কুয়েটে উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে অব্যাহতির পদক্ষেপ ন্যায়বিচারের পরাজয়: শিক্ষক সমিতি
Published: 24th, April 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়ার পদক্ষেপকে ন্যায়বিচারের পরাজয় আখ্যা দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি। একই সঙ্গে তারা বলেছে, আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংঘর্ষের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জন করা হবে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কুয়েট শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সভা শেষে সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চেয়েছিলাম। তবে বর্তমানে যারা রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের জন্য আন্দোলন করে আসছিল, তাদেরই আজ অন্ধকার রাজনীতির গ্রাসে বন্দী দেখতে পাচ্ছি। এ কারণেই গত ১৮ ফেব্রুয়ারির সংকট নিরসনে শিক্ষকদের কোনো চেষ্টাই সফল হয়নি। শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়সহ শিক্ষা উপদেষ্টার পাঠানো প্রতিনিধিদলও এ ক্ষেত্রে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়াই চাপের মুখে উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্তে মূলত ন্যায়বিচারের পরাজয় হয়েছে।’
ফারুক হোসেন বলেন, গৌরবান্বিত জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের দীর্ঘ আট মাস পরও যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের কার্যক্রম চলতে থাকে, তবে তা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সমগ্র বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ভেঙে ফেলতে পারে। তবে কুয়েটের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষকেরা সর্বদা সচেষ্ট থাকবেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে ফারুক হোসেন বলেন, ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের ঘটনায় সুষ্ঠ তদন্ত শেষে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জনের আগের সিদ্ধান্ত বহাল আছে।
উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীরা প্রায় ৫৮ ঘণ্টা পর গতকাল বুধবার দিবাগত রাত একটার দিকে কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান তাঁদের জুস পান করিয়ে অনশন ভাঙান।
আরও পড়ুনকুয়েটে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ, বিকেলে বিজয় মিছিল৪ ঘণ্টা আগেশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, কুয়েটের উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান। অবশ্য সকালে তিনি তাঁদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার প্রক্রিয়া চলমান বলে জানিয়েছিলেন।
এর আগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত সংকট নিরসন এবং শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঅনশন ভাঙলেন কুয়েটের শিক্ষার্থীরা, ক্যাম্পাসে উল্লাস১১ ঘণ্টা আগে১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ওই দিন দুপুরে সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন।
গতকাল দুপুরে সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এ ছাড়া সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গতকাল বিকেল থেকে ছাত্রদের ছয়টি ও ছাত্রীদের একটি হল আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে। সভায় আগামী ৪ মে থেকে পূর্বনির্ধারিত ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের দিন অমোচনীয় কালি সরবরাহ না হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে: ছাত্রদল
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে অমোচনীয় কালি সরবরাহ না করলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতারা। এ ছাড়া এমফিল কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্রদলকে ভোট প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর আচরণবিধিবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় ছাত্রদলের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘নির্বাচনে যদি কোনো ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা একচুল ছাড় দেব না। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, যদি কোনো ধরনের অনিয়ম হয়— কোনো ছাড় হবে না। নির্বাচনের সময় অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে হবে। যদি নির্বাচন কমিশন অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে।’
ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ‘ম্যানুয়ালি’ ভোট গণনার দাবি জানিয়ে শামসুল আরেফিন বলেন, ‘কত ব্যালট ছাপানো হলো, কত ভোট গণনা হলো, কত ব্যালট নষ্ট হলো—এসব তথ্য স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে। কারণ, আমরা ডাকসুতে ব্যালট কেলেঙ্কারির অভিযোগ সম্পর্কে জানি।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ বিধিমালায় এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ছাত্রদলকে ‘মাইনাস’ করার একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জকসু গঠন ও পরিচালনা বিধিমালায় বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর নিয়মিত শিক্ষার্থী ভোটার কিংবা প্রার্থী ছাড়া কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অন্যদিকে এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থীর যোগ্যতা না দিয়ে আমাদের মাইনাস করা ছিল মাস্টারপ্ল্যান—আর সেই মাস্টারপ্ল্যান সফল হয়েছে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, প্রক্টর, সিন্ডিকেটের সদস্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর নির্বাচন কমিশনার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।