আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীকে পরিবর্তনের দাবিতে মশালমিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর অনুসারীরা।

আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে টেকনাফ পৌর এলাকার জিরো পয়েন্টের শাপলা চত্বর থেকে মশালমিছিল শুরু হয়, রাত আটটার দিকে শেষ হয় পৌরসভার বাসস্টেশনের ঝরনা চত্বর সড়কে। কর্মসূচি চলার সময় আধা ঘণ্টার মতো টেকনাফের প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।

শাহজাহান চৌধুরী কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও এই আসনের চারবারের সংসদ সদস্য। ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ। অন্যদিকে মনোনয়নবঞ্চিত মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক। ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে শাহজাহান চৌধুরী বিএনপির প্রার্থী মনোনীত হন।

বিক্ষোভকারীরা দলের ঘোষিত প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীর মনোনয়ন পরিবর্তনের আহ্বান জানান। মিছিলে মশাল হাতে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর পক্ষে স্লোগান দেন তাঁর অনুসারীরা।

গত অক্টোবর মাসে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ টেকনাফ ও উখিয়াতে বেশ কয়েকটি বড় সমাবেশ করেন। সম্প্রতি এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীকে দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিলে ‘বেঁকে’ বসেন আব্দুল্লাহর সমর্থকেরা। গত দুই দিন আব্দুল্লাহর সমর্থকেরা টেকনাফের সড়কে কলাগাছ রোপণ করে দলের প্রার্থী বদলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। আজ রাতে মশালমিছিল করে সড়ক অবরোধ করলেন।

আব্দুল্লাহর অনুসারী উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো.

সেলিম বলেন,  তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে শাহাজাহান চৌধুরীকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে হলে আবদুল্লাহকে মনোনয়ন দিতে হবে।

রাতের মশালমিছিল প্রসঙ্গে জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করে বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন ধরেননি।

জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বড় দল হিসেবে যে কেউ মনোনয়ন চাইতে পারেন। কিন্তু জনপ্রিয়তা, অভিজ্ঞতা এবং গ্রহণযোগ্যতা যাছাই করে একজনকেই প্রার্থী ঘোষণা করতে হয়। সে বিবেচনায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁকে এবারও দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। সবার উচিত ধানের শীষের পক্ষে কাজ করা। কিন্তু রাতের বেলায় মশালমিছিল নিয়ে সড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ বাড়ানো শুভ লক্ষণ নয়।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর প্রথম আলোকে বলেন, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর সমর্থকদের করা রাতের মশালমিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। কোথাও ভাঙচুর কিংবা হামলার ঘটনা নেই।

আরও পড়ুনকোন আসনে বিএনপির প্রার্থী কে, দেখে নিন০৩ নভেম্বর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ হজ হ ন চ ধ র সড়ক অবর ধ ব এনপ র র মন ন

এছাড়াও পড়ুন:

মামদানিকে ঠেকাতে নাগরিকত্ব বাতিলের কথা বলছেন রিপাবলিকানরা, তা কি সম্ভব

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের প্রথম মুসলিম মেয়রের পদে বসছেন জোহরান মামদানি। শহরটিতে দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত প্রথম মেয়রও হচ্ছেন তিনি। এটি মোটেও মেনে নিতে পারছেন না মামদানির রিপাবলিকান নিন্দুকেরা। যেকোনো মূল্যে তাঁর মেয়র পদে বসা ঠেকাতে চাচ্ছেন তাঁরা। তাই এবার মামদানির নাগরিকত্ব বাতিলের কথা বলছেন।

নির্বাচনের আগে থেকে মামদানিকে নিয়ে নানা কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। উগান্ডায় জন্ম নেওয়া ৩৪ বছর বয়সী এই মুসলিমকে ‘কমিউনিস্ট’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি। তাঁর মার্কিন নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। এমনকি হুমকি দিয়ে এ–ও বলেছেন, মামদানি মেয়র হলে নিউইয়র্কে কেন্দ্রীয় তহবিল বন্ধ করে দেবেন।

ট্রাম্পের সুরে সুর মিলিয়ে রিপাবলিকান কয়েকজন আইনপ্রণেতা মামদানির নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রক্রিয়া তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। কয়েকজন আবার তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করার কথা বলেছেন। এই আইনপ্রণেতাদের অভিযোগ মামদানি কমিউনিস্ট এবং ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। যদিও কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি তাঁরা।

মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে মামদানির নাগরিকত্বের বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলেছিলেন প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্য অ্যান্ডি ওগলেস। পরে গত ২৯ অক্টোবর তিনি বলেন, ‘মামদানি যদি নাগরিকত্ব–সংক্রান্ত নথিপত্রে মিথ্যা বলে থাকেন, তাহলে তিনি নাগরিক থাকতে পারবেন না। আর অবশ্যই নিউইয়র্ক শহরের মেয়র নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’

জোহরান মামদানির জন্ম উগান্ডায়। ১৯৯৮ সালে মাত্র সাত বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। ২০১৮ সালে দেশটির নাগরিকত্ব পান।

মামদানিকে কমিউনিস্ট ও সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে ওগলেস আরও বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়ায় সমাজতন্ত্র বা সন্ত্রাসবাদে যুক্ত থাকার কথা উল্লেখ করতে হয়। আমার সন্দেহ আছে তিনি (মামদানি) এগুলো প্রকাশ করেছিলেন কি না। আমার এই অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহলে উগান্ডায় যাওয়া প্রথম ফ্লাইটেই তাঁকে ফেরত পাঠান।’

মামদানির নাগরিকত্ব নিয়ে একই ধরনের মন্তব্য করেছেন প্রতিনিধি পরিষদে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সদস্য রেন্ডি ফাইন। ফাইন ও ওগলেস—দুজনের কাছেই তাঁদের বক্তব্যের বিষয়ে মন্তব্য চেয়েছিল মার্কিন ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইট পলিটিফ্যাক্ট। তবে কোনো জবাব দেননি তাঁরা। আর মামদানি তাঁর নাগরিকত্বের আবেদনে মিথ্যা বলেছিলেন—এমন কোনো তথ্যও পায়নি ওয়েবসাইটটি।

জোহরান মামদানির জন্ম উগান্ডায়। ১৯৯৮ সালের মাত্র সাত বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। ২০১৮ সালে দেশটির নাগরিকত্ব পান। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, দেশটির নাগরিকত্ব পেতে একজন বিদেশি প্রাপ্তবয়স্ককে অবশ্যই আইন মেনে টানা পাঁচ বছর বসবাস করতে হবে। আর মার্কিন নাগরিককে বিয়ে করলে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য দেশটিতে অন্তত তিন বছর টানা বসবাস করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিল শুধু দেশটির আদালত করতে পারেন। মামদানির নাগরিকত্বের আবেদন দিয়ে ওগলেস ও ফাইন যে অভিযোগ এনেছেন, তার পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখছেন না অভিবাসী আইনবিশেষজ্ঞরা। অভিবাসনবিষয়ক আইনজীবী জেরেমি ম্যাককিনলে বলেন, ‘মামদানি নাগরিক হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় অযোগ্য ছিলেন বা নথিতে কোনো কিছু লুকিয়েছেন—এমন বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আমার চোখে পড়েনি।’

মামদানি একজন গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী। তিনি ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট অব আমেরিকা নামের একটি সংগঠনের সদস্যও।রিপাবলিকানদের অভিযোগ পুরোনো

গত গ্রীষ্মে মামদানি যখন ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে নিউইয়র্কের মেয়র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন, তখন থেকে তাঁর নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করেন রিপাবলিকানরা। গত জুনে পাম বন্ডিকে লেখা একটি চিঠিতে মামদানির নাগরিকত্ব বাতিলের জন্য বিচার বিভাগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন ওগলেস। তিনি বলেছিলেন, মামদানি হয়তো ‘নাগরিকত্ব গ্রহণের সময় ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য বিকৃত করেছিলেন বা সন্ত্রাসবাদে সমর্থনের কথা গোপন করেছিলেন।’

‘হোলি ল্যান্ড ফাইভের’ প্রতি সমর্থন জানিয়ে মামদানির লেখা একটি র‍্যাপ সংগীতের কথা চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন ওগলেস। হোলি ল্যান্ড ফাইভের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে মুসলিম দাতব্য সংস্থা ‘হোলি ল্যান্ড ফাউন্ডেশনের’ পাঁচ ব্যক্তিকে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রতি সমর্থনের জন্য ২০০৮ সালে তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। যদিও ওই মামলায় উপস্থাপন করা প্রমাণ ও গুজবের ব্যবহার নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন কয়েকজন আইনজীবী।

নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে বিরল হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে তা প্রায়ই ঘটছে বলে উল্লেখ করেছেন নিউইয়র্কের হফস্ট্রা ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক ইরিনা মান্ত্রা।মা, বাবা ও স্ত্রীর সঙ্গে জোহরান মামদানি

সম্পর্কিত নিবন্ধ