বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁর গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় পৌঁছেছেন।
যুক্তরাজ্যে উন্নত চিকিৎসা শেষে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দেশে ফেরেন খালেদা জিয়া। তাঁর সঙ্গে দেশে ফেরেন দুই পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শামিলা রহমান।
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়া সরাসরি তাঁর গুলশান-২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের বাসভবন ফিরোজায় যান। বিমানবন্দর থেকে ফিরোজায় যাওয়ার সময় পথে পথে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান দলের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী।
খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে সকাল থেকে ফিরোজাসংলগ্ন এলাকায় ভিড় করেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। তাঁদের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা। এ ছাড়া তাঁরা নানা ব্যানার-ফেস্টুন বহন করেন। তাঁরা স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে তোলেন পুরো এলাকা।
ফিরোজা ও এর আশপাশের এলাকায় আগেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ফিরোজার প্রবেশপথ গুলশান-২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের সামনে ব্যারিকেড দেওয়া হয়। সড়কটির দুই পাশে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ফিরোজার সামনে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়; পাশাপাশি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ‘চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)’–এর সদস্যরা।
খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে তাঁর গুলশানে বাসভবন ‘ফিরোজা’ ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তিন দিনের ছুটিতে কক্সবাজারে কত পর্যটক গেলেন
মে দিবস উপলক্ষে টানা তিন দিনের ছুটিতে কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণে এসেছেন অন্তত পাঁচ লাখ পর্যটক। এর মধ্যে ৭০০টির বেশি বাসে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চার হাজারের বেশি মানুষ শিক্ষাসফর ও পিকনিকে এসেছেন। এর বাইরে বাসসহ আরও অন্তত ছয় যানবাহনে আসেন লাখো মানুষ। অতিরিক্ত যানবাহনের ভিড়ে শহরের সৈকত সড়ক, কলাতলী হাঙর ভাস্কর্য মোড় ও বাইপাস সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ট্রাফিক পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ১ মে থেকে আজ ৩ মে পর্যন্ত টানা তিন দিনের ছুটিতে কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণে এসেছেন অন্তত পাঁচ লাখ পর্যটক। এর মধ্যে ট্রাফিক পুলিশের অনুমতি নিয়ে শহরে ঢুকেছে বিভিন্ন জেলা থেকে পিকনিক ও শিক্ষাসফরে আসা ৬০০টির বেশি বাস। আরও শতাধিক বাস শহরের বাইরে অবস্থান করছে। অধিকাংশ বাস বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্লাব-সংগঠন, ট্যুর অপারেটর ও বেসরকারি শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসা।
আজ শনিবার দুপুরে সৈকতে সুগন্ধা পয়েন্টে নেমে দেখা গেছে অন্তত ২০ হাজার মানুষ লোনা জলে নেমে গা ভাসাচ্ছেন। দক্ষিণ দিকের কলাতলী এবং উত্তর দিকের লাবণী পয়েন্টের চার কিলোমিটারে রয়েছেন আরও ২০-৩০ হাজার। প্রচণ্ড গরমে কমবেশি সবাই সমুদ্রে নেমেছেন।
গোসলে নেমে নিখোঁজ পর্যটকদের উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সি-সেফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার সিফাত সাইফুল্লাহ বলেন, বৈরী পরিবেশে সাগর প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে। তার ওপর প্রচণ্ড গরম পড়ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটকেরা ক্লান্তি দূর করতে সমুদ্রে নামছেন। ঢেউয়ের ধাক্কায় ভেসে যাওয়া পর্যটকদের উদ্ধার তৎপরতায় ব্যস্ত রয়েছেন ২৭ জন লাইফগার্ড। কয়েকটি উঁচু চৌকিতে বসে পর্যটকদের নজরদারিতে রাখেন লাইফ গার্ড সদস্যরা।
কক্সবাজার কলাতলী হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, ১ মে থেকে টানা তিন দিনের ছুটিতে সৈকত ভ্রমণে এসেছেন পাঁচ লাখের বেশি পর্যটক। সমুদ্রস্নানের পাশাপাশি অধিকাংশ পর্যটক কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, পাহাড়ি ঝরনার হিমছড়ি, পাথুরে সৈকত ইনানী ও পাটোয়ারটেক, রামু বৌদ্ধপল্লি, ডুলাহাজারা সাফারি পার্কসহ বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্র দেখতে যাচ্ছেন। ছুটি শেষ হওয়ায় আজ শনিবার বিকেল থেকে অনেকে গন্তব্যে ফিরতে শুরু করেছেন।
ট্যুর অপারেটর ও হোটেল মালিকেরা জানান, অন্যান্যবারের তুলনায় এবার পিকনিক ও শিক্ষাসফরে আসা বাসের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ছয় শতাধিক পিকনিকের বাস রাখা হয় শহরের বাইপাস সড়কের দুই পাশে, উত্তরণ আবাসিক এলাকার সড়কে, আশপাশের আরও তিনটি খোলা জায়গায়। শহরের অভ্যন্তরে পর্যটন করপোরেশনের বিশাল মাঠেও শতাধিক বাস রাখা হয়। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে বাসের ধারণক্ষমতা ১২০টি।
ঢাকার তেজগাঁও এলাকা থেকে ১ মে বিকেলে পিকনিকে আসেন একটি শ্রমিক সংগঠনের ৫০-৬০ জন। বাইপাস সড়কে গাড়ি রেখে সবাই সৈকতে নেমে পড়েন। তাঁদের একজন নজরুল ইসলাম (৪৫) বলেন, কমবেশি সবাই বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিক। সারা দিন কাজকর্মে ব্যস্ত থাকতে হয় তাঁদের। পয়লা মে উপলক্ষে তিন দিনের ছুটি কাটাতে সবাই কক্সবাজার ছুটে আসেন। আজ বিকেলে সবার গন্তব্যে ফেরার কথা।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট ক্লাব ও ট্যুর অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, কম খরচে সৈকত ভ্রমণে বেশির ভাগ মানুষ এখন ট্যুর অপারেটরের সহযোগিতা নিচ্ছেন। তাতে নিরাপত্তাও নিশ্চিত হয়। অল্প সময়ে বিনোদনকেন্দ্রগুলো ঘুরে আসার সুযোগ পান। তবে বঙ্গোপসাগরের মধ্যের প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় পর্যটকের ভ্রমণ বন্ধ রয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় সাগরদ্বীপ মহেশখালী ভ্রমণেও পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।