বিএনপি নেতার বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন লিটনের সাবেক পিএ টিটু
Published: 9th, May 2025 GMT
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটু নওগাঁর বদলগাছিতে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার বাড়িতে লুকিয়েছিলেন।
শুক্রবার (৯ মে) ভোররাত সাড়ে ৫টার দিকে ওই বাড়ি থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বদলগাছি উপজেলার চাকরাইল চৌধুরীপাড়া গ্রামে ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাগর চৌধুরীর বাসায় পাওয়া গেছে টিটুকে। এ সময় টিটুকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাগর চৌধুরীকেও নেওয়া হয়েছে পুলিশ হেফাজতে। তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গ্রেপ্তার আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটু মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার বাড়ি রাজশাহী নগরের রানীবাজার চিনিপট্টি মহল্লায়। বাবার নাম আব্দুল ওয়াদুদ খান। টিটু তিনি রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) সেকশন অফিসার হলেও দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ছুটি ছাড়াই মেয়র লিটনের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং এই সময় দুই প্রতিষ্ঠান থেকেই বেতন গ্রহণ করেছেন। টিটুর বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট দুই হাতে পিস্তল নিয়ে ছাত্র ও জনতার ওপর গুলি চালিয়ে ভাইরাল হওয়া সন্ত্রাসী জহিরুল হক রুবেল এই টিটুর বন্ধু। রুবেলকে নিয়ে কিশোর গ্যাং লালন, জমি দখল ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে টিটুর বিরুদ্ধে। এসব কারণে লিটন মেয়র থাকাকালেই তাকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন। আওয়ামী সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন টিটু।
স্থানীয়রা জানান, টিটুকে আশ্রয় দেওয়া বিএনপি নেতা সাগর চৌধুরী নওগাঁ জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি। সাগর চৌধুরী সাবেক ডেপুটি স্পিকার আক্তার হামিদ সিদ্দিকীর ছেলে বিএনপি নেতা আরেফিন সিদ্দিকী জনির অনুসারী। জনি মহাদেবপুর-বদলগাছি আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী।
শুক্রবার সকালে স্থানীয় সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ হেফাজতে থাকা সাগর চৌধুরী। তিনি জানান, টিটু হলেন তার প্রয়াত ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়। আত্মীয়তার খাতিরে বুধবার টিটু তার বাড়িতে আসেন, তাই তিনি ফিরিয়ে দেননি। তবে টিটুর উপস্থিতির খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা পুলিশে খবর দেন।
বদলগাছি থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, “সাগর চৌধুরী ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, তবে শুনলাম তিনি আগে থেকেই দল থেকে বহিষ্কৃত। তার বাড়ি থেকেই টিটুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। টিটুকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। সাগরও এখনো পুলিশ হেফাজতে আছেন।’’
নওগাঁর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ার বলেন, ‘‘সাগর চৌধুরী কেন টিটুকে আশ্রয় দিয়েছিলেন তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ জানান, গত ৫ আগস্ট রাজশাহীতে চলমান আন্দোলনের সময় নিহত সাকিব আনজুম হত্যা মামলার আসামি টিটু। এছাড়া ছাত্র ও জনতার ওপর হামলার একটি মামলারও এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। বদলগাছি থানা তাকে হস্তান্তর করলে ওই দুই মামলায়ও টিটুকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
ঢাকা/কেয়া/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বদলগ ছ ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
নওগাঁ-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিতে মানববন্ধন
নওগাঁ-২ (পত্নীতলা-ধামইরহাট) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পৌরসভার জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ কর্মসূচির আয়োজন করেন মনোনয়নবঞ্চিত এক প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকেরা।
নওগাঁ-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জোহা খানের নাম ঘোষণা করেছে দলটি। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী।
খাজা নাজিবুল্লাহর সমর্থকেরা বেলা ১১টার দিকে নজিপুর জিরো পয়েন্ট এলাকায় নওগাঁ-নজিপুর সড়কের একপাশে দাঁড়িয়ে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধন করেন। এ কর্মসূচিতে পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলার ১৯টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা থেকে আসা নেতা–কর্মীরা অংশ নেন। তাঁদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও এতে অংশ নেন। মানববন্ধনের আগে জিরো পয়েন্ট এলাকায় কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে নওগাঁ-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিতর্কিত ব্যক্তি সামসুজ্জোহা খানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি মাঠে ছিলেন না। আওয়ামী লীগের সময়ে হরতালসহ বিভিন্ন আন্দোলনে খাজা নাজিবুল্লাহর নেতৃত্বে তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা মাঠে ছিলেন। তাঁরা নওগাঁ-২ আসনে মনোনয়নের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে খাজা নাজিবুল্লাহকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার অনুরোধ জানান।
নজিপুরের সাবেক পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন বলেন, নাজিবুল্লাহ ত্যাগী, পরীক্ষিত ও বারবার কারা নির্যাতিত নেতা। তাঁর নেতৃত্বেই পত্নীতলা ও ধামইরহাট বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। অথচ তৃণমূলের মতামত অগ্রাহ্য করে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে। খাজা নাজিবুল্লাহকে প্রার্থী ঘোষণা না করা হলে তৃণমূল বিএনপি বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে।
ধামইরহাট উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক রুহুল আমিন বলেন, ২০১৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগবিরোধী সব আন্দোলনে যাঁরা মাঠে সক্রিয় ছিলেন, তাঁরা সবাই খাজা নাজিবুল্লাহর পক্ষে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন। তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হোক—এটি শুধু বিএনপির নেতা–কর্মীদের চাওয়া নয়, দুই উপজেলার সব মানুষের চাওয়া। তাই এখানে মনোনয়নের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে আহ্বান জানাতে এই কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া সামসুজ্জোহা খান বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। যাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করা হবে।’
মনোনয়নবঞ্চিত খাজা নাজিবুল্লাহ বলেন, ‘সব আন্দোলন–সংগ্রামে মাঠে সক্রিয় ছিলাম। দুর্দিনে তৃণমূল নেতাদের পাশে ছিলাম, আছি ও থাকব। আমরা কেউ দলের ঊর্ধ্বে নই। দলের জন্য কাজ করছি। পুনর্বিবেচনা হলে মনোনয়ন পেতে পারি। দলই সবার আগে।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নজিপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির সদস্য আনোয়ার হোসেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য মিজানুর রহমান, ধামইরহাট উপজেলা বিএনপির সদস্য রেজাউল ইসলাম, ধামইরহাট মহিলা দলের সহসভাপতি নাহিদা সুলতানা, জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল ধামইরহাট শাখার আহ্বায়ক রকিবুল হাসান, পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য আবু তাহের প্রমুখ।