দেশের উষ্ণতম মাস এপ্রিল। কিন্তু এবার ততটা উষ্ণ ছিল না এ মাস। চলতি মে মাসের প্রথম সপ্তাহেও তাপমাত্রা মোটামুটি সহনীয় ছিল। কিন্তু গত বুধবার থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। আজ শুক্রবার দেশের ৪৫ জেলায় তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আজ দেশের যত অংশজুড়ে তাপের বিস্তার, তা চলতি বছরে দেখা যায়নি। আজ রাজধানীতেও প্রচণ্ড গরম পড়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো.

হাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, এপ্রিল মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ ছিল। কিন্তু তাপপ্রবাহ এত বিস্তৃত ছিল না। গত বুধবার থেকে দেশের বিস্তৃত এলাকায় তাপপ্রবাহ শুরু হয়। আজ দেশের ৪৫ জেলায় তাপপ্রবাহ চলছে। এটি চলবে আগামীকাল ও পরশু পর্যন্ত। আগামী রোববার থেকে সারদেশের তাপমাত্রা কমে আসবে।

তিনি আরও বলেন, এখন দেশের অধিকাংশ এলাকায় ৩৬ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রা। আগামী দুইদিন পর ধীরে ধীরে কমে আসবে তাপমাত্রা। এরপর কিছু কিছু এলাকায় বৃষ্টি হয়ে তাপমাত্রা সহনীয় হয়ে আসবে।

আজ শুক্রবার সকালে আবহাওয়ার সবশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে, দেশের রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারি, কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, বরিশাল এবং পটুয়াখালীর ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলা, খুলনা বিভাগের ১০ জেলা ও রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা মাঝারি তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা ৪২-এর বেশি হলে তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে গণ্য হয়।

চলতি বছর দেশের তীব্র তাপপ্রবাহের রেকর্ড কম। এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাপপ্রবাহ দেখা দেয়। তবে এপ্রিল মাসে মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হয়েছে। তাতে কমেছে তাপ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, এ বছরের এপ্রিল মাসে গড় তাপমাত্রা গত বছরের (২০২৪) চেয়ে অন্তত ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম ছিল।

আজ শুক্রবার অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপামাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

আজ ঢাকার বাতাস পশ্চিম বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হবে। সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৭৮ শতাংশ। 

আজ ঢাকায় সূর্যান্ত সন্ধ্যা ৬টা ৩১ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যোদয় হবে ভোর ৫টা ১৯ মিনিটে। 

বুলেটিনের সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

আজ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা লালমনিরহাটের ডিমলায়, ২২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আজ ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি বছরে এটি রাজধানীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে ২৮ মার্চ রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স লস য় স এল ক য় দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত শাহবাগ

স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে স্লোগানে স্লোগানে আহ্বান জানাচ্ছে শাহবাগ মোড় অবরোধ করা ছাত্র-জনতা। 

শুক্রবার (৯ মে) বিকেল থেকে তারা সেখানে অবস্থান নেন।

শাহবাগ মোড় অবরোধ করা ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে। তারা বলছেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচি চলতে থাকবে।’

‘ব্যান করো ব্যান করো, আওয়ামী লীগ ব্যান করো’, ‘দিল্লি না, ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘গোলামি না আজাদি, আজাদি আজাদি,’ ‘নাহিদ, আখতার আসছে, রাজপথ কাঁপছে’, ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা, ভেঙে দাও ঘুরিয়ে দাও’, ‘২৪ বাংলায়, আওয়ামী লীগের ঠাঁই নাই’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হচ্ছে।

এর আগে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত শাহবাগ অবরোধের ঘোষণা দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। বিকেল সাড়ে ৪টায় তিনি এ ঘোষণা দেন। এরপর পৌনে ৫টার আগেই শাহবাগ মোড় অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার পাশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে অবস্থান গ্রহণ করেন হাসনাত আব্দুল্লাহসহ এনসিপির নেতকর্মীরা। এই দাবিতে সেখানে সারা রাত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হয়। আজ বাদ জুমা সেখানে সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। ওই সমাবেশ থেকে শাহবাগ অবরোধের ডাক দেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জাতীয় নাগরিক পার্টি, জামায়াত-শিবির, হেফাজতে ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ ছাত্র-জনতা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিতে শুরু করেন। তাদের কণ্ঠে ছিল আওয়ামী লীগবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর গণমাধ্যমকে বলেন, “আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে। ঘটনাস্থলে পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।”

এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের পাশে সমাবেশে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আমরা এখন থেকে রাস্তা ব্লক করব। আমরা এখান থেকে গিয়ে শাহবাগ অবরোধ করব। যতক্ষণ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি না হবে, ততক্ষণ আমরা শাহবাগ ছাড়ব না।”

এদিকে, সমাবেশ চলার মধ্যেই এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানিয়ে একটি বিবৃতি দেওয়া হয় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে। সেখানে বলা হয়, “সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের পক্ষ থেকে স্বৈরশাসন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, তা সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। এ ব্যাপারে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ইতোমধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেছে, তাদের সাথে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন সরকার বিবেচনায় রাখছে।”

এ বিষয়ে সবাইকে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার ‘জনদাবির’ প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রচলিত আইনের অধীনে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে। চলমান তদন্তে সহযোগিতা করার পরিবর্তে, আওয়ামী লীগ দেশের ‘স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করার জন্য স্পষ্টতই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে’।

ঢাকা/সুকান্ত/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ