যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ও মেয়র নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি হেরে গেছে। এতে ডেমোক্র্যাটরা, এমনকি বিশ্বের অনেক মানুষই খুশি। কিন্তু এখন তাদের সতর্ক হতে হবে, কারণ ট্রাম্প হার মানতে জানেন না। তিনি আর যেন না হারেন, সেই চেষ্টা তিনি করবেন। তার জন্য ন্যায্য বা অন্যায্য, যে কোনো পথে হাঁটতে তিনি কুণ্ঠাবোধ করবেন না। 

এখন পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটরা পরস্পর গ্লাস ঠুকে জয় উদ্‌যাপন করছেন। কারণ, এই জয় এসেছে এমন সময়ে, যার ঠিক এক বছর আগে তাঁরা হোয়াইট হাউস, সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ—সবকিছু ট্রাম্পের কাছে হারিয়েছিলেন। সবচেয়ে নাটকীয় জয়টি এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর নিউইয়র্কে। সেখানে জোহরান মামদানি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। 

আমেরিকার অন্য প্রান্তেও ডেমোক্র্যাটরা সাফল্য পেয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার ভোটাররা আসন সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে ভোট দিয়েছেন, যা কিনা ভবিষ্যতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। এর মাঝেই নিউজার্সি ও ভার্জিনিয়ায় ডেমোক্র্যাটরা গভর্নর নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছেন। 

এই সাফল্যগুলো ট্রাম্পকে ক্ষুব্ধ করেছে। বিশেষ করে তাঁর নিজের শহর নিউইয়র্কে মামদানির জয়ে তিনি খুব বিরক্ত হয়েছেন। ট্রাম্প মামদানিকে ‘এক কমিউনিস্ট পাগল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর এই কথার পরই মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন (মাগা) শিবির সক্রিয় হয়ে মামদানির বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করেছে। 

নিউইয়র্ক পোস্ট প্রথম পাতায় মামদানির ব্যঙ্গ ছবি ছেপেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, তাঁর হাতে হাতুড়ি ও কাস্তে। ওপরে লেখা ‘দ্য রেড অ্যাপল’। সেখানে ‘আর’ অক্ষরটি উল্টো করে দেওয়া হয়েছে, যাতে সেটিকে সোভিয়েত প্রতীকের মতো লাগে। ফক্স বিজনেস চ্যানেলও ‘বলশেভিক’ ধাঁচের গ্রাফিকস ব্যবহার করে সমাজতন্ত্রের ‘বৈশ্বিক হুমকি’ নিয়ে অনুষ্ঠান করেছে। 

এখানেই শেষ নয়। ট্রাম্প নর্থ ক্যারোলাইনা, ওহাইও, মিসৌরি ও ইন্ডিয়ানার রিপাবলিকানদেরও একইভাবে এলাকা পুনর্গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। ভোটাররা রিপাবলিকানদের ছেড়ে গেলেও যাতে হাউস রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে থাকে, সে জন্য অতিরিক্ত আসন তারা সৃষ্টি করতে চায়। 

রিপাবলিকানদের লক্ষ্য হলো, আগামী বছরের মধ্যবর্তী জাতীয় নির্বাচনগুলোতে ডেমোক্র্যাটদের ‘মামদানি মার্ক্সবাদী দল’ হিসেবে তুলে ধরা। তবে ডেমোক্র্যাটরা আত্মবিশ্বাসী। তারা মনে করে, জীবনযাত্রার ব্যয়ের চাপ কমানো ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ থাকলে এই আক্রমণ সামলানো সম্ভব। তারা রাজ্যভেদে ভিন্নভাবে কথা বললেও মূল বার্তা এক—মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করা। ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সির প্রার্থীরাও মামদানির মতো এই ইস্যুই তুলেছেন; তবে আরও মধ্যপন্থী ও শান্ত ভাষায়। 

এই কৌশল ২০২৬ সালের প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫টি আসনে কাজ করতে পারে। কিন্তু ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে (যেখানে একটি জাতীয় বার্তা ও একটি একক প্রার্থী নিয়ে শহর ও উপশহর উভয় শ্রেণির ভোটারকে একত্র করতে হবে) সেটি অনেক কঠিন কাজ হবে। 

এই ধরনের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা রাজনীতিবিদদের গতানুগতিক কাজ হলেও এখন সামনে আছে আরও ভয়ানক হুমকি। ট্রাম্প ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিচ্ছেন, তিনি নিউইয়র্কে ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দিতে পারেন। মনে করিয়ে দেওয়া দরকার, তিনি এর আগেও নজির ভেঙে ওয়াশিংটন ডিসি ও লস অ্যাঞ্জেলেসে সেনা পাঠিয়েছেন এবং শিকাগো ও পোর্টল্যান্ডে পাঠানোর চেষ্টা করেছেন।

এটি আসলে ট্রাম্পের আরও অনেক পদক্ষেপের মধ্যকার একটি। তিনি এখন থেকেই চেষ্টা করছেন যেন ২০২৬ সালের নভেম্বরের নির্বাচনগুলো এই সপ্তাহের নির্বাচনগুলোর মতো না হয়, অর্থাৎ ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে না যায়। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে দেখা যায়, মধ্যবর্তী নির্বাচনে মানুষ ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষে ভোট দেয়। তাই অনেকের ধারণা, আগামী বছরে ডেমোক্র্যাটরা প্রতিনিধি পরিষদ আবার নিজেদের দখলে নিতে পারে। যদি তা হয়, তাহলে প্রেসিডেন্টের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ট্রাম্প ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের জবাবদিহির আওতায় আনা সম্ভব হবে। 

কিন্তু ট্রাম্প এমনটি হতে দিতে চান না। এ জন্যই তিনি টেক্সাসের রিপাবলিকানদের ওপর চাপ দিয়ে কংগ্রেসীয় সীমানা এমনভাবে পুনর্নির্ধারণ করিয়েছেন, যাতে পাঁচটি নতুন ‘নিরাপদ রিপাবলিকান আসন’ তৈরি হয়। তার জবাব হিসেবেই ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাটরা নিজেরাও পুনর্বিন্যাস করে আরও পাঁচটি আসন বাড়াতে এবার ভোটারদের অনুমতি চেয়েছেন। ভোটাররা তাতে সম্মতি দিয়েছেন। 

এখানেই শেষ নয়। ট্রাম্প নর্থ ক্যারোলাইনা, ওহাইও, মিসৌরি ও ইন্ডিয়ানার রিপাবলিকানদেরও একইভাবে এলাকা পুনর্গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। ভোটাররা রিপাবলিকানদের ছেড়ে গেলেও যাতে হাউস রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে থাকে, সে জন্য অতিরিক্ত আসন তারা সৃষ্টি করতে চায়। 

তবে এই সপ্তাহের ফল বলছে, যদি নির্বাচন অবাধ হয়, তাহলে ডেমোক্র্যাটরা জিততে পারে এবং তারা ট্রাম্পের স্বৈরাচারী পথে বাধা দিতে পারে। কিন্তু নির্বাচন আদৌ অবাধ হবে কি না, সেটি বড় প্রশ্ন। 

জনাথন ফ্রিডল্যান্ড গার্ডিয়ান পত্রিকার কলাম লেখক


দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র র প বল ক ন ন উইয়র ক ম মদ ন র

এছাড়াও পড়ুন:

‘সালাম বম্বে!’, থেকে ‘মুনসুন ওয়েডিং’, মামদানির মাকে কতটা চেনেন

নিউইয়র্ক শহরের নবনির্বাচিত মেয়র হয়েছেন জোহরান মামদানি। তাঁর মেয়র হওয়ার পেছনে বাঙালি ভোটারদের যে অবদান ছিল, সেটা মামদানির জেতার খবরের বিজয় মিছিলেই দেখা গেছে। ‘আমার মেয়র-তোমার মেয়র, মামদানি-মামদানি’, ‘নিউইয়র্কের মেয়র, মামদানি-মামদানি’, ‘শ্রমিক শ্রেণির মেয়র, মামদানি-মামদানি’—এসব স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছিল কুইন্সের জ্যামাইকা শহর। তবে বাঙালি ভোটারদের মন জেতার পেছনের তাঁর একটা বাংলা প্রচারণার ভিডিও-ও ভূমিকা রেখেছে বলা যায়। লিটল বাংলাদেশ কেনসিংটনের বাঙালি কাউন্সিল মেম্বার শাহানা আরিফের সঙ্গে তাঁর বাংলায় কথোপকথন নজর কেড়েছে অনেকেরই। তাঁর সাবলীল কথা বলার ভঙ্গিতেই বোঝা যাচ্ছিল বাংলার ওপরও তাঁর দখল আছে বেশ। তবে মামদানির এই বাংলাপ্রীতি শুধু ভোট টানার জন্য ছিল না। এখানে রয়েছে তাঁর মায়ের অবদান। মামদানির মা ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিখ্যাত চিত্রপরিচালক মীরা নায়ার। সন্তান মেয়র হওয়ার পর নতুন করে আলোচনায় এই নির্মাতা।

শুরুর গল্প
১৯৫৭ সালের ১৫ অক্টোবর মীরা নায়ারের জন্ম ভারতের ওডিশায়। বেড়ে উঠেছেন ওডিশার রাজধানী ভুবনেশ্বরে। ভুবনেশ্বরের উত্তর-পূর্বে পশ্চিমবঙ্গ হওয়ায় সেখানের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ বাঙালি। মীরা নায়ারের বন্ধুবান্ধব যেমন বাঙালি ছিল, তেমনি তিনি ছোটবেলায় গানও শিখেছেন এক বাঙালি শিক্ষকের কাছে। তিনি ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য, থিয়েটার ও সমাজবিজ্ঞানে গভীর আগ্রহী ছিলেন।

মীরা নায়ার। রয়টার্স

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আমার সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মামদানি
  • নিউইয়র্কের মেয়রের নতুন ঠিকানা কি গ্রেসি ম্যানশন
  • এক কক্ষের বাড়ি থেকে ‘রাজপ্রাসাদে’
  • জোহরান মামদানি কেন নিজ এলাকা কুইন্সে কম ভোট পেলেন
  • কারো চোখে পানি, ফেলছেন স্বস্তির শ্বাস: মামদানির জয়ে কী বললেন গার্ডিয়ানের পাঠকেরা
  • যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের একচ্ছত্র ক্ষমতা ম্লান হলো মাত্র দুই দিনেই
  • মামদানি একই সঙ্গে ভারতের গর্ব, আবার মোদির মতো নেতাদের কঠোর সমালোচক
  • ‘মামদানি মডেল’ কি নিউইয়র্কের বাইরেও ছড়িয়ে পড়বে
  • ‘সালাম বম্বে!’, থেকে ‘মুনসুন ওয়েডিং’, মামদানির মাকে কতটা চেনেন