কালবৈশাখী ঝড়ের পর আলোস্বল্পতায় স্থগিত ফেডারেশন কাপের ফাইনাল
Published: 22nd, April 2025 GMT
ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদার আসর ফেডারেশন কাপের ফাইনাল ম্যাচে সৃষ্টি হলো এক নজিরবিহীন ঘটনা। কালবৈশাখীর তাণ্ডবের পর এবার আলোর অভাবে অসমাপ্ত রইল শিরোপা লড়াই। ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে আবাহনী লিমিটেড ও বসুন্ধরা কিংসের মধ্যকার ফাইনাল ম্যাচে উত্তেজনা যেমন ছিল তুঙ্গে। তেমনি বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রকৃতি ও অব্যবস্থাপনা।
ম্যাচের শুরুটা ছিল একদম ঠিকঠাক। রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় জমে উঠেছিল লড়াই। প্রথমার্ধে দুই দলই একটি করে গোল করে সমতায় ছিল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে মাত্র দুই মিনিটের মাথায় হঠাৎ করেই আকাশ কালো করে আসে। শুরু হয় তীব্র কালবৈশাখী ঝড়। সঙ্গে বজ্রপাতের শঙ্কা। খেলার দায়িত্বে থাকা রেফারি সায়মন হাসান সানি খেলা তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেন। ঝড়ের তীব্রতায় উড়ে যায় দুই দলের ডাগআউট টেন্ট, সাংবাদিকদের অস্থায়ী প্রেসবক্সও। গ্যালারিতে কোনো ছাউনি না থাকায় দর্শকরাও নিরাপত্তার খোঁজে মাঠে নেমে আসেন।
প্রায় এক ঘণ্টা পর খেলা আবার শুরু হলেও মাঠ তখনও কাদা-পানিতে একাকার। আধুনিক ড্রেনেজ সিস্টেম কিংবা দক্ষ গ্রাউন্ড স্টাফের অভাবে পানি সরাতে মাঠে নামেন খেলোয়াড়, কোচ, এমনকি কর্মকর্তারাও। ডাগআউট না থাকায় খেলোয়াড়দের বসতে হয় সাধারণ প্লাস্টিক চেয়ারে। মাঠের এক পাশে জমে থাকা পানিতে আক্রমণ শানাতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ে আবাহনী। আর অপর পাশে অপেক্ষাকৃত শুষ্ক স্থানে বারবার আক্রমণে উঠে আসে কিংস। তবে সেই কাদামাটিতে সবচেয়ে বড় সুযোগটি নষ্ট করেন কিংসের সোহেল রানা।
আরো পড়ুন:
হামজা ও শমিতের পর লাল-সবুজের জার্সি পরতে যাচ্ছেন সান্ডারল্যান্ডের মিচেল
লাল-সবুজের জার্সিতে খেলবেন সামিত, জানিয়ে দিলেন আনুষ্ঠানিক সম্মতি
নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে ১-১ গোলে সমতা থাকায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। কিন্তু এখানেই বাধে বিপত্তি। স্টেডিয়ামে নেই কোনো ফ্লাডলাইট। ফলে সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকারে ঢেকে যায় মাঠ। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধ শেষ হলেও আলোকস্বল্পতার কারণে দ্বিতীয়ার্ধ আর শুরু করতে পারেননি রেফারি। ম্যাচ স্থগিত ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করবে বাফুফের লিগ কমিটি।
এই ফাইনালের নাটকীয়তায় শেষ রঙ মেশান কিংসের মিডফিল্ডার ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের একেবারে শেষ দিকে আবাহনীর এক খেলোয়াড়কে পেছন থেকে লাথি মেরে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন তিনি। এতে দশ জনের দলে পরিণত হয় কিংস। যার প্রেক্ষিতে আবাহনী আপত্তি তোলে খেলা স্থগিতের সিদ্ধান্তে।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ঘরোয়া ফুটবলে আবারও প্রশ্ন উঠে গেল— আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা সত্ত্বেও কেন দিনের আলোয় ফাইনাল সম্পন্নের যথাযথ প্রস্তুতি ছিল না? কেন আজও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত দেশের মাঠগুলো?
শিরোপার নিষ্পত্তি এখন সময়ের অপেক্ষা। তবে এই ফাইনাল ম্যাচ নতুন করে আলোচনা শুরু করে দিয়েছে ঘরোয়া ফুটবলের কাঠামো ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে। যা দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলার শিকার। আর দর্শকদের মনে প্রশ্ন—এভাবে কি একটানা টুর্নামেন্ট চালিয়ে যাওয়া সম্ভব?
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল ফ ইন ল
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
ইরানের পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের বাণিজ্যে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে অন্তত ছয়টি ভারতীয় কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। একই পদক্ষেপের আওতায় বিশ্বজুড়ে মোট ২০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ইরানের পেট্রোলিয়াম পণ্য কেনাবেচা ও বিপণনের জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ লেনদেনে’ ইচ্ছাকৃতভাবে অংশ নিয়েছে। ফলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ইরানবিষয়ক নিষেধাজ্ঞা ভেঙেছে।
নিষেধাজ্ঞার শিকার কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারতের কিছু বড় পেট্রোকেমিক্যাল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো অ্যালকেমিক্যাল সলিউশনস, গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যালস, জুপিটার ডাই কেম, রমনিকলাল এস গোসালিয়া অ্যান্ড কোম্পানি, পার্সিসটেন্ট পেট্রোকেম ও কাঞ্চন পলিমার্স।
নিষিদ্ধ কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারতের কিছু বড় পেট্রোকেমিক্যাল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় অভিযোগ উঠেছে অ্যালকেমিক্যাল সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ৮ কোটি ৪০ লাখ ডলারেরও বেশি মূল্যের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানির সঙ্গে জড়িত ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বড় অভিযোগ উঠেছে অ্যালকেমিক্যাল সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ৮ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানির সঙ্গে জড়িত ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যালস লিমিটেডের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে ৫ কোটি ১০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল, বিশেষ করে মিথানল কিনেছে।
জুপিটার ডাই কেম প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধেও এ সময়ে টলুইনসহ ৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি পণ্য আমদানির অভিযোগ রয়েছে।
রমনিকলাল এস গোসালিয়া অ্যান্ড কোম্পানি মিথানল ও টলুইনসহ ২ কোটি ২০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য কেনার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ কিংবা যেসব সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে আছে, তা জব্দ করা হবে। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও কোম্পানিগুলোর বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যুক্ত হওয়া নিষিদ্ধ হবে। নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর যেকোনো সহযোগী প্রতিষ্ঠান—যেগুলোর অন্তত ৫০ শতাংশ মালিকানা তাদের হাতে, তা–ও একইভাবে নিষিদ্ধ বলে বিবেচিত হবে।পার্সিসটেন্ট পেট্রোকেম প্রাইভেট লিমিটেড ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য, বিশেষ করে মিথানল আমদানি করেছে বলে জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া কাঞ্চন পলিমার্স নামে একটি কোম্পানি ১৩ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি পলিথিন পণ্য কিনেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিষেধাজ্ঞার ফলে এখন এসব প্রতিষ্ঠানের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ কিংবা যেসব সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে আছে, তা জব্দ করা হবে। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও কোম্পানিগুলোর বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যুক্ত হওয়া নিষিদ্ধ হবে। নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর যেকোনো সহযোগী প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর অন্তত ৫০ শতাংশ মালিকানা তাদের হাতে, তা–ও একইভাবে নিষিদ্ধ বলে বিবেচিত হবে।
এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ’ নীতির অংশ। এর মাধ্যমে ইরানের কথিত ‘ছায়া নৌবহর’ ও মধ্যস্বত্বভোগী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যারা বিশ্বব্যাপী ইরানি তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য পরিবহনে সহায়তা করে।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’১৫ ঘণ্টা আগেমার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, এসব পণ্য রপ্তানি থেকে ইরান যে রাজস্ব পায়, তা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা ছড়ানো ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সহায়তায় ব্যয় করা হয়।
ইরানের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকলেও ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আগের নিষেধাজ্ঞা চালু হওয়ার পর ভারত ইরানি তেল আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্পেশালি ডেজিগনেটেড ন্যাশনালস (এসডিএন) তালিকা থেকে নিজেদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, এ নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য শাস্তি দেওয়া নয়; বরং আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা।
ভারতের পাশাপাশি তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন ও ইন্দোনেশিয়ার কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এ বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ইরানের তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল–বাণিজ্যে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
উল্লেখ্য, ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বাইরেও দেশটি থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল তিনি এ ঘোষণা দেন।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে এবার ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিলেন ট্রাম্প২২ ঘণ্টা আগেআগামীকাল ১ আগস্ট থেকে ভারতের পণ্যে নতুন এ পাল্টা শুল্কনীতি কার্যকর হবে। পাশাপাশি রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র ও জ্বালানি কেনার জন্য ভারতকে ‘দণ্ড’ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। তবে কী ধরনের দণ্ড দেওয়া হবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি।