রাজধানীতে এক লাখ গ্যাস বেলুন উড়িয়ে রাজনৈতিক বার্তা ছড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছিল-এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ২৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

রবিবার (৯ নভেম্বর) ডিএমপির মিডিয়া শাখা থেকে এই তথ্য জানানো হয়।

আরো পড়ুন:

সংস্কারের মূল লক্ষ্য প্রশাসনিক নয়, নৈতিক: প্রধান বিচারপতি

‘জামায়াতের রাজনীতি শুরু হয় জিয়াউর রহমানের নীতির কারণে’

পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ঝটিকা মিছিল, উসকানিমূলক স্লোগান এবং বেলুন উড়িয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা করছিল। তারা আগামী ১০–১২ নভেম্বর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা ও এর আশপাশে গ্যাস বেলুন উড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেছেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা রাজনৈতিক প্রতিরোধ ও প্রতীকী প্রতিবাদ দেখানোর জন্য এক লাখ বেলুনের মধ্যে ‘নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের স্লোগান’ ও দলীয় রঙের পতাকা যুক্ত করার পরিকল্পনা করেছিল।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন-নওপাড়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি রূপচান বেপারী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ও গুলবাগ ১২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবরার খান তাহমিদ ওরফে তাহমিদ আশরাফ (২২), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রায়হান খান আজাদ (২৭), শের-ই-বাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ এ বি এম নুরুল হক ওরফে ছোটন চৌধুরী (৬৯), শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মো.

আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাবলু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো. গিয়াস উদ্দিন খোকন (৭০), মিরপুর মডেল থানা আওয়ামী লীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান ভূঁইয়া, ভাষানটেক থানা যুবলীগের সদস্য মো. সিরাজুল ইসলাম ওরফে আহমদ আলী (৪০), মোহাম্মদপুর থানার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মো. জসীম ওরফে বিল্লাল, ঢাকা মহানগর গেণ্ডারিয়া থানা মৎস্যজীবী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাহবুব রহমান (৫৫), শ্যামপুর থানার ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪০), কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম (৪০), আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শাহজালাল (৩৮), ঢাকা রায়েরবাগ ইউনিট যুবলীগের সেক্রেটারি মো. দেলোয়ার হোসেন ওরফে পলাশ, শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানা ডিংগামানিক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউনুস সরদার (৪৫), ঢাকা মহানগর পল্টন থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আকবর হোসেন (৫২), পল্টন থানা যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো. আবু সাঈদ (৫৬), নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. সামছুদ্দিন আহমেদ সেলিম (৬২), হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন রেহান (৫১), আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক উপকমিটির সহ-সম্পাদক মো. মেজবাহ উদ্দিন প্রিন্স (৪৩), সিলেট মহানগর যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক মরিয়ম পারভীন, ঢাকা মহানগর উত্তর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির সরকার ওরফে গলাকাটা নাছির (৫৪), নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা শ্রমিক লীগের সদস্য আলী হোসেন (৩১), কুমিল্লা জেলার ৬ নম্বর নিকলি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মানিক খন্দকার (৫২) ও বরগুনা জেলার তালতলী থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. হাবিবুর রহমান কামাল (৪২)।

পুলিশ জানায়, ডিবির প্রত্যেক বিভাগের পৃথক টিম রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার কেরে। কেরানীগঞ্জ, শাহজাহানপুর, আগারগাঁও, ডেমরা, সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, পল্টন, চকবাজার, হাতিরঝিল ও তুরাগসহ অন্তত ১৫টি এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় কম্পিউটার, প্রিন্ট করা পোস্টার, বেলুনের গ্যাস সিলিন্ডার ও ব্যানারসহ প্রচার সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মো. শরিফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, “রাজধানীতে কোনো নিষিদ্ধ রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রম বা প্রতীকী প্রতিবাদ সহ্য করা হবে না। নাশকতা প্রতিরোধে ডিবির বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য বল গ র স র সদস য র জন ত কম ট র আওয় ম রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

পুরোনো ব্যর্থতা শুধরে নিতে শুরু হচ্ছে জলবায়ু সম্মেলন

জাতিসংঘের জলবায়ু–সংক্রান্ত ৩০তম সম্মেলন বা কপ৩০ শুরু হচ্ছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের বেলেম শহরে। আগামীকাল সোমবার ১১ দিনব্যাপী এই সম্মেলনের যাত্রা শুরু হবে। এবারের সম্মেলনে পুরোনো প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আয়োজক দেশ ব্রাজিল। একই সঙ্গে পুরোনো ব্যর্থতা শুধরে নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।

কপের পূর্ণ রূপ হলো কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস। এর সদস্যদেশগুলো ১৯৯২ সালে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে সই করেছিল। চুক্তিটি হলো দ্য ইউনাইডেট নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি)। বিশ্ব জলবায়ুব্যবস্থাকে মানুষের বিপজ্জনক তৎপরতা থেকে রক্ষা করাই এর লক্ষ্য। কপের প্রথম সম্মেলন হয় জার্মানির বার্লিনে, ১৯৯৫ সালে।

এবারের ৩০তম কপ চলছে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করা দেশ হিসেবে ব্রাজিলেরও আলাদা একটি গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, এখন থেকে ঠিক ৩৩ বছর আগে দেশটির রিও ডি জেনিরো শহরে একটি সম্মেলে ইউএনএফসিসিসি চুক্তি সই হয়েছিল। স্বাক্ষরকারী দেশগুলো যে অভিন্ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করে, সে জন্য সম্মেলনে কিছু বিষয়সূচিও নির্ধারণ করেছে ব্রাজিল।

এর আগে কপ২৮–এ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চুক্তিতে সই করা দেশগুলো। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ওপর এবার জোর দিচ্ছে ব্রাজিল। এ ছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণতা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না বৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টি এবারের প্রথমবারের মতো স্বীকার করা হবে এবং সমাধানে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

ব্রাজিলের বেলেম শহরে আমাজন জঙ্গলের অংশ রয়েছে। এবারের সম্মেলনের জন্য এই শহর বেছে নেওয়ার পেছনেও কারণ রয়েছে। তা হলো বিশ্বে বনভূমির গুরুত্ব তুলে ধরা। নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও বিশ্বজুড়ে এখনো বনভূমি উজাড় হচ্ছে। একই সঙ্গে খনিজ সম্পদ উত্তোলন, কৃষিকাজ ও জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলনের মতো শিল্পায়ন–সংক্রান্ত বিভিন্ন খাতের হুমকির মুখে পড়ছে বনাঞ্চল।

কপ৩০ সম্মেলনের প্রথম সপ্তাহে ইউএনএফসিসিসি চুক্তিতে সই করা দেশগুলো তাদের অগ্রাধিকার তুলে ধরবে এবং অন্যদের অবস্থান খতিয়ে দেখবে। দ্বিতীয় সপ্তাহে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দেবেন। সম্মেলনে চূড়ান্তি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিভিন্ন বিষয়ে দর–কষাকষি করবেন তাঁরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ