমিশনের করা সুপারিশগুলোতে বিএনপির জোরালো আপত্তি রয়েছে।
তবে দলটির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, কিছু কিছু বিষয়ে কমিশনের যুক্তিসংগত সুপারিশ গ্রহণের জন্য বিবেচনা করছে বিএনপি। সে বিষয়গুলো দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে।
সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হয়। তবে আলোচনা শেষ হয়নি। আগামী রোববার আবারও আলোচনা হবে বলে ঐকমত্য কমিশন ও বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গতকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনের কিছু প্রস্তাব (প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, মৌলিক অধিকার, আইন বিভাগ) নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র
এছাড়াও পড়ুন:
বৈঠকে আওয়ামী লীগের বিচার ও মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে একমত এনসিপি ও গণসংহতি আন্দোলন
নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বৈঠক করেছে গণসংহতি আন্দোলন। বৈঠকে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার ও রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে দুই দলের মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ এবং নির্বাচনের আগে সংস্কার কীভাবে করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা করেছেন দল দুটির নেতারা।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়। আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির প্রতিনিধিদলে ছিলেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম, আশরাফ উদ্দীন মাহাদী ও অনিক রায়, যুগ্ম সদস্যসচিব ফরিদুল হক ও মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান। অন্যদিকে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বে দলের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার, হাসান মারুফ রুমি ও মনির উদ্দিন পাপ্পু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, দীপক রায়, ইমরাদ জুলকারনাইন ও তরিকুল সুজন এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অঞ্জন দাস বৈঠকে অংশ নেন।
এনসিপি ও গণসংহতি আন্দোলনের মধ্যে এটি ছিল প্রথম বৈঠক। বৈঠক শেষে এনসিপির কার্যালয়েই দুই দলের নেতারা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি জানান, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, সাংবিধানিক কমিশনের মাধ্যমে সাংবিধানিক পদে নিয়োগ, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, বিচার বিভাগের পৃথক্করণ, নারী আসন ও স্থানীয় সরকার প্রসঙ্গ, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, ক্ষমতার ভারসাম্য, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব—এসব বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ন্যূনতম একটা ঐকমত্যে আসতে আমরা আলোচনা চালাব। একই সঙ্গে রাজপথেও আমাদের যার যার জায়গা থেকে সংগ্রাম চলবে।’
সাকি বলেন, নতুন একটা রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি হবে, বাংলাদেশ একটা গণতান্ত্রিক যাত্রায় হাঁটবে—এটা শহীদের স্বপ্ন ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা। সংস্কারের জন্য যে জন–আকাঙ্ক্ষা তা দেশে ক্ষমতার ভারসাম্য ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে এবং সত্যিকার অর্থে জনগণের হাতে ক্ষমতা ন্যস্ত হবে। সেই জায়গাটা রাষ্ট্র কাঠামোগতভাবে কীভাবে তৈরি করা যাবে, সে বিষয়ে আমরা জোর দিয়েছি। এগুলোসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের বিচার ও সংস্কার নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে সাকি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগের যারা গত ১৫ বছরের গুম-খুন, হামলা-মামলা ও লুটপাটে যুক্ত এবং সর্বশেষ জুলাই-আগস্টে হত্যাকাণ্ডে যারা দায়ী, তাদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের দায়টাকে আমরা বিচারের আওতায় আনাটাকে দেখতে চাই। আমরা চাই, সংস্কারে একটা ন্যূনতম ঐকমত্য দ্রুত তৈরি হোক। সেই সংস্কার কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সে বিষয়েও যাতে আমরা একটা ঐকমত্যে আসতে পারি।...নির্বাচনের ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে সংস্কার কাজটাকে যাতে আমরা সিগনিফিক্যান্টলি (উল্লেখযোগ্যভাবে) এগিয়ে নিতে পারি, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, তাঁদের দ্বিপক্ষীয় আলোচনা আবারও হবে। আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সব রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, এনসিপি যে বিচার, মৌলিক সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচনের কথা বলছে, তার অনেকগুলো এজেন্ডার সঙ্গেই গণসংহতি আন্দোলন একমত, কিছু জায়গায় দ্বিমতও রয়েছে। সেই বিষয়গুলো নিয়ে আজকে আলোচনা হয়েছে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ এবং নির্বাচনের আগে সংস্কার কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
নাহিদ আরও বলেন, ‘আমরা যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, রাষ্ট্র পুনর্গঠন-সংস্কার ও সংবিধান সংস্কার বা নতুন সংবিধানের কথা বলছি, এই আলোচনাগুলো গণসংহতি আন্দোলন জনপরিসরে দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে। এখন যে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের প্রত্যাশা আমরা করি, সেগুলো আসলে গত ১৬ বছরে এসব আলোচনা ও তৎপরতার ধারাবাহিকতায়।’
বৈঠকে অংশ নেওয়া এনসিপি নেতা আরিফুল ইসলাম আদীব প্রথম আলোকে বলেন, দুই দলের আগ্রহেই এনসিপি ও গণসংহতির মধ্যে আজকের বৈঠকটি হয়েছে।
গত রোববার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে গণসংহতি আন্দোলন। এরপরই অধিকতর সমঝোতা ও ঐক্য তৈরি করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি।