বিদায়বেলা। ভারত-পাকিস্তান চেকিং পয়েন্ট। ভারতীয় স্বামী, স্ত্রী পাকিস্তানি। সায়রা ও ফারহানের নয় মাসের সন্তান আজলান। শিশুটি জন্মসূত্রে ভারতীয়। কাশ্মীর ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার জেরে পাকিস্তানি পাসপোর্টধারীদের ছাড়তে হচ্ছে ভারতীয় ভূখণ্ড। ফলে স্বামী ও নয় মাসের সন্তানকে ছেড়ে নিজ দেশে ফিরতে হচ্ছে সায়রাকে।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভারত-পাকিস্তানের আত্তারি-ওয়াঘা সীমান্তের চেকিং পয়েন্টের ওই ঘটনা যেন সিনেমার দৃশ্যকে হার মানায়। সায়রা তখনো একহাতে স্বামী ফারহানের বাহু আঁকড়ে আছেন। আরেক হাতে শিশু আজলান। সবুজ পাসপোর্টধারী সায়রা চেকিং পয়েন্ট পার হতেই নিরাপত্তাকর্মীরা নীল পাসপোর্টের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন- ‘বাচ্চা যাবে না, ম্যাডাম।’ ছোট্ট এই বাক্যটিই নির্ধারণ করে দিল- মা ও সন্তানের আলাদা গন্তব্য।

২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর তলানিতে ঠেকেছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। হামলার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে সরাসরি দায়ী করা হচ্ছে।যদিও পাকিস্তান তা অস্বীকার করে আসছে। তারপরও পরস্পরকে লক্ষ্য করে নানা বিধিনিষেধ আরোপের পাশাপাশি নিয়মিত চলছে হুমকি-ধমকি। এমন পরিস্থিতিতে দেশ দুটির নাগরিকদের জাত, ধর্ম, বর্ণ কিংবা বয়স ছাপিয়ে পরিচয় হয়ে উঠেছে নীল আর সবুজ পাসপোর্ট। দুগ্ধপোষ্য আজলানকে ওই নীল পাসপোর্টের কারণেই যেন আটকে দেওয়া হলো সীমান্তে।

তিন বছর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমের পাকিস্তানের করাচির মেয়ে সায়রার সঙ্গে নয়াদিল্লির ফারহানের প্রেম হয়। এরপর বিয়ে। সায়রা চলে আসেন নয়াদিল্লিতে। ভালোই চলছিল সায়রা-ফারহানের সংসার। ঘর আলো করে আসে ফুটফুটে ছেলেশিশু। কিন্তু কাশ্মীর হামলার জেরে যেন মেঘ করেছে তাদের ভালোবাসার আকাশে। ইচ্ছে ও অধিকার দুইই আছে কিন্তু একসাথে থাকা হচ্ছে না দম্পতির। যার নির্মম শিকার অবুঝ শিশুটিও। সীমান্তের নিয়মের কাছে হার মেনে অশ্রুসিক্ত সায়রা গেলেন করাচির পথে। বাবার সাথে আজলানকে ধরতে হলো নয়াদিল্লির গাড়ি।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

চবির বিশেষ ভোজের টোকেনে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা ‘অতিথি’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বিভিন্ন আবাসিক হলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও বিশেষ ভোজের আয়োজন করা হয়েছে। এতে আবাসিকদের শিক্ষার্থী বলা হচ্ছে এবং অনাবাসিকদের অতিথি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া, আবাসিকদের জন্য টাকার পরিমাণ কম ধরলেও অনাবাসিকদের জন্য বেশি ধরা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ ফরহাদ হোসেন হলে উন্নত ভোজের টোকেন আবাসিকদের জন্য ১০০ টাকা ধরা হয়েছে। অপরদিকে, অতিথিদের জন্য ধরা হয়েছে ১৭০ টাকা; এই অতিথিরা হলেন হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থী। শামসুন নাহার হলে আবাসিকদের জন্য ৮০ টাকা, অনাবাসিকদের জন্য ১৭০ টাকা। মিল পদ্ধতি চালু থাকা আমানত হলে আবাসিকদের জন্য ফ্রি হলেও অনাবাসিকদের জন্য ৭০ টাকা। তবে সোহরাওয়ার্দী হলে আবাসিক-অনাবাসিক সবার জন্যই ১৫৫ টাকা ধরা হয়েছে। 

আরো পড়ুন:

এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিল শাবিপ্রবি প্রশাসন

চবিতে বিপ্লবী ছাত্র ঐক্যের আত্মপ্রকাশ

এদিকে, বিজয়-২৪ হলের প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে আবাসিক-অনাবাসিক সবার জন্য ৮০ টাকা উল্লেখ করলেও দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তিতে অনাবাসিকদের জন্য ১৭০ টাকা ধরা হয়েছে। এভাবে অন্যান্য হলগুলোতেও একই অবস্থার কথা জানা গেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী জারিফ মাহমুদ বলেন, “৫ আগস্টের ফিস্ট নিয়ে হলে হলে বিশেষ খাবারের আয়োজন করছে, সেখানে আবাসিক-অনাবাসিক আলাদা করেছে। আমার প্রশ্ন হলো, প্রশাসনদের ছাত্র বা সন্তান কি শুধু আবাসিকরা? আমরা যারা অনাবাসিক, তারা কি বিশ্ববিদ্যালয়ে উড়ে এসেছি?”

তিনি প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনারা আমাদের হলে সিট দিতে পারেননি, এটা আপনাদের ব্যর্থতা। এই আবাসিক-অনাবাসিক পরিচয় বন্ধ করুন। আয়োজন করলে সবার জন্য সমান করে আয়োজন করুন। আর সেটা না পারলে আয়োজন বন্ধ করুন।”

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈম শাহ ফেসবুকে লেখেন, “কোনো একটা বিশেষ দিন এলেই দেখা যায়, হল প্রশাসনগুলোর আবাসিক শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে দাঁড় করানোর ভণ্ডামি। ৫ তারিখে আয়োজনকে ঘিরে তারা আবার সেই অতিথি টার্ম সামনে নিয়ে আসছে। ফরহাদ হলে অনুষ্ঠান শেষে বিশেষ ভোজের আয়োজনের টোকেন আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০ টাকা এবং অতিথিদের জন্য ১৭০ টাকা। বাকি হলগুলোতে বোধহয় তাই করেছে। কিন্তু এই অতিথিগুলোও তো বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী।”

তিনি বলেন, “বাহির থেকে যে কয়েকজন শিক্ষার্থী আসবে, তাদের থেকে ৭০ টাকা করে বেশি না নিলে তো হল প্রশাসন দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে না। আর আপনাদের যদি সামর্থ্য নাই থাকে, কাউকেই খাওয়ায়েন না। কিন্তু ৫ আগস্টের দিনকে কেন্দ্র করে করা অনুষ্ঠানে প্রিভিলেজড-আনপ্রিভিলেজড বিষয়টা জিইয়ে রাখাটা নিতান্ত নোংরামি লাগছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এটা নিয়ে ভাবা উচিত।”

এ বিষয়ে শহিদ মো. ফরহাদ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, “এ সিদ্ধান্তটি শুধু ফরহাদ হলের জন্য নয়, অন্যান্য হলেও এ সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। মূলত উন্নত ভোজের আয়োজনটি আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য করা হয়েছে। তারপরেও কোনো অনাবাসিক শিক্ষার্থী বা কারো বন্ধুবান্ধব অংশ নিতে চাইলে পারবে। সেক্ষেত্রে তাদের জন্য টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ে সব হল প্রাধ্যক্ষের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ