বেহাল ৫ কিলোমিটার সড়ক যান চলাচলে ঝুঁকি
Published: 8th, May 2025 GMT
হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার সংযোগ সড়ক পানিউমদা-শমশেরনগর সড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। ব্যস্ত এ সড়কে প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। অবিলম্বে সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা বাজার থেকে মৌলভীবাজার জেলার শমশেরনগর পর্যন্ত সড়কে গত ১০ বছরেরও কোনো সংস্কারকাজ হয়নি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের লোকজন নিয়মিত মাপজোক করে সংস্কারের আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এ সড়কে চলাচলে কষ্টের শেষ থাকে না।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কে ছোট-বড় খানাখন্দে ভরপুর। কয়েকটি গর্ত বেশ গভীর। যার মধ্যে দুই ও তিন চাকার যান উল্টে যেতে পারে। চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় চালক ও যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, এ সড়কে চলাচল করতে তাদের কষ্টের পাশাপাশি সবসময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি তাড়া করে বেড়ায়।
নবীগঞ্জ উপজেলা সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনু আহমদের ভাষ্য, গত এক মাসে মৌলভীবাজার-শমশেরনগর টু নবীগঞ্জ পানিউমদা সড়কে ২০টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে অন্তত ৫০ জন আহত হন। বিশেষ করে সড়কের টঙ্গিটিলা, ভেড়ামারা, মোকামবাজার, পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকা, শমশেরনগর লেবু বাগান এলাকায় সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। বর্ষা মৌসুমে খানাখন্দে পানি জমলে গাড়ি চালানো সম্ভব হয় না।
পানিউমদা গ্রামের ব্যবসায়ী অনু আহমদ জানান, এই সড়কের গুরুত্ব শুধু স্থানীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়। এটি হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার মানুষের যোগাযোগের অন্যতম সড়ক। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ সব শ্রেণির মানুষের যাতায়াত এই পথেই। অথচ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত।
স্থানীয় এক বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, এলাকাবাসীর চলাচলের এটিই একমাত্র সড়ক। প্রতিদিন এ সড়কে চলাচল করতে গিয়ে তাদের কষ্টের শেষ থাকে না। ক’দিন পরপর মাপজোক হয়; কিন্তু সংস্কার আর হয় না।
অটোরিকশা চালক কুদ্দুছ মিয়া জানান, রাস্তায় বড় বড় গর্ত হওয়ায় যাত্রী সংখ্যা কমে গেছে। এতে তাদের আয়-রোজগারও কমে গেছে।
পানিউমদা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইজাজুর রহমান বলেন, বেহাল সড়কটি এলাকাবাসীর দুঃখকষ্টের অন্যতম কারণ। তিনি মাসিক উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় সড়কটি সংস্কারের কথা অসংখ্যবার বলেছেন। বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
নবীগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক শমশ রনগর এ সড়ক র সড়ক
এছাড়াও পড়ুন:
মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধ সড়ক যেন মরণফাঁদ
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্ত। এসব গর্তের পাশ দিয়ে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন পথচারী ও যানবাহন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের দাবি জানানো হলেও সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধের দুই পাশে জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও সড়কের পিচ উঠে গেছে, কোথাও আবার গর্তের গভীরতা এত বেশি যে, ছোট যানবাহন উল্টে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে দুর্ঘটনায় কলেজছাত্রের মৃত্যু, ট্রাকে আগুন
সিলেটে বাস-প্রাইভেটকার সংঘর্ষ, বাবা-মেয়ে নিহত
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও, এর ওপরে নির্মিত পাকা সড়কটি সওজ বিভাগের আওতাধীন। এ সড়কটি ব্যবহার করে মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ঢাকা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর যানবাহন চলাচল করে।
স্থানীয় অটোরিকশা চালক রোবেল হোসেন বলেন, “নির্মাণের দুই-তিন বছর যেতে না যেতেই সড়কের দুই পাশে অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রতিদিন গাড়ি চালাতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। একটু অসাবধান হলেই ঘটবে দুর্ঘটনা।”
মোটরসাইকেল চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, “দিনে কোনোভাবে পার হওয়া যায়, কিন্তু রাতের পরিস্থিতি থাকে ভয়ঙ্কর। কারণ, অনেক সময় দূর থেকে গর্ত দেখা যায় না। এই সড়কে খুব ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।”
পিকআপ ভ্যানের চালক আব্দুর রহমান বলেন, “কয়েক বছর না যেতেই রাস্তা গর্তে ভরে গেছে। রাতের বেলায় গর্তগুলো বোঝা যায় না, তাই সব সময় আতঙ্ক নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।”
কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কটি এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। এখন গর্তের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত মেরামতের জন্য আমরা একাধিকবার জানিয়েছি।”
মতলব উত্তর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বোরহান উদ্দিন ডালিম বলেন, “এই বেড়িবাঁধ শুধু মতলব নয়, পুরো অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের প্রধান সড়ক। তাই সওজ বিভাগের উদাসীনতা জনজীবনে ঝুঁকি তৈরি করছে। বর্ষার আগেই এই সড়কটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার জরুরি।”
চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “অতিবৃষ্টির কারণে গর্ত তৈরি হয়েছে। আমরা সড়কটি মেরামতের ব্যবস্থা নিয়েছি।”
উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, মতলব ব্রিজ থেকে বেড়িবাঁধের পূর্ব অংশে সংস্কার কাজের জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। পশ্চিম অংশ এখনও ঠিকাদারের দায়িত্বে আছে, তাদেরকেও মেরামতের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (চঃ দাঃ) সেলিম শাহেদ বলেন, “বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও এর ওপরে থাকা পাকা সড়ক সওজ বিভাগের দায়িত্বে। বেড়িবাঁধের যদি কোথাও ক্ষতি হয়, আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই; সড়ক সংস্কার কাজ সওজ বিভাগকেই করতে হয়।”
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত দেখা গেছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।”
ঢাকা/অমরেশ/মাসুদ